০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১,
`

ইটনায় খেলার মাঠ রক্ষা নিয়ে শঙ্কা

ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নে দুইশ’ বছরের পুরনো একটি খেলার মাঠ : নয়া দিগন্ত -

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নে দুইশ’ বছরের পুরনো একটি খেলার মাঠ ও গোচারণভূমি রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। ইউনিয়নের মৃগা গ্রামের সামনে ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত ৬৮.৫০ একর জায়গায় ওই খেলার মাঠ ও গোচারণভূমি অবস্থিত।
ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৃগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দারুল ইসলাম বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শতাধিক লোকের কাছে এ মাঠ ও ভূমি প্লট আকারে বিক্রি করে দেন। এখন ওই মাঠ কিনে নেয়া লোকজনকে তিনি ঘরবাড়ি করে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন।
এ পরিস্থিতিতে গ্রামবাসী সরকারি মাঠ এবং গোচারণভূমি রক্ষার আন্দোলনে নেমেছে। তারা মাঠে পালা করে পাহারা দিচ্ছে, যাতে করে চেয়ারম্যান দারুল ইসলামের লোকজন মাঠে আসতে না পারে। গ্রামবাসীর এ প্রতিরোধের ঘটনায় দুই দফায় হামলা করেন ওই চেয়ারম্যানের লোকজন। সেই সাথে তাদের নামে সংখ্যালঘুদের হয়রানির অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

গত বুধবার ইটনা থানার ওসি এ মামলাটি এফআইআর হিসেবে নেন। মামলায় মাঠ দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি দেয়া হয়েছে আরো ৮-১০ জনকে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, মৃগা গ্রামের সামনের নামা শ্রেণীর খাস খতিয়ানভুক্ত বিস্তীর্ণ সরকারি ভূমিটি এলাকার সাধারণ মানুষ কয়েক শ’ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে। সারা বছরই মাঠটি গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মৃগা গ্রামসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের কৃষকরা এখানে বৈশাখ মাসে ধান মাড়াই, ঝাড়াই করে এবং রোদে দিয়ে খড় শুকায়। এ ছাড়া এলাকার শিশু-কিশোর ও তরুণরা এখানে খেলাধুলা করে। এই মাঠটি মৃগা ইউনিয়নের দুইশ’ বছরের ঐতিহ্য। ইউপি চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে সরকারি এই ভূমি কাগজপত্র ছাড়াই প্লট আকারে বিক্রি করেন কিছু মানুষের কাছে। ওই সময় তিনি প্লট ক্রয়কারীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নেন। এখন এসব টাকার অংশ প্রশাসনকে দিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করছেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, গোচারণ ও খেলাধুলার জন্য মাঠটি এতদিন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও দুই বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দারুল ইসলাম মাঠটি দখলের অপচেষ্টা চালায়। ২০২২ সালে তিনি এখানে বালু ভরাট করেন। পরে বাঁশের বেড়া দেন। তখন থেকেই মাঠ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন এলাকাবাসী। তৎকালীন ইউএনও নাফিসা আক্তারের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেন গ্রামবাসী। ইউএনও এটিকে গ্রামবাসীর জন্য মাঠ হিসেবে রক্ষার স্বীকৃতি দেন। তবুও চেয়ারম্যান মাঠ দখল থেকে পিছু হটেননি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মৃগা গ্রামের মানুষ মাঠে এসে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। পরে সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকজন আসে। স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন (৩২) বলেন, ‘এটা সরকারি জায়গা। গ্রামবাসী শত বছর ধরে এই জায়গা ব্যবহার করে আসছে। কোনো চেয়ারম্যান বা প্রভাবশালী এই জায়গা বিক্রি করতে পারে না। এটা আমাদের ঐতিহ্যের মাঠ।’

অভিযোগের বিষয়ে মৃগা ইউপি চেয়ারম্যান দারুল ইসলাম বলেন, গ্রামের সামনে ৬৮ একরেরও বেশি খাস জমি পতিত পড়ে আছে। এখানে যারা বাড়িঘর বানাতে চাইছে তারা সবাই গরিব এবং ভূমিহীন। তৎকালীন ইউএনও মৌখিকভাবে বলেছিলেন এই জায়গায় কিছু ভূমিহীন হিন্দু লোকজনকে যেন পুনর্বাসন করা হয়। এরপর ওরাই নিজ নিজ উদ্যোগে বালু ভরাট করেছে। খাস জমি বিক্রির বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা ডাহা মিথ্যা।
ইটনা থানার ওসি মনোয়ার হোসেন বলেন, জমিটি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। খাস খতিয়ানের জমি দখল করে ঘরবাড়ি বানানোর নিয়ম নেই। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলে মৃগা ইউনিয়নে একটি ফৌজদারি অপরাধের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, বিষয়টি আমি আগে জানতাম না। আমি এখানে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। আমি বিষয়টি দেখছি।
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেবো।


আরো সংবাদ



premium cement