কলাপাড়ায় ৯ ইউনিয়নের মানুষ জোয়ারে ভাসে, ভাটায় জাগে
- এইচ এম হুমায়ুন কবির কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
- ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০৫
প্রায় এক যুগ আগে ৩৩ শতক জমি কিনেছিলেন কৃষি শ্রমজীবী মিজানুর রহমান। এখন চা ও মুদি দোকানি তিনি। ওই দোকানের আয় দিয়েই চলছে ছয়জনের সংসার। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে যেতে লোন্দা সেতু পেরিয়ে ওপার গেলেই ডান দিকে বেড়িবাঁধের বাইরে মিজানুরের বসতঘর। জোয়ারের সময় থাকেন পানিবন্দী। বর্ষা মৌসুমে অমাবস্যা-পূর্ণিমায় ঘরের মধ্যে পানি ঢোকে। এভাবে বসবাস তার।
শুধু মিজানুর নন, সেতুর ডান দিকটায় মিজানুরের ভাইসহ আরো সাত-আটটি পরিবারের বসবাস। বাঁ দিকেও অসংখ্য বসতি রয়েছে। তারা বর্ষা মৌসুমে জোয়ারে থাকেন পানিবন্দী। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা এরা। টিয়াখালী নদীতীরের জেগে ওঠা চরে বসতি তাদের।
ধানখালীর সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার জানান, পুরো ইউনিয়নে রয়েছে আরো অন্তত ৫০০ পরিবার। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এসব পরিবারে প্রাণহানির ঝুঁকি থাকে। তারপরও মানুষগুলো বসবাস করছে। দুর্যোগকালে কখনো এরা বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে হয়।
চম্পাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জানান, দেবপুরে আটটি পরিবার, গোলবুনিয়ায় সাতটি, পাটুয়ায় ১৫-২০টি পরিবার অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিতে ভাসে আবার ভাটার সময় জেগে ওঠে। ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন জানান, ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ডালবুগঞ্জে ৪১টি ঘর, গাববাড়িয়া বাঁধ থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত ৪৫টি, ডালবুগঞ্জ, ধানখোলা স্লুইস, রসুলপুর, পেয়ারপুর, ফুলবুনিয়ায় ৪০টি এবং মনযাতলী, খাপড়াভাঙ্গা ও কলাপাড়ায় ৩০টি পরিবার বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করছে।
মিঠাগঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী হেমায়েত উদ্দিন জানান, ইউনিয়নের তেগাছিয়া বাজারের আশপাশে ২৫টি, মিঠাগঞ্জে তিনটি, মেলাপাড়ায় ৪০টি, উত্তর চরপাড়ায় ৬৮টি, দক্ষিণ চরপাড়ায় ১০টি এবং মধুখালীর লেকের দুই পাড়ে অনন্ত ৬০টি পরিবার বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করছে। লতাচাপলীর সাবেক চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লøøা জানান, তার ইউনিয়নের এক হাজার ৮৭০টি পরিবার অস্বাভাবিক জোয়ারের সময় পানিবন্দী থাকে।
ধুলাসার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রহিম জানান, এখানকার গঙ্গামতি, চরগঙ্গামতি ও কাউয়ারচরে অন্তত তিন হাজার পরিবার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে বসবাস করছে। লালুয়ার সাবেক চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, এক যুগ ধরে বেড়িবাঁধ না থাকায় সহস্রাধিক পরিবারের সদস্যরা পানির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে।
একই দৃশ্য ১২টি ইউনিয়নের সর্বত্র। ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করা এসব পরিবারের কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ জীবন জোয়ারে ভাসে আর ভাটাতে জেগে ওঠে। সর্বশেষ পূর্ণিমার প্রভাবে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবারের অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাসতে দেখা যায় এসব পরিবারের বাড়িঘর। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে জমিসহ সেমিপাকা ঘর দিয়ে প্রায় ৯০০ পরিবারকে নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা