০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, empty
`
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

জনবলসহ নানা সঙ্কটে মিলছে না কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা

লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : নয়া দিগন্ত -


নানা সঙ্কটে জর্জরিত ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল কমপ্লেক্সটি। বর্তমানে জনবলসহ নানা সঙ্কটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। এতে চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ উপজেলার বাসিন্দারা ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সঙ্কট থাকলেও দু’জনকে অ্যাটাচমেন্টে অন্যস্থানে দায়িত্ব দিয়ে রাখায় রোগীদের চিকিৎসসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া এক্সরে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাফির মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি থাকলেও এসব সেবাও বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে অপারেশন থিয়েটারটিও।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এখানে চিকিৎসকের সঙ্কট থাকলেও ইউএইচএফপিও দু’জনকে অ্যাটাচমেন্টে অন্য জায়গায় দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। এ জন্য যে ক’জন চিকিৎসক রয়েছেন তারা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাটাচমেন্টে থাকা ওই দুই চিকিৎসককে এখানে আনা হলে এক সাথে অনেক রোগীকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে।

লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, একটি হাসপাতালে এক্সরে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেবা খুবই প্রয়োজন। অথচ সবগুলো সেবাই বন্ধ। এসব সেবা বন্ধ থাকার কারণে রোগীরা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষা করাচ্ছেন। অপারেশন থিয়েটারটি চালু করলে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে রোগীদের সিজারসহ অন্যান্য অপারেশন করাতে হতো না। এতে রোগীদের ভোগান্তিও কমতো। তাই দরিদ্র রোগীদের কথা চিন্তা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত সময়ের মধ্যে এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন এবং অপারেশন থিয়েটারটি চালুর জোর দাবি জানান তারা।

এ দিকে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার (ইউএইচএফপিও) বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের অজুহাতে কর্মস্থলে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকছেন ইউএইচএফপিও ডা: তৈয়বুর রহমান। এমনকি যেদিন অফিসে আসেন, সেদিন আবার বেলা দেড়টার মধ্যেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন। অথচ তার থাকার কথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি বাসভবনে। তবে তিনি না থাকায় ওই বাসভবনে থাকছেন তার গাড়িচালক।
কয়েকজন কর্মচারীর দাবি, লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকাটি অনিরাপদ একটি স্থাপনা। এখানের বাউন্ডারি দেয়ালের অধিকাংশ স্থানই ভেঙে রয়েছে। রাতে দেয়ালের ভাঙা অংশ দিয়ে জুয়াড়ি ও মাদকসেবীরা ভেতরে প্রবেশ করে আড্ডা জমায়। এতে করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করা চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা।
এ ছাড়া বর্তমানে বেড়েছে ডেঙ্গু মশার উৎপাত। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন জমে থাকা পানিতে মশা জন্মায়। দীর্ঘ দিন ধরেই নোংরা, অপরিচ্ছন্ন এবং জলাবদ্ধতায় বেহাল অবস্থা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণের। ইউএইচএফপিরও এসব ব্যাপারে তেমন কোনো আগ্রহ নেই বলেও জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তৈয়বুর রহমান জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে বিভিন্ন স্থানে গর্তে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। শিগগিরই ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে এই সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ছাড়া দুই চিকিৎসককে অ্যাটাচমেন্টে দায়িত্ব দেয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় দেয়া হয়েছে। জনবল সঙ্কটের কারণেই এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং অপারেশন থিয়েটার সেবা বন্ধ রয়েছে। জনবল পদায়নের জন্য বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা এখানে জনবল পদায়ন করলেই যেসব সেবা আপাতত বন্ধ রয়েছে তা চালু করা সম্ভব হবে।
এ ছাড়া বাউন্ডারি সংস্কারের বিষয়ে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাউন্ডারিটি মেরামতের জন্য বাজেট পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
অপর দিকে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি ও নিজের সরকারি বাসভবনে গাড়িচালক থাকার ব্যাপারে এই কর্মকর্তা আরো জানান, ইউএইচএফপিওদের সরকারি বাসভবনে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। এ ছাড়া এখানে যে বাসভবনটি রয়েছে, তা বাসযোগ্যও নয়। তবে অনুপস্থিতি বা তড়িঘড়ি করে কর্মস্থল ত্যাগের যে বিষয়টি বলা হচ্ছে তা মোটেও ঠিক নয়। সরকারি কোনো প্রশিক্ষণ বা কাজ না থাকলে আমি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত অফিসেই থাকি।

 


আরো সংবাদ



premium cement