০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

পানি নিষ্কাশনের পথে রাইস মিল জলাবদ্ধতার শিকার ৫০০ পরিবার

ফুলপুরের কারাহা গ্রাম
বছরের প্রায় ৬ মাস জলাবদ্ধ থাকে ফুলপুর উপজেলার কারাহা গ্রাম : নয়া দিগন্ত -


প্রভাবশালীদের রাইসমিল স্থাপনের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কারাহা গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবার স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে এক যুগ ধরে বার বার প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। ফলে এসব পরিবারের দুই সহস্রাধিক সদস্যের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।

জানা যায়, ফুলপুর উপজেলার পয়ারী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কারাহা গ্রামটির উত্তর-পূর্বে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, দক্ষিণ-পশ্চিমে পয়ারী সড়ক ও ফুলপুর পৌরসভার আমুয়াকান্দা। এ গ্রামে প্রায় পাঁচশ পরিবার বসবাস করে, যাদের অধিকাংশই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। গ্রামে ফসলি জমির পরিমাণ চার শতাধিক একর। এক সময় এ জমিতে উৎপাদন হতো হাজার হাজার মণ ধান ও নানা শাকসবজি। গ্রামের একপাশে ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট মহাসড়ক। এ মহাসড়কে ইটালী রাইসমিলের কাছে একটি কালভার্ট ও দুর্বার রাইসমিলের কাছে একটি রিং কালভার্ট দিয়ে এক সময় এলাকার পানি নিষ্কাশন হতো। ফলে গ্রামে কখনও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি।

এক যুগ আগে এ মহাসড়কের দুই পাশে রাইস মিল স্থাপনের কারণে কালভার্ট ও রিং কালভার্টে পানি প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে কারাহা গ্রামের একটি বড় অংশ ও ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে পুরো এলাকা স্থায়ী জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। দু-একদিন টানা বৃষ্টি হলেই পানি বেড়ে মানুষের বাড়িঘরে প্রবেশ করে ও ফসলি জমি স¤পূর্ণরূপে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার কয়েক দিন পর কোনো কোনো বাড়িঘরের পানি নেমে গেলেও ফসলি জমি ও নিচু বাড়িঘর পানির নিচেই থেকে যায়। এভাবে বছরের প্রায় ছয় মাস জলাবদ্ধতা অব্যাহত থাকায় কৃষকের আমন ফসল ও বর্ষাকলীন শাক-সবজি উৎপাদন সম্ভব করা হয় না। এতে প্রতিবছরই এলাকার শত শত কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অধিকাংশ পরিবার চরম খাদ্য সংকটের শিকার হয় । বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে কোনো কোনো পরিবার অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। সঙ্কট নিরসনের দাবি জানিয়ে ইতঃপূর্বে এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে একাধিকবার আবেদন নিবেদন জানিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শনসহ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিলেও অদ্যাবধি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

কারাহা গ্রামের কৃষক কাসেম খান জানান, জলাবদ্ধতার কারণে গরু-বাছুর ও অন্যান্য গবাদিপশু বাইরে বের করা যায় না। সার্বক্ষণিক গোয়ালঘরেই রাখতে হয়। একই গ্রামের বাসিন্দা দুলাল মিয়া জানান, বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে একঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করতে হয়।
গ্রামের মিল শ্রমিক শিরীনা বেগম জানান, জলাবদ্ধতার কারণে বাড়িঘরে থাকা সম্ভব না হওয়ায় বছরের ছয় মাস ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন।
বর্ষায় অনেক সময় রান্নাঘরে পানি জমে থাকে। ফলে রান্না করতে না পেরে চিড়া মুড়ি খেয়ে দিনযাপন করতে হয় বলে জানান গৃহিণী ছুলেমা খাতুন।
মৎস্যচাষী রজব আলী জানান, প্রতিবছরই বর্ষায় পুকুর ডুবে মাছ বেরিয়ে যায়। ফলে মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কৃষক আব্বাস আলী জানান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাসেল পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিপক্ষ বাধা হয়ে দাঁড়ালে সে উদ্যোগ ভণ্ডুল হয়ে যায়।

গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, পানির কারণে বাড়ির এক ঘর থেকে অন্য ঘর যেতে পারি না। পানি বের হওয়ার সুযোগ থাকতেও কিছু প্রভাবশালী লোকের কারণে বছরের ছয় মাসই আমাদের পানিবন্দি থাকতে হয়।
জলাবদ্ধতার কারণে জনসাধারণের একদিকে যেমন গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়িঘরে বসবাস ও যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে অপর দিকে খাদ্যাভাবে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ সঙ্কট বছরের পর বছর ধরে অব্যাহত থাকলেও প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপ না থাকায় কারাহা গ্রামের মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement