০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১,
`
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত

ডান হাত হারিয়ে বাম হাত নিয়েও শঙ্কায় রানা

ডান হাত হারিয়ে বাম হাত নিয়েও শঙ্কায় রানা -

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে এক হাত হারানো নীলফামারীর রানার অর্থাভাবে সুচিকিৎসা হচ্ছে না। চিকিৎসার অভাবে তার অপর হাতটিও ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। নীলফামারী সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের তিলবাড়ী ময়দান পাড়া এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমানের ছেলে রানা ইসলাম (২০)। দরিদ্রতার কারণে লেখাপড়া করতে পারেনি। ছয় সদস্যের সংসার দরিদ্র বাবার একার পক্ষে সংসার চালানো কষ্ট সাধ্য হওয়ায় সে ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করত।
গত ২৫ জুলাই ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে রানাও অংশ নেয়। এ সময় পুলিশ মিছিলে ব্যাপক টিয়ার সেল ও গুলি বর্ষন করলে রানা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। রানার ডান হাতটি গুরুতর জখম হওয়ায় সে হাতটি কুনই পর্যন্ত কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা। এছাড়া রানার বাম হাত, পেট ও পা আগুনে পুড়ে যাওয়াসহ গুরুতর জখম হয়। ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এতোদিন চিকিৎসাধীন ছিল। বর্তমানে সেখানে থাকা-খাওয়া, ওষুধ ও অন্যান্য খরচের টাকার অভাবে গত ১৮ অক্টোবর রানাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
রানা বলেন, গত ২৫ জুলাই অন্যান্যের সাথে আমিও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ববরণ করেছি। আমার চিকিৎসার পেছনে বাবার যতটুকু সঞ্চয় ছিল সব কিছু ব্যয় করেও আমি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারিনি। এখনো ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। চিকিৎসার অভাবে বাম হাতও অচল হয়ে যাচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানের ক্ষতের ব্যথায় এখনো রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। অন্যের সাহায্যে খাওয়া-দাওয়াসহ অন্যান্য কাজ করতে হয় ।

রানার বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ছেলেকে সুস্থ করতে বাড়ির গরু-ছাগল বিক্রি করে এবং অন্যের কাছ থেকে ধারদেনা করে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করি। কিন্তু তারপরও সে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ডাক্তার রানাকে ১৫ দিন পর ঢাকায় নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করাতে বলেছে। এছাড়া রানার অপর হাতটিও চিকিৎসার অভাবে দিন দিন অচল হয়ে যাচ্ছে। ছেলের সুচিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
রানার মা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ছেলের চিকিৎসায় যা কিছু ছিল সব শেষ হয়েছে। এখন আমরা কিভাবে চলব আর কিভাবে ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে যাব তার কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন ‘আমার সন্তান আন্দোলনে একটি হাত হারালেও সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।
বিএনপির নীলফামারী গোড়গ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান জানান, এই মুহূর্তে রানার চিকিৎসা করাতে না পারলে তার বাম হাতটি চিরদিনের জন্য অচল হয়ে যাবে। রানার চিকিৎসার জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল হক বলেন, ‘আমি যতদূর জানি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। সেখানে যোগাযোগ করা হলে রানার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement