২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

লক্ষ্মীপুরে নদীর তীর রক্ষাবাঁধ কেটে রাস্তা-জেটি নির্মাণ

কমলনগরের মাতব্বরহাট এলাকায় মেঘনার তীর রক্ষাবাঁধ কেটে তৈরি করা ট্রাক্টর চলাচলের রাস্তা : নয়া দিগন্ত -


লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মাতব্বরহাট এলাকায় মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ কেটে ও ব্লক সরিয়ে ট্রাক্টর চলাচলের জন্য রাস্তাসহ দু’টি অস্থায়ী জেটি স্থাপন করেছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে মাটি সরে বাঁধটি ঝুঁঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে যেকোনো সময় বাঁধটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট বাজার এলাকা নদী তীর রক্ষা বাঁধটিতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধ ঘেঁষেই ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্লক নির্মাণের কারখানা। নদীর অন্যান্য এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিষ্ঠানটি ৫টি প্যাকেজের ১৫টি লটে কাজ করছে। এতে সেসব স্থানে ব্লক নিতে নদীপথ ব্যবহারের জন্য তারা তীর রক্ষা বাঁধটি কেটে ট্রাক্টর চলাচলের রাস্তা করে নেন। এ ছাড়া বাঁধের ব্লক সরিয়ে দু’টি অস্থায়ী জেটি স্থাপন করা হয়েছে। বেড়িবাঁধ কেটে স্থাপন করা একটি জেটিতে ভেকু মেশিন রেখে ট্রাক্টরের ওপর থেকে ব্লকগুলো নৌযানে উঠাতে দেখা যায়। এ ছাড়া মাটি কাটা দু’টি স্থানেই বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। মাটি ও ব্লক সরিয়ে রাস্তা-জেটি নির্মাণে বাঁধটি ঝুঁঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মেঘনা নদীর মাতাব্বরহাট এলাকা ভাঙনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।

মাতাব্বরহাট বাজারের তিন ব্যবসায়ী বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদেরকে সব সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসতো। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডও কোম্পানির দুর্নীতির সাথে জড়িত। এতে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তারা বাঁধটি কেটে দু’টি জেটি স্থাপন করেছে। তারা এখান থেকে কয়েক বছর পর চলে যাবে। কিন্তু তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি এ উপকূলের জন্য অভিশাপ হয়ে উঠবে।

ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মো: বোরহান বলেন, ‘মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধের প্রকল্পের ৫টি প্যাকেজে লুধুয়া, পাটওয়ারির হাটসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের কাজ চলমান। সেসব স্থানে ব্লক নেয়ার জন্য বাঁধ কেটে ট্রাক্টরের জন্য রাস্তা করা হয়েছে। এ ছাড়া বাঁধের ব্লক সরিয়ে দু’টি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে তারা লিখিত কোনো অনুমোদন নেইনি। বঁাঁধটির কোনো ক্ষতি হবে না আশা করছি। আমাদের কাজ শেষে পুনরায় বঁাঁধ ঠিক করে দেয়া হবে।’
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, বেড়িবঁাঁধ কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। বেড়িবঁাঁধের দায়িত্ব পুরোটাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তারা আমাদেরকে কিছু জানাননি। তারা যদি আমাদেরকে বিষয়টি অবহিত করতেন, অবশ্যই তাদেরকে আমরা সহযোগিতা করতাম। বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলব।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, উপসহকারী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে পরে উত্তর দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরের মাতব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার বঁাঁধ নির্মাণের কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই বছর নিম্নমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়রা তখন আন্দোলন করেছিল। পরবর্তীতে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার দেড় বছরের মধ্যে নদীর তীব্র স্রোত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাঁধটিতে অন্তত ১০ বার ধস নামে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রিমালে বাঁধের দক্ষিণ-পূর্বাংশ ধসে পড়ে।

 


আরো সংবাদ



premium cement