বাগাতিপাড়ার ৫ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য
টাকা ছাড়া কাজ হয় না, ক্ষুব্ধ ভূমি মালিকরা- বাগাতিপাড়া (নাটোর) সংবাদদাতা
- ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পাঁচটি ইউনিয়ন ভুমি অফিসে চিহ্নিহ্নত ১২ দালালের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ভূমি মালিকরা। দাগ নম্বর-খতিয়ান-জমির পরিমাণ দেখা, নোটিশ জারি করা, হোল্ডিং খোলা এবং প্রস্তাবিত খতিয়ান তৈরির মতো কাজগুলো বিনামূল্যে হওয়ার কথা থাকলেও টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না। এ ছাড়া জমির খাজনা বাবদ রসিদে টাকার যে পরিমাণ উল্লেখ করা হয় আদায় করা তার কয়েক গুণ বেশি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকা দিয়েও হয়রানির শিকার হতে হয়। আর এসব বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার মেলে না।
স্থানীয়রা জানায়, বাগাতিপাড়া পৌর ভূমি অফিসে- আকাশ আহম্মেদ, সেলিম রেজা, অনিমা খাতুন, পাকা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে উত্তম কুমার ও রিপন আলী, জামনগরে নাজমুল হোসেন, সানোয়ার আলী ও রাব্বি, দয়ারামপুরে জয়নাল আবেদিন ও আব্দুল মান্নান এবং ফাগুয়াড়দিয়াড়ে- ইমরান আলী ও অনিক আহম্মেদ নামের দালালরা সরকারি কর্মচারীদের মতোই নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই তারা অফিসের কেউ নন। তারা অফিসের কম্পিউটারসহ গোপন নথিপত্র হরহামেশাই নাড়াচাড়া করেন। তাদের সহায়তা ছাড়া কোনো কাজই হয় না। আবেদনের বিপরীতে কাগজপত্র সরবরাহের নির্ধারিত সময়ের উল্লেখ ও ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের মূল্য তালিকা সম্বলিত সাইনবোর্ড অফিসগুলোর বারান্দায় টানানো থাকলেও সেগুলো মূলত লোক দেখানো। দালাল চক্রের সহায়তা ছাড়া দীর্ঘদিন ঘুরেও কাজ হয়না। অথচ তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিলে দ্রুতই কাজ হয়। আবার জমি খারিজের বিষয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতায় না থাকলেও ওই দলালরা খারিজ করে দেয়ার কথা বলে গ্রামের সাধারণ মানুষের নিকট থেকে সরকারি মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি টাকা হাতিয়ে নেন। অনেকে টাকা দিয়েও হয়রানির শিকার হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত আনজুম অনন্যা বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ভূমি অফিসগুলো দালাল মুক্ত করেন। তবে ওই কর্মকর্তা বদলির পরপরই ভূমি অফিসগুলো পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নেয় দালাল চক্র।
মাধববাড়িয়া এলাকার আবু রায়হান বলেন, ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এমরান নামের একজন দালাল তাদের অনেক বছর আগে কিনা এবং খাজনা- খারিজ করা জমি অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে জালিয়াতি করে অন্য একজনের নামে খাজনার চেক দিয়ে গণ্ডগোল বাধিয়ে দিয়েছেন।
জামনগর এলাকার আনছার আলী বলেন, জামনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চাকরি না করেও সানোয়ার আলী অফিস স্টাফদের সাথেই গোপন নথিপত্রের কাজ করে থাকেন। আর সেই সুযোগে মানুষকে খাজনা-খারিজের জন্য অনেক টাকা নিয়ে দিনের পর দিন হয়রানি করে থাকেন। এই বিষয়ে তিনি উপজেলা ভূমি অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত জামনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কাজ করা সানোয়ার হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা। জনবল সঙ্কটের কারণে তিনি ওই অফিসে কাজ করেন। অফিস থেকে বেতন বা ভাতা বাবদ তাকে কোনো টাকা দেয়া হয় না। তবে কাজের বিনিময়ে অফিসে আসা সেবা প্রত্যাশীরা খুশি হয়ে যে অর্থ দেন তা-ই। অন্যায়ভাবে কোনো অর্থ নেন না।
অন্যরা অভিযুক্তদের দাবি, তারা লিখিত বা মৌখিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো স্টাফ নন। মূলত দফতরগুলোতে জনবল সঙ্কটের কারণে তারা সেখানে আগত ভূমি মালিকদের বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন। আর এই সেবার বিনিময়ে মানুষ যে অর্থ দেন তারা তাই নিয়ে থাকেন। কারোর নিকট থেকে জোরাজোরি করে কিছু নেয়া হয় না।
ফাগুয়াড়দিয়াড় ও দয়ারামপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দায়িত্বে থাকা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) মোশারফ হোসেন বলেন, তাদের দফতরে কাজের তুলনায় তীব্র জনবল সঙ্কট রয়েছে। সেজন্য তাদের দিয়ে অফিসের কাজ করে নেয়া হয়। সকল ইউনিয়ন ভূমি অফিসেই এরকম রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি ফাগুয়াড়দিয়াড় ও দয়ারামপুর দুই অফিসে দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় তাদের আর অফিসে ঢুকতে দেয়া হয় না।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুরাইয়া মমতাজের অফিসিয়াল মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তার অফিসে যেতে বলেন। বাইরে আছেন জানিয়ে পরে কথা বলতে বলেন। কয়েক ঘণ্টা পরে আবার একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুল বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা