অতিবর্ষণে ডুমুরিয়ায় মাছ ও সবজির ক্ষতি ৩৫০ কোটি টাকা
- আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী, ডুমুরিয়া (খুলনা)
- ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৫
টানা দুই মাসের টানা বর্ষণে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বেশিরভাগ খাল-বিল-নদী, চিংড়ি ঘের, সবজি ক্ষেত দীর্ঘ দিন পানিতে তলিয়ে থাকায় প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে উপজেলার অধিকাংশ মানুষের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। দিনমজুর ও দরিদ্র কৃষকদের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।
বহু বছরের মধ্যে এবার এতবড় দুর্যোগে পড়ার পরও অনাহারে অর্ধাহারে থাকা মানুষেরা তেমন কোনো খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে না। ‘চিংড়ি ঘেরে মাছ-সবজি-ধান চাষ কেন্দ্রিক’ জীবন-জীবিকা নির্ভর সমগ্র ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবিত্ত-নি¤œবিত্তের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসের অতিবর্ষণে ২০ হাজারের অধিক চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। এতে করে মাছ ও অবকাঠামোর আনুমানিক ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সবজির জোগানদাতা ডুমুরিয়ার চিংড়ি ঘেরের আইলের পাশে আবাদকৃত সবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবারের অতি বৃষ্টিপাতে এ উপজেলায় মোট ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা। এদিকে জলাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে আসন্ন বোরো ধানের চাষাবাদেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ডুমুরিয়া ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে দুইশ’ ৪১টি গ্রামের মধ্যে অধিকাংশ গ্রামের চিংড়ি ঘের তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি গ্রামের বাড়িঘর রাস্তাঘাটেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ধামালিয়া ইউনিয়নের বরুণা, কাঠেঙ্গা ও চেচুড়ীসহ আটটি গ্রাম, রঘুনাথপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর ও মুজারঘুটোসহ ১০টি গ্রাম, রুদাঘরা ইউনিয়নের খরসঙ্গ, মিকশিমিল ও হাসানপুরসহ পাঁচটি গ্রাম, খর্ণিয়া ইউনিয়নের সিংগা ও পাঁচপোতাসহ পাঁচটি গ্রাম, আটলিয়া ইউনিয়নের আধারমানিকসহ আটটি গ্রাম, মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের ঘোষড়া ও কাঞ্চনপুরসহ আটটি গ্রাম, শোভনা ইউনিয়নের বারইকাঠি ও বাগাছড়াসহ চারটি গ্রাম, শরাফপুর ইউনিয়নের আকড়াসহ পাঁচটি গ্রাম, সাহস ইউনিয়নের লতাবুনিয়াসহ চারটি গ্রাম, ভাণ্ডারপাড়া ইউনিয়নের তেলিখালি, পেড়িখালি ও ধানিবুনিয়াসহ পাঁচটি গ্রাম, ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের মির্জাপুর, বিলপাটিয়ালা ও সাজিয়াড়াসহ পাঁচটি গ্রাম, রংপুর ইউনিয়নের রংপুর, সাড়াভিটা ও বটবেড়াসহ চারটি গ্রাম, গুটুদিয়া ইউনিয়নের লাইন বিলপাবলা, বিলপাবলা ও লতাসহ পাঁচটি গ্রাম এবং মাগুরখালি ইউনিয়নের কাঞ্চননগর এখনো প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে।
এসব প্লাবিত এলাকার মধ্যে সাড়াভিটা, ঘোনা, বটবেড়া, ঘোষড়া, কাঞ্চনপুর, মির্জাপুর, বিলপাটিয়ালা, সিংগা, কৃষ্ণনগর ও আধারমানিক গ্রামের অবস্থা খুবই নাজুক। এসব গ্রামের বেশিরভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি পড়ে গেছে। মানুষগুলো খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম দিনাতিপাত করছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হাতেগোনা কিছু মানুষ নামমাত্র কিছু চাল পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা কিছুই না।
রংপুর ইউনিয়নের ঘোনা গ্রামের মলি মল্লিক বলেন, আমাদের গ্রামে সব চিংড়ি ঘের তলানো। কারো কোনো কাজকাম নেই। শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে পানি উঠে গেছে। রুদাঘরা ইউনিয়নের শোলগাতিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র সবজি বিক্রেতা জিয়াউর রহমান বলেন, আগে এলাকার ঘের-ভেড়ি থেকে সবজি কিনে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম। এদিয়েই সংসার চলতো। এখন সব সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অলস বসে বসে দিন গুণছি।
উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন বলেন, গত দুই মাসে আমরা উপজেলার সব ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তিন ধাপে মোট ৪৩ টন চাল ও দুই লাখ টাকা বিতরণ করেছি। তবে, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের তুলনায় এসব সাহায্য নিতান্তই নগণ্য।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনিম জাহান বলেন, দুর্গত প্রান্তিক মানুষের জন্য আরো খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য জেলায় চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা