১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

আকাশে মেঘ দেখলেই উৎকণ্ঠায় থাকেন ভবদহপাড়ের বাসিন্দারা

ভবদহ স্লুইসগেটসংলগ্ন বিল নিচু এবং শ্রী-হরি নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় পানি প্রবাহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থমকে থাকে। স্লুইসগেটের বিপরীত পাশের শ্রী-হরি নদীসহ খালগুলো পলিতে ভরাট হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়
-


চারিদিকে পানি আর পানি। ঘরের বাইরে যেতে পারে না লোকজন। ডিঙ্গি নৌকা, বাঁশের সাঁকোই ভবদহপাড়ের বাসিন্দাদের ভরসা। এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একপ্রকার বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা তো রয়েছেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষ ও গবাদি পশু একসঙ্গে বসবাস করছে। দীর্ঘ তিন দশকের অধিক ভবদহপাড়ের বাসিন্দাদের এমন অবস্থা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বাড়ে তাদের দুর্দশা। ফলে আকাশে মেঘ দেখলেই উৎকণ্ঠায় থাকেন ভবদহ পাড়ের বাসিন্দারা।
যশোর জেলার মনিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর, বাঘারপাড়া ও সদর উপজেলা এবং খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ভবদহ স্লুইচগেট। কিন্তু ভবদহ স্লুুইসগেটসংলগ্ন বিল নিচু এবং শ্রী-হরি নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় পানি প্রবাহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থমকে গেছে। ভবদহ স্লুইসগেটের বিপরীত পাশের শ্রী-হরি নদীসহ খালগুলো পলিতে ভরাট হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র জানায়, পাকিস্তান আমলে ‘সবুজ বিপ্লব’ বাস্তবায়নে ১৯৬২-৬৩ সালে ভবদহ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে তিনটি পোল্ডার, ১০ হাজার ৫৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ২৮২টি স্লুইচগেট নির্মাণ করা হয়। আশির দশকে এসব অবকাঠামে ভবদহ বিলপাড়ের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। এ অঞ্চলের পানিবন্দী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের একপর্যায় ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৬ সালে ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কেজেডিআরপি (খুলনা-যশোর ড্রেনেজ রিহেবিলেশন) প্রকল্প, ২০০২ সালে ২৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা-যশোর পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় ভবদহ স্লুইসগেট থেকে সতিঘাটা কামালপুর পর্যন্ত টেকা ও মুক্তেশ্বরী নদীর দুই তীরে বেড়িবাঁধ, কপাটসহ অসংখ্য ছোট ছোট স্লুইসগেট নির্মাণ করা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। বরাদ্দের এ শত শত কোটি টাকার সিংহভাগ তসরুপ হয়েছে।

১৯৯৭ সালে ভবদহ পানি সংগ্রাম কমিটি আড়িয়াল খাঁ ঘের কেটে শ্রী নদীর সাথে বিল ভায়নায় জোয়ারাধার সৃষ্টি করলে পলি সরে যায়। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সাথে বৈঠকে সংগ্রাম কমিটির জোয়ারাধারের এ ধারণা উত্থাপন করলে তা টিআরএম হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১১ সালে বিল কপালিয়ায় একই সমস্যা হলে টিআরএম চালু করার জন্য ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। তবে পাউবোর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেই বরাদ্দের টাকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত যায়। দীর্ঘদিন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ভবদহসংলগ্ন শ্রী, হরি, টেকা, আমডাঙ্গাসহ অসংখ্য নদী ও খাল পলি জমে বিল থেকে উঁচু হয়ে যায়। এতে ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মনিরামপুর উপজেলার কপালিয়া বিলপাড়ের মানুষ চাঁদা তুলে সেচ পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে। স্থানীয়দের এ ধারণা নিয়ে পাউবো ও বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন)-এর যৌথ উদ্যোগে সেচপাম্প চালু করতে ৩১ লাখ ৬০ টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ও ট্রান্সফরমার নির্মাণসহ নানা কাজ করা হয়।

পরিতোষ বিশ্বাস, কার্ত্তিক মন্ডল, চৈতন্য মল্লিক, আরাধনসহ একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সঙ্কট উত্তরণে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে সেচ পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের অকার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এজন্য পাউবোর অসাধু কর্মকর্তাদের দুষছেন তারা। কিন্তু ওই সময় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি একাধিকবার সেচ পাম্পের বিরোধিতা করে স্থায়ী সমাধানে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট- জোয়ারাধার), আমডাঙ্গা খাল খননসহ নদী থেকে পলি অপসারণের দাবি করলেও তাতে কর্ণপাত করেনি পাউবো।
জানতে চাইলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতা শিবপদ বিশ্বাস বলেন, ভবদহ বিলপাড়ের কমপক্ষে ৩০০ গ্রামের তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দ্রুত পানি সরাতে আমডাঙ্গা খাল খনন, টিআরএম চালু ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পানিবন্দী সিংহভাগ মানুষ সনাতন ধর্মাবলম্বী। ফলে এবারের দুর্গোৎসবের আমেজ এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ম্লান হতে চলেছে। পাউবোর যশোর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, দ্রুত পানি নিষ্কাশনে ভবদহের দক্ষিণে পলি অপসারণসহ আমডাঙ্গা খাল হতে পলি অপসারণের কাজ চলছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
অর্থ পাচারে জড়িত আ’লীগের ৭০ মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না: তথ্য উপদেষ্টা লেবাননে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর ইসরাইলি হামলা : বিশ্বজুড়ে নিন্দা কালেমাখচিত কালো পতাকা মিছিলের নেপথ্যে কারা বিভক্ত জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না : ডা: শফিকুর রহমান ১০০ টাকার নিচে নেই কোনো সবজি, নিম্নমুখী ডিমের দাম গুলিতে নেসারের বাহুর হাড় টুকরা টুকরা হয়ে গেছে লুটপাটই সাধনের সাধনা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অনেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে : রিজভী নোবেল শান্তি পুরস্কার পেল জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন মিয়ানমার নৌবাহিনীর হাতে বাংলাদেশী জেলে হত্যার প্রতিবাদ ঢাকার

সকল