সাভারে লাশের ভ্যান থেকে ফেরা হারুন ভালো নেই
- আমান উল্লাহ পাটওয়ারী সাভার (ঢাকা)
- ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৭
সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে গুরুতর আহত ব্যবসায়ী হারুন মিয়া (৪৮) হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও শরীরের ক্ষত এখনো শুকায়নি। প্রচন্ড যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। স্থানীয় একটি বেসরকারী হাসপাতালে দেড় মাস চিকিৎসা নিয়ে এখন তিনি বাসায় শুইয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ব্যবসা বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে অতি কষ্টে দিন কাটছে তার।
হারুন জানান, ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশের গুলি খেয়ে পড়ে থাকায় তাকে মৃত ভেবে অন্য লাশের সাথে তাকেও ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। ক্ষতস্থান পুরোপুরি শুকায়নি। আয় রোজগার বন্ধ। স্ত্রী, এক ছেলে ও মেয়ের সংসার তার। এমন পরিপাটি সংসারের একমাত্র উপার্জন করা ব্যক্তি এখন ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন। সাভার উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় দীর্ঘ ৩০ বছর ভাড়া বাসায় থাকেন। গ্রামের বাড়ি তার মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা গ্রামে। বিএনপির এক সক্রিয় সমর্থক। সাংগঠনিকভাবে খোঁজ খবর নেয়া ছাড়া আর্থিকভাবে দলীয় কিংবা সরকারি কোনো সহায়তা পাননি তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগীতা কামনা করেছে পরিবারটি।
হারুন জানান, গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বিকেলে সাভার ছিল রণক্ষেত্র। ওইদিন বিকেলে পুলিশের গুলিতে নিহত ও আহত হন অনেকে। ওই দিন বিকেলে থানার গেটের কাছে ডাকঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। আপনারা কার ওপর গুলি করছেন? এরা তো সবাই আপনাদেরই ভাই। ঠিক সেই মুহূর্তে হেলমেট পরিহিত এক পুলিশ সদস্য তাকে গুলি করে। প্রথম গুলিটি লাগে তার বুকের বাম পাশে। এরপর আরো দুইটি গুলি তার ডান পায়ের উরু এবং হাটুতে এসে লাগে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
কিছুক্ষন পর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত এক ভ্যানচালককে বলেন, সে মারা গেছে। তাকে ভ্যানে তুলে দাও। পরে পুলিশ ও ভ্যানচালক তাকে ধরে আরো কয়েকটি লাশের সঙ্গে ভ্যানের ওপর তুলেন। গুলিবিদ্ধ হারুন তখনো অবচেতন মনে পুলিশের কথাগুলো শুনছিলেন। ভ্যানে থাকা কয়েকটি লাশ সঙ্গে হারুনকে নিয়ে যাওয়া হয় থানার অদূরে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের। ভ্যানে থাকা লাশ দেখতে এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী কয়েক যুবক। তারা গুলিবিদ্ধ হারুনকে নড়াচড়া করতে দেখেন। তখন তাদের একজন হারুনের কাছে মোবাইল নম্বর জানতে চাইলে তিনি (হারুন) ছেলের মোবাইল নম্বর দেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবী সেই যুবকরা। পরে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র থেকে পরিবারের সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি বেসরকারী হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
হারুন জানান, তিনি বিএনপির একজন সমর্থক। কিন্তু সংগঠনে তার কোনো পদপদবী নেই। কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন। নয়া দিগন্তকে তিনি জানান, আমার সব শেষ। মানুষের ভালবাসায় আমি এখনও বেঁচে আছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা