০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩০, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

চুয়াডাঙ্গায় খেজুর গাছ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত গাছিরা

রসের জন্য খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন গাছি : নয়া দিগন্ত -

প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। সকালে শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশা তারই জানান দিয়ে যাচ্ছে। শীতের এই আগমনী বার্তা পেয়ে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছকে প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চুয়াডাঙ্গার গাছিরাও। এ বছর এ জেলা থেকে ৩৫ কোটি টাকারও বেশি গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তারা খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুত নিচ্ছেন। সুস্বাদু এ গুড় নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ হয়ে থাকে।
ইতোমধ্যে গাছিরা কোমরে রশি বেঁধে ধারালো দা নিয়ে গাছ কাটতে ও নলি বসাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীতের দিন মানেই খেজুর রস ও নলেন গুড়ের মিষ্টি ঘ্রাণ। শীতের সকালে খেজুরের টাটকা রস যেন অমৃতের স্বাদ এনে দেয় মুখে। সেই সাথে খেজুর রসের পিঠা-পায়েসের স্বাদের তো তুলনাই নেই। এ কারণেই শীত মৌসুমটা গ্রামবাংলার রূপ-রস ও ঐতিহ্যের ধারক।
শীতের সকালে বাড়ির উঠানে রোদে বসে খেজুর রসের পায়েস খাওয়া যে কী আনন্দের, এর কোনো তুলনা হয় না। সেই সাথে সকারের রোদে বসে খেজুর রসের পাটালি গুড় ও মুড়ি খাওয়ার আনন্দ- এ যেন বাঙালি সংস্কৃতিরই এক অঙ্গ। নলেন গুড় ছাড়া আমাদের শীত যেন কল্পনাই করা যায় না। আর মাত্র কয়েকটা দিন। গাছিদের খেজুর রস নামানোর ধুম পড়ে যাবে।

গাছি লিয়াকত হোসেন জানান, শীতের সাথে জড়িয়ে আছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস। আর সপ্তাহ দুইয়েক পর গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব শুরু হবে। তার নিজের রয়েছে ৪০টি গাছ। আরো ৪০টি গাছ তিনি বর্গা নিয়েছেন। যাদবপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার খেজুর গাছের রস হতে উৎপাদিত গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। গ্রাম থেকে ভ্যানগাড়ি অথবা ট্রাকে ভরে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় খেজুর গুড়।
স্থানীয়রা বলছেন, আর মাত্র কয়েক দিন পরই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হবে। রস থেকে গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। হেমন্তের প্রথমে বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করবে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি গুড়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার জানান, এ বছর চুয়াডাঙ্গায় রস সংগ্রহের জন্য দুই লাখ ৭২ হাজার খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। শীত মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসেবে এবার গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই হাজার সাত শ’ মেট্রিক টন। মৌসুমি এ পেশায় জেলার প্রায় ৩০ হাজার গাছি সম্পৃক্ত রয়েছেন। আশা করি এবারো নিজ জেলায় গুড়ের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় গুড় সরবরাহ করা যাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement