০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

লালমনিরহাটে বন্যায় কৃষকের ক্ষতি ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা

পানি কমার সাথে সাথে তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন
-


সাম্প্রতিক বন্যায় তলিয়ে গেছে লালমনিরহাট জেলার তিস্তাপাড়ের কৃষকের স্বপ্নের ফসল আমন ধানসহ নানান জাতের সবজি। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা প্রায় আট হাজার সাতশ’ জন। টাকার হিসেবে মোট ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি ৩০ লাখ সাত হাজার টাকা। সেইসাথে বর্তমানে তিস্তার পানি কমতে থাকায় দেখা দিয়েছে নদীর তীব্র ভাঙন।

ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাটের অর্থনীতির সিংহভাগই আসে কৃষি থেকে। তিস্তা, ধরলা আর সানিয়াজান নদী বেষ্টিত এই জেলার পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা আর ধরলা নদী। এ নদী বিধৌত জেলাটিতে ধান, ভুট্টা, পাট ও নানান জাতের সবজির ফলনে লুকিয়ে থাকে কৃষকের স্বপ্ন। কম খরচে চাষাবাদ হওয়ায় আমন ধানেই এ জেলার অধিকাংশ কৃষকের স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে। কিন্তু এবারের বন্যায় কৃষকের সেই স্বপ্নের ফসল আমন ধানসহ শাকসবজি, চিনাবাদাম, আউশ, মাষকলাই ডুবে গেছে বানের পানিতে। বানের পানি ধীর গতিতে কমতে থাকায় আমন ধানের গাছ ও সতেজ সবজির গোড়া পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জেলার অধিকাংশ আমন ক্ষেত এখনো পানির নিচে নিমজ্জিত।

এদিকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করায় নদীপাড়ের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে সদরের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের হরিণচওড়া এলাকার ছয়টি বাড়ি তীরবর্তী এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে রোপা আমনের বীজতলা, শাকসবজি, চিনাবাদাম, আউশ, মাষকলাই ও রোপা আমনের ক্ষেত। এবারে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ আট হাজার ১১০ হেক্টর জমি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ জমির পরিমাণ ১২৭.৫ হেক্টর ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা আট হাজার ৭০০ জন। তাদের মোট ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি ৩০ লাখ টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের গোকুণ্ডা ইউনিয়নের গরিবুল্লাপাড়া, হরিণচওড়ার অধিকাংশ এলাকা, খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের আনন্দবাজার কিছু অংশ নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এসব এলাকার ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলছে।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ আনন্দবাজার এলাকার কৃষক ধনেশ^র রায় জানান, বন্যার পানিই শুধু নয়, বৃষ্টির পানিতেও ডুবে আছে বিস্তীর্ণ এলাকার আমন ধানের ও সবজিক্ষেত। এসব এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এতোটাই দুর্বল যে ফসলি জমি থেকে পানি সহজে সরতে পারছে না। ফলে ধানগাছ ও সবজির গোড়া পচে যাচ্ছে। একই এলাকার কৃষক এনামুল হক বলেন, শীতকালীন সবজি চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করেছিলাম। এ বন্যায় আবাদি জমির পাশাপাশি সকল বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাইখুল আরিফিন বলেন, চলতি বন্যায় ১২৭.৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি ৩০ লাখ টাকা। নষ্ট হওয়া ক্ষেতে নতুন করে আমন রোপন করার আর সুযোগ নেই। তাই এসব জমিতে আগাম ভুট্টাসহ সবজি চাষাবাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ছয়টি ফসলের ওপর প্রণোদনা দেয়ারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, আমরা কয়েকটি জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে তিস্তার ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। সেই সাথে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভাঙনের মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতির সকল তথ্য পাঠানো হচ্ছে। অনুমতি সাপেক্ষে ভাঙন ঠেকাতে আরো জিও ব্যাগ ফেলা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement