০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি

সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে পঞ্চগড়

সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে পঞ্চগড় -

বাংলাদেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। ডাকবাংলো থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য সহজেই উপভোগ করা যায়। মনোরম দৃশ্যাবলি যেন আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। শীতকালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন। পর্যটকদের পদচারণে হয়ে ওঠে এ অঞ্চল মুখরিত।
কুয়াশা কিংবা আকাশ মেঘে ঢাকা না থাকলে উত্তরাকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভেসে ওঠে পর্যটকদের চোখের সামনে। বিরল এ দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন জেলা, বিশ^ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অধ্যাপক, ক্লাবের সদস্য, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, নায়ক, নায়িকাসহ বিভিন্ন শ্রেণীর নারী-পুরুষ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য ভিড় জমায়। বিশেষ করে ঐতিহাসিক ডাকবাংলো উঁচু হওয়ায় পরিষ্কারভাবে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার শোভা। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে এ দৃশ্য আরো ভালোভাবে অবলোকন করা যায়। পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমিকরা পর্বতশৃঙ্গের এমন শোভা উপভোগ করার জন্য তেতুঁলিয়ায় ছুটে আসেন।
পঞ্চগড় একটি বৈচিত্র্যময়, বিনোদন, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যবাহী, ইতিহাস সমৃদ্ধ ও চিত্রাকর্ষক এলাকা। এ জেলার ভেতর দিয়ে মহানন্দা, করতোয়া, ডাহুক, তালমাসহ প্রায় ৩৩টি নদী বয়ে গেছে। এসব নদী থেকে প্রতিদিন শ্রমিকরা বিশেষ উপায়ে পানি থেকে উন্নত মানের বালু ও নুড়ি পাথর সংগ্রহ করেন। হরেকরকম বর্ণিল পাথর দেখে মন প্রাণ ভরে ওঠে। স্তূূূপ করে রাখা পাথর দেখে মনে হয় এ যেন ছোট ছোট টিলা।

পঞ্চগড়ে ১৯৯০ সাল থেকে সমতল পতিত ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে সবুজ পাতার চা চাষ করা হচ্ছে। সাধারণত উঁচু ভূমিতে চা চাষ হয়। কিন্তু সমতল ভূমিতে চা চাষাবাদ বাংলাদেশের এ জেলাতেই প্রথম শুরু হয়েছে। পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে সবুজ চা পাতার মায়াবি ছায়ায় চাওয়াই, ডাহুক, বেরং ও করতোয়া নদী প্রবাহিত। নদীগুলোর তীরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে সরকারি বন। এমন বিশাল বনভূমিতে হাইকিং করার মজাই আলাদা। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে সর্ব-উত্তরে বাংলাবান্ধা। দেশের মানচিত্রের এই জিরো পয়েন্টে নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। মহানন্দা নদীর তীর ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকাজুড়ে প্রায় ১০ একর জমিতে ১৯৯৭ সালে নির্মিত হয়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানে পণ্যসামগ্রী আদান-প্রদানের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
পঞ্চগড়সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে ভরপুর। এক সময় এটি কামরূপের প্রাচীন রাজ্যের অংশ ছিল। ছিল মোগল সাম্রাজ্যের অংশও। মোগলরা সে সময় এ অঞ্চলে ভিতরগড়, হোসাইনগড়, মিরগড়, বদেশ^রীগড়সহ কয়েকটি দুর্গ নির্মাণ করেন। এ ছাড়াও আটোয়ারী কেল্লা, বারো আউলিয়ার মাজার, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, গোলকধাম মন্দির, পঞ্চগড় রক্স মিউজিয়ামসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পরিশেষে পঞ্চগড় জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৌশলগত অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হাতছানিতে একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলা।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement