২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত

জামালগঞ্জের সোহাগের মায়ের কান্না থামছে না

শহীদ সোহাগের ছবি দেখাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা : নয়া দিগন্ত -


‘আমার বুকের ধন সোহাগরে হুলিশে (পুলিশ) গুলি দিয়া মারছে। তোমরা আমার পুতরে আইনা দেও। আমার সোহাগরে আইন্না দেও। আমারা গরিব মানুষ, কাম-কাজ কইরা খাই। আমার পুতরে গুলি দিয়া মারছে গো। আমার পুতরে গুলি দিয়া মারছে।’ পুত্র শোকে এভাবে বুক চাপড়িয়ে বিলাপ করছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ শ্রমিক সোহাগ মিয়ার গর্ভধারিণী মা। মায়ের এমন বিলাপ শুনে যে কারো চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। সন্তান হারিয়ে হতদরিদ্র মায়ের কান্না যেন থামছেই না। সোহাগের বাবার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। কেউ বাড়িতে গেলে বুক থেকে শুধু হু-হু শব্দ বের হয়ে আসে।

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের গোলামীপুর গ্রামের ছোট্ট একটা ঘরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত সোহাগ মিয়া। তার কবরের পাশেই উড়ছে লাল সবুজের একটি পতাকা। গত বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার উপস্থিতিতে হতদরিদ্র আবুল কালামের বাড়িতে গিয়ে এমন করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে।
অভাবের তাড়নায় দিনমজুর আবুল কালাম তার সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেননি। সন্তানদের মধ্যে সোহাগ ছিলেন তৃতীয়। ২০১৯ সালে সোহাগকে প্রবাসে পাঠাতে জায়গাজমি বিক্রি ও ঋণ করে সাড়ে পঁাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিলেন এক দালালের হাতে। সেখানেও প্রতারিত হন সোহাগের বাবা। এ ঋণের টাকা পরিশোধে করতেই রাজধানীতে গিয়ে বাড্ডা এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করছিলেন সোহাগ মিয়া ও তার ছোটভাই শুভ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বাঁধভাঙা মিছিল দেখে নিজেদের আটকাতে পারেননি এ দুই তরুণ। যোগ দেন মিছিলে। বাড্ডা থানার সামনে আসতেই পুলিশের গুলিতে স্পটেই নিহত হন সোহাগ আর তার ছোটভাই শুভ গুলিবিদ্ধ হন। পরে অন্যরা হাসপাতালে নিয়ে যায় শুভকে।

শুভ জানান, হাসপাতালে সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে চলে আসি। এখনও পায়ে দু’টি গুলি রয়ে গেছে। আগের মতো কাজ করতে পারি না। টাকা-পয়সার অভাবে অপারেশন করে গুলি বের করতে পারছি না।
এক শতক জায়গায় একটি ভাঙা ঘরে মাথা গুঁজার ঠাঁই এ শহীদ পরিবারের। বাঁশের ঘরে মরিচা পড়া ও ফুটো হয়ে যাওয়া টিনের চাল থেকে বৃষ্টির পানি পড়ে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া শহীদ সোহাগের বাড়ি পরিদর্শনে আসেন। শহীদ সোহাগের কবর জিয়ারত করেন। বাবা-মা ও গুলিবিদ্ধ শুভ মিয়ার সাথে কথা বলেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হয়। তবে এটা যথেষ্ট ছিল না।
জেলা প্রশাসক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সরকারি সহযোগিতার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ শুভর সুচিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement