২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বান্দরবানের পর্যটন শিল্প লোকসানের মুখে

ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় দিন গুনছেন ব্যবসায়ীরা
-


প্রায় ৯ লাখ টাকা সালামি এবং মাসে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে বান্দরবান শহরের কাছে লালমোহন বাহাদুর বাগান এলাকায় স্বপ্ন বিলাস নামে ছোট্ট একটি রিসোর্ট নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন সোহেল কান্তিনাথ নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে পর্যটকদের ওপর প্রশাসনের অলিখিত নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবং সম্প্রতি দেশের সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির কারণে পর্যটন ব্যবসায় সোহেলকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা ভাড়ার টাকা উঠাতেও তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সোহেলের মতো বান্দারবানে এ রকম অনেক রিসোর্টের মালিকের অবস্থা একই। জেলার সেনাবাহিনী পরিচালিত নীলগিরি রিসোর্ট ছাড়া অন্য সব রিসোর্টই এখন লোকসানের মুখে। ইতোমধ্যে লোকসানের কারণে অনেক হোটেল ও রিসোর্ট বন্ধ হয়ে গেছে। ছাঁটাই করা হয়েছে কর্মচারী।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলার হোটেল মোটেল রিসোর্ট, পর্যটন পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি, ট্যুর গাইড, নৌ পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর সাথে প্রায় পাঁচ হাজার লোক জড়িত। কক্সবাজারের কাছাকাছি হওয়ায় পাহাড় আর প্রকৃতি দেখতে পর্যটকটা ছুটে আসেন বান্দরবানে। সাধারণ যেসব পর্যটন কেন্দ্রগুলো রয়েছে তার বাইরে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর, ট্রেকিং, মাউন্টেন সাইক্লিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল বান্দরবানে। বিশেষ করে দুর্গম এলাকার পাহাড়ি ঝরনা নদী পাহাড়ি গ্রাম ও প্রাণ-প্রকৃতি দেখতে লক্ষাধিক পর্যটক ছুটে আসতেন এই জেলায়।
গত দুই বছর ধরে পাহাড়ে নতুন গজিয়ে ওঠা সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী তৎপরতা ও তাদের দমনে অভিযানের কারণে কয়েকটি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। করোনার পর সম্প্রতি কোটা বিরোধী আন্দোলনের কারণে পর্যটন শিল্পে নেমে আসে বিপর্যয়।

জেলার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, বান্দরবান শহরে যেসব আবাসিক হোটেল রয়েছে তাতে পাঁচ শ’র বেশি পর্যটক থাকতে পারে। সেই সাথে আরো শতাধিক ছোট-বড় পর্যটন রিসোর্ট রয়েছে যেখানে আরো পাঁচ শ’র বেশি পর্যটক থাকতে পারেন। করোনাকালীন পর্যটন শিল্পে যে ক্ষতি হয়েছিল, সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই সন্ত্রাসী তৎপরতায় ফের পর্যটন ব্যবসায় ধস নামতে শুরু করেছে বান্দরবানে।
শহরের কাছের একটি পর্যটন মোটেলের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ সোয়েব জানান, শুধু পর্যটন মোটেলেই গত দুই মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বান্দরবানের পর্যটন শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকে বাধ্য হবেন হোটেল মোটেল রিসোর্ট বন্ধ করে দিতে। লোকসানের কারণে কর্মচারী ছাঁটাইও চলছে।
বান্দরবানে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন রোয়াংছড়ির দেবতাখুম পর্যটনকেন্দ্রে। তবে সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে প্রায় এক বছর ধরে এই পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকরা যেতে পারছেন না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাঙ্গামাটির সাজেকের মত নিরাপত্তা বাহিনীর পাহাড়ায় পর্যটকদের এসব পর্যটনকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারকে পর্যটন ব্যবসায় প্রণোদনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেই সাথে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা যেতে পারে।
জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, এ শিল্পকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে বেশ কিছু পরিকল্পনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করা যায়, সরকার এ বিষয়ে খুব দ্রুত উদ্যোগ নিবে।


আরো সংবাদ



premium cement