৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সিজার সিন্ডিকেটসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ

কেরানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
-


রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগে অর্থের বিনিময়ে সিজার করা, বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী পাঠানো, চাকরিতে অনিয়মিত, বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয়, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য, সিট পেতে ঘুষ-বাণিজ্য, রোগীদের নি¤œমানের খাবার পরিবেশনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে ভুগতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি শাখায় গর্ভবতী মায়েদের সিজার করা নিয়ে অনিয়ম হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। টাকা নিয়ে সিজার করানো হয় এখানে। এ জন্য একটি সিন্ডিকেট রয়েছে যার সদস্যরা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের দালাল। তারা হাসপাতালে আসা রোগীদের নানা কূটকৌশলে ভাগিয়ে নিয়ে তাদের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার করতে আসা গর্ভবতী মা ও তার স্বজনদের নানা অসুবিধার কথা বলে কেরানীগঞ্জের আটিবাজ, খোলামোড়া, রোহিতপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এতে করে তারা সেসব ক্লিনিক থেকে কমিশন পায়।

উপজেলার রাজাবাড়ি এলাকার গর্ভবতী স্মৃতি আক্তার জানান, তাকে গত ২৪ অক্টোবর কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি কনসালটেন্ট ডা: রাশেদা আফরোজ পারভীনের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হবার পর তিন হাজার ৫০০ টাকা নেয়ার পর সিজার করানো হয়। এরপর ৫-৬ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে। সরকারি হাসপাতালে কেন টাকা দিয়ে সিজার করাতে হবে জানতে চাইলে তাদেরকে বলা হয়, সরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে সিজার করানো যায় না। করালে টাকা দিতে হয়। তার অপারেশন স্থলে ইনফেকশন দেখা দিলে অন্যত্র চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ৮ আগস্ট নাদিয়া নামে এক গর্ভবতীকে ঢাকা মোহাম্মদপুর আলমানা হাসপাতালে নিয়ে মোটা বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সিজার করেন ডা: রাশেদা আফরোজ পারভীন। সিজার করাতে নাদিয়াকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) হিসেবে ডা: রাশেদা আফরোজ পারভীন ও তার আগে অ্যানেসথেসিয়া ডা: ইমরান যোগদান করেন। এখানে এসেই তারা দালালদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। এর আগে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলামের ছেলে তানভীর আহমেদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তার যোগদানের পর ডা: রাশেদা আফরোজ ও ডা: ইমরানের দাপট আরো বেড়ে যায়। গাইনি শাখা এই দুইজনের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে।

অভিযোগ রয়েছে, গর্ভবতী মায়েরা সিজারের জন্য কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সিজার না করিয়ে তাদেরকে আশপাশের ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে ডা: রাশেদা আফরোজ পারভীন বলেন, এ হাসপাতালে আসা রোগীদেরকে এখানেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তানভীর আহম্মেদ জানান, তার কাছে গাইনি ডা: রাশেদা আফরোজ পারভীনের বিরুদ্ধে কোনো রোগী অভিযোগ করেননি। গত মাসে ১৩৬টি ডেলিভারি হয়েছে। যা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি।
ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলছেন, সরকারি হাসপাতালে সিজারের জন্য কোনো বাধাধরা সময় নির্ধারণ করে দেয়া নেই। রোগী ২৪ ঘণ্টাই সেবা পাবে। তিনি বলেন, হাসপাতালে সাপ্লাই না থাকলে ওষুধ বাইর থেকেই কিনতে হয়। সে টাকাটা হাসপাতাল সমাজ সেবার মাধ্যমে রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে পরিশোধ করা হয়। এর বাইরে কোনো অনিয়ম হলে তা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement