২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে মুলাদীর ৪ গ্রাম

মুলাদী উপজেলার ৪ গ্রামে জয়েন্তী নদীর ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে : নয়া দিগন্ত -


বরিশালের মুলাদী উপজেলার চরমালিয়া, কায়েতমারা, সফিপুর ও চরমালিয়াসহ চারটি গ্রাম নদীতে বিলীন হতে যাচ্ছে। চরকালেখা ইউনিয়নে চরমালিয়া গ্রামের বেপারির হাটসহ শত শত ঘরবাড়ি জয়ন্তী নদীতে বিলীন হচ্ছে। অব্যাহত নদী ভাঙনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে চরমালিয়া গ্রামটি। সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। রাস্তাঘাট নদীতে ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বেপারির হাট ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই গড়ে উঠে শত শত দোকানপাট। যার ওপর নির্ভর করে শত শত পরিবারের জীবিকা নির্বাহ। পুরো বাজারটি নদীতে বিলীন হতে মাত্র কয়েক হাত বাকি। বাজারের কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
বাজারটি ঘেঁষে রয়েছে মুলাদী-সফিপুর সড়ক। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার মানুষ, শত শত গাড়ি চলাচল করে। সড়কটি নদীতে বিলীন হলে মুলাদী সদরের সাথে উত্তরাঞ্চলের ছেলে মেয়েরা মুলাদী সরকারি কলেজ, চরকালেখান আদর্শ কলেজ, চরকালেখান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদরাসার শত শত ছাত্রছাত্রী ও হাজার হাজার জনগণ পড়বে চরম ভোগান্তিতে।

এই রাক্ষসী জয়ন্তী নদীটি প্রায় দুই শ’ বছর পর্যন্ত মুলাদীবাসীকে দুর্গতি, ধ্বংস ও দারিদ্র্যতার সাথে জড়িয়ে রেখেছে। মুলাদী উপজেলার বহু প্রাচীন ঐতিহ্য, স্থাপনা, বন্দর, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই জয়ন্তী নদীতে গ্রাস করে নিয়েছে।
এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায় ঐতিহাসিক মীরকুতুবশার দীঘি, বাইশ কাইনী জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত দেয়াল ঘেরা বোয়ালিয়ার জমিদার গ্যানদা প্রাসাদ সেনের বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, মঠ কারিকর পল্লী, কুমার পল্লী দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ সবেই এই নদীতে বিলীন হয়েছে।
খ্রিষ্টপূর্ব পনেরো শতাব্দীতে জেগে ওঠা এই মুলাদীতে (মূলদ্বীপ) কোনো প্রাচীন ঐতিহ্য নেই। নদীতে ভেঙে সবেই চরঅঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এমনো পরিবার রয়েছে যারা জয়ন্তী নদীর এপার-ওপার দশ থেকে বারোবার ঘর বেঁধেছে।
বেপারিরহাটের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ডা: এ বি এম বজলুর রহমান বলেন, জয়ন্তী নদীর কড়াল গ্রাসে এলাকার শত শত ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙন যদি রোধ না করা যায় তা হলে বিভিন্ন বাজার ও সড়ক নদীতে চলে যাবে। মানবতার জীবন কাটাবে শত শত পরিবার।
নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চরমালিয়া, কায়েতমারা, সফিপুর ও চরমালিয়াসহ চারটি গ্রাম। ইতোমধ্যে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেছে। চার গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ আজ ঢাকা শহরের বস্তীবাসী হয়েছে।

নদীভাঙন মানুষ আজ রাস্তায় পাশে ঘর বানিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে। এলাকাবাসীর দুঃখ কোনো রাজনীতিবিদ তাদের দেখতে যায়নি। যে এলাকার সচিব, উপসচিব ও ডিসি থাকা সত্ত্বেও তাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি।
চরকালেখা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রাশেদ বেপারি বলেন, মুলাদী উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল এলাকা হলো চরকালেখা ইউনিয়ন। এ এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে জয়ন্তী নদী। এ নদী ভাঙনে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে কয়েক হাজার পরিবার। হাজার হাজার মেধাবীর স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাজার ও সড়কটি রক্ষা করার জন্য জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement