৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

নামের কারণে এমপিওবঞ্চিত ৩৮ শিক্ষক-কর্মচারী

মহেশপুরের শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ
-

ঝিনাইদহের মহেশপুরের শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি পাসকোর্সের ৩৮ শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তি না হওয়ায় দেড় যুগ অর্থাভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। শুধু শহীদ জিয়াউর রহমান নামের কারণে দেড় যুগ ধরে বঞ্চনার শিকার তারা। যোগ্যতার সব শর্ত পূরণ হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কলেজটি এমপিওভুক্তি করেনি বলে অভিযোগ। জরুরিভিত্তিতে ডিগ্রি পাস কোর্সে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়েছেন কলেজ অন্য শিক্ষক-কর্মচারী ও এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি কালিগঞ্জ-জীবননগর সড়কসংলগ্ন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ফতেপুরে ৪ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ। শিক্ষায় অনগ্রসর এই এলাকার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে ঝিনাইদহ-৩ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম মাস্টার কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ৪৪ শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করা হয়।
২০০৫ সালের ১৩ জুলাই ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। বিধি অনুযায়ী ডিগ্রি পাস কোর্সে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (পাস) শিক্ষা কার্যক্রমে অধিভুক্ত করা হয়। পাঠদানের জন্য আছেন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক।
অভিযোগ করা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কলেজের নাম পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করেন দলটির স্থানীয় নেতারা। কিন্তু শিক্ষকদের অনড় অবস্থানের কারণে নাম পরিবর্তন করতে না পেরে কলেজটিকে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের ওই কলেজে ভর্তি না হতে নানাভাবে প্রভাব খাটান। এরপরও যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হতো তাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এমপিও আবেদনের জন্য বছরের পর বছর স্থানীয় আওয়ামী সংসদ সদস্যের কাছে ঘুরেও মেলেনি ডিও লেটার ও সুপারিশ। যদিও আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ও নেতা কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি-সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের আন্তরিকতার অভাবে দীর্ঘ ১৮ বছরেও কলেজের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে অবকাঠামো উন্নয়নে কোনো ভবন বরাদ্দ বা কোনো প্রকার সরকারি অনুদান আসেনি।

১৮ বছর আগে যেসব শিক্ষক শিক্ষকতার শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সাথে নিজেদের নাম যুক্ত করেছিলেন তাদের দুর্দশা ছিল চরমে। এসব শিক্ষক দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হয়েও আজ তারা সমাজের কাছে অসম্মানিত। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে অর্থকষ্টে থাকা এসব শিক্ষকের দাবি তাদের সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ। চাকরির বয়স শেষের দিকে আসা এসব শিক্ষকরা জানান, তাদের হারানো সম্মান ফিরে পেতে ও আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিগ্রি পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের তারিখ হতে সব বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে কলেজের প্রভাষক মো: ছামাদুজ্জামান বলেন, ২০০৩ সালে আমাকে শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি (পাস) কোর্সে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই থেকে ২১ বছর যাবত বেতন-ভাতা তো দূরের কথা কলেজ থেকে কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি। বিগত দেড় যুগ ধরে আমরা বৈষম্যের চরম সীমা অতিক্রম করে আসছি। গত আওয়ামী সরকারের কাছে আমাদের অযোগ্যতা আমরা শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। অনতিবিলম্বে ডিগ্রি পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করে নিয়োগ দানের তারিখ হতে সব বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ করছি।
কলেজের অধ্যক্ষ মো: শওকত আলী বলেন, উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চনার শিকার শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ। কলেজটির ডিগ্রি শিক্ষকদের প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে তা অকল্পনীয়। আমি তাদের সব বকেয়া পরিশোধের দাবি জানাই। একই সাথে ডিগ্রি পর্যায়ে এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণের দাবি জানাচ্ছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement