জনবল সঙ্কটে স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত
কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স- মিজানুর রহমান মানিক কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
- ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অবকাঠামোগত সুবিধাদি থাকলেও ডাক্তার ও নার্সসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের জনবল সঙ্কটে বিঘ্নিত হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্গম এলাকা থেকে আসা রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালটির ভৌত-অবকাঠামোগত উন্নতি দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে রোগী ও সংশ্লিষ্টদের। এতে একদিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের যাতায়াতে ভোগান্তি, অন্য দিকে জেলা শহরসহ প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক বিড়ম্বনা। দ্রুত জনবল সঙ্কট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এলাকাবাসী।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটি ২০১৭ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বিধিমতে ৫০ শয্যার হাসপাতালে মোট জনবল কাঠামোয় থাকার কথা ১৩১ জন, আছেন মাত্র ৬৭ জন। এতে ২০ জন ডাক্তারের স্থলে পোস্টিং আছে মাত্র ১১ জন। তাও অতিগুরুত্বপূর্ণ গাইনি (অবস) পদের ডাক্তার দীর্ঘ ৮ বছর নিজ কর্মস্থলে না থেকে সংযুক্তি নিয়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতালে নিয়োজিত আছেন। একইভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া। এতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মূলত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন মাত্র আটজন ডাক্তার।
নার্স ২৫ জনের স্থলে আছেন ১১ জন, ওয়ার্ড বয় ৮ জনের স্থলে একজন এবং মিডওয়াইফারির (যিনি প্রসবকালীন সময়ে মা ও শিশুর য্ত্ন নেন) ৪টি পদই শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া ফিল্ড স্টাফ ২২ জন, ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট, সুইপার, দারোয়ান ও আয়াসহ আরো ১৮টি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বাধীনতা-উত্তর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রেডিওলজিস্ট ও ইমেজিং (এক্স-রে) গুরুত্বপূর্ণ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের পদটিও শূন্য রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আরো জানায়, প্রতিদিন এখানের বহির্বিভাগে চারশ’রও অধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এবং আন্তঃবিভাগে চিকিৎসাধীন থাকেন কমপক্ষে সত্তর থেকে আশিজন রোগী। রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কর্মরত জনবলের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের মনির হোসেনের স্ত্রী বিবি ফাতেমা বলেন, ‘আমি সন্তানসম্ভবা, পরামর্শের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক দিন গিয়েছি। গাইনি ডাক্তার না পেয়ে নিরুপায় হয়ে পরামর্শ নিয়েছি অন্য বিষয়ের ডাক্তার থেকে। গত কয়েক দিন আগে বেশি অসুবিধা দেখা দিলে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষার পর দেখা গেল গর্ভের শিশু নষ্ট হয়ে গেছে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে এবরশন করিয়েছি।
নার্স সুপারভাইজার সেলিনা আক্তার বলেন, ৭০ জন রোগীর বিপরীতে গড়ে মাত্র একজন নার্স আছেন। ফলে সঠিক সময়ে রোগীকে মেডিসিন প্রয়োগ করতে আমাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা: আহমেদ কবীর বলেন, গাইনি (অবস) কনসালটেন্ট ডা: শামছুন্নাহার আট বছর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের মাধ্যমে সংযুক্তি নেন। বহু দেন-দরবার ও লেখালেখি করেও তাকে কর্মস্থলে ফিরানো সম্ভব হয়নি। জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া ডা: নাজনিন আক্তার অননুমোদিত ছুটি নিয়ে চট্টগ্রামে রয়েছেন। ডা: নাজনিনের বক্তব্য, তিনি সপ্তাহে একদিন কর্মস্থলে আসবেন। এই সুবিধা না পাওয়ায় তিনি কর্মস্থলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন এবং তিনি ইস্তফাও দেননি। তবে তার বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে ফাইল পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জনবল সঙ্কটের বিষয়টিও অধিদফতরকে অবহিত করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা