২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

জামালপুরে অনুমোদনহীন হাসপাতালের ছড়াছড়ি

বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নেই প্রতারিত হচ্ছেন রোগীরা
-

জামালপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এসব হাসপাতাল বা ক্লিনিক চালাচ্ছেন হাসপাতাল মালিকরা। যেখানে নেই কোনো জরুরি বিভাগ, রোগ নির্ণয়ের নেই মানসম্মত যন্ত্রপাতি ও ল্যাব টেকনোলজিস্ট। ধার করা চিকিৎসক দিয়ে চলছে জটিল রোগের অপারেশনসহ নানা রোগের চিকিৎসা। ফলে রোগীরা যেমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন তেমনি তাদের জীবনও ঝুঁকিতে পড়ছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে জানা যায়, জামালপুরে অনুমোদনপ্রাপ্ত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগস্টিক সেন্টারের সংখ্যা দেড় শতাধিক। তবে বাস্তবে এসবের সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, জেলা শহর ছাড়াও উপজেলার অলিগলিতে ডাক্তারদের বিভিন্ন ডিগ্রিসহ চোখ ধাঁধানো ব্যানার ডিজিটাল সাইনবোর্ড। প্রতিদিন চলছে মাইকে প্রচার-প্রচারণা। এসব দেখে গ্রামের সাধারণ মানুষ ফাঁদে আটকে যাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের দাবি, জেলা শহরের গুটিকয়েক হাসপাতাল ছাড়া অধিকাংশেই চলছে চিকিৎসার নামে গলাকাটা ব্যবসা। সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব হাসপাতালে গিয়ে অপচিকিৎসার জালে আটকা পড়ছেন রোগী ও স্বজনরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অলিগলিতে নানা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের বড় বড় ডিগ্রিধারী চিকিৎসক বসার কথা প্রচার করা হচ্ছে। স্বনামধন্য চিকিৎসকের নাম ভাঙিয়ে ও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে রোগীর পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে টাকা। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারি না থাকায় অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে।
বেশির ভাগ হাসপাতালে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের নাম সংবলিত সাইনবোর্ড টানানো থাকলেও তাদের অনেকেই বদলি হয়ে গেছেন ভিন্ন কোনো জেলায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মাসে দু-একবার এসে অপারেশন করে চলে যান।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে, জামালপুরের সাত উপজেলায় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১২৭টি। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত ২৩টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন রয়েছে ।
অনুমোদন ছাড়াই চলছে জামালপুর সদরের সূর্যের হাসি ক্লিনিক, মাস্টার ডায়াগনস্টিক, দানিয়ান ডায়াগনস্টিক, মা মেডিক্যাল হল, হাসিল ডায়াগনস্টিক, নিউ ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সরিষাবাড়ীর মাতৃছায়া জেনারেল হাসপাতাল, গোলাপ জেনারেল হাসপাতাল, প্রফেসর শহীদুর রহমান খান ডায়াবেটিক সেন্টার, আল মদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাদারগঞ্জের ইউনিক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফাতেমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দেওয়ানগঞ্জের এশিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জিহাদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মোল্লা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, ইসলামপুরের মা ডিজিটাল জেনারেল হাসপাতাল, হজরত শাহজামাল (রহ.) ডায়াবেটিস ও চক্ষু হাসপাতাল যমুনা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের ছোট ভাই মোরশেদুর রহমান মাসুম খানের ইসলামপুরে ১০ শয্যার যমুনা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধভাবে চলছে দুই বছর ধরে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে থাকায় মাসুম খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার অংশীদার রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে যেভাবে শত শত হাসপাতাল লাইসেন্স ছাড়া চলছে, তারাও সেভাবে চালাচ্ছেন।
মেলান্দহে ১০ শয্যার আলহাজ এম এ রশিদ জেনারেল হাসপাতাল প্রায় চার বছর ধরে চলছে অবৈধভাবে। হাসপাতালটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন নয়ন জানান, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না থাকায় আবেদন করেও দীর্ঘদিন লাইসেন্স পাচ্ছি না।
জামালপুর কলেজ রোডের আল মদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মালিক ডাক্তার আহম্মদ আলী আকন্দ। এখানে তিনি নিয়মিত যক্ষ্মা রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দেন । নিজে একজন চিকিৎসক হয়েও কেন অবৈধভাবে ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাচ্ছেন তার কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
জামালপুর ডায়াবেটিস জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ তারিকুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র পেতে পদে পদে হয়রানি হতে হয়। পরিবেশের ছাড়পত্র পেতে একটি নথিপত্র তৈরিতে তিন-চার লাখ টাকা খরচ করতে হয়। তিনি নিজেও অনেক দিন ঘুরে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে পরিবেশ ছাড়পত্র পেয়েছেন।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উত্তম কুমার সরকার বলেন, সদর উপজেলার যেসব চিকিৎসাকেন্দ্র স্বাস্থ্য বিভাগের নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে তাদের কার্যক্রম নিয়মিত পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।


আরো সংবাদ



premium cement