২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বস্তায় আদা চাষ শরীয়তপুরের কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা

সদর উপজেলার তুলাসার বস্তায় আদা চাষ পরিদর্শন করছেন শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন : নয়া দিগন্ত -

বাড়ির আঙ্গিনায় ফল বাগানে, সমন্বিত কৃষি খামারে, বাণিজ্যিক আম বাগানে, ড্রাগন বাগানে, পেঁপে বাগানে বোনাস ফসল হিসেবে বস্তায় আদা চাষ নতুন সম্ভাবনা জাগিয়েছে শরীয়তপুরের কৃষকদের মাঝে। আর প্রথম বছরেই এ জেলায় ৪২ হাজার ১৭৫টি বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ২৭ হাজার ৫০০ বস্তা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৬৭৫ বস্তা। আর এই ৪৫ হাজার বস্তায় ৩৫.৮৫ টন ফলন পাওয়ার আশা করছেন কৃষি বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, বস্তায় আদা চাষে কৃষকের পারিবারিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বোনাস আয়ও করতে পারবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও আদা চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলায় এর আগে কৃষক পর্যায়ে আদা চাষের প্রচলন ছিল না। আদা চাষের জন্য উঁচু আলো-ছায়া ঘেরা জমির প্রয়োজন হয়। আদার ফলন পেতে ৯ থেকে ১০ মাস লেগে যায় বলে কৃষকও আদা চাষে তেমন একটা আগ্রহী ছিলেন না। তবে উন্নতজাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রদর্শনী করে বস্তায় আদা চাষ শুরু করা হয়েছে। সমন্বিত কৃষি খামার, আম বাগান, ড্রাগন বাগান, বাড়ির আঙ্গিনায় ফল বাগানসহ উঁচু স্থানে বস্তায় আদা চাষের জন্য উপযোগী। বস্তায় আদা চাষের সুবিধা হলো কোনো ফসলী জমিতে বস্তায় আদা আবাদ করতে হবে না। কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনায় ফল বাগানে, সমন্বিত কৃষি খামারে, বাণিজ্যিক আম বাগানে, ড্রাগন বাগানে, পেঁপে বাগানে বস্তায় আদা চাষ করলে কৃষক বোনাস ফসল হিসেবে আদার ফলন ঘরে তুলতে পারবেন। এরইমধ্যে নড়িয়া উপজেলায় ১১ হাজার ৬৮০ বস্তা, ভেদরগঞ্জে ১০ হাজার ৩০০ বস্তা, জাজিরায় আট হাজার ২০০ বস্তা, সদরে ছয় হাজার ৩১৫ বস্তা ও গোসাইরহাট উপজেলায় পাঁচ হাজার ৬৮০ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের লতাবাগ গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, আমাদের এই এলাকায় আদা চাষের প্রচলন ছিল না। কৃষি অফিসে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর প্রদর্শনীর মাধ্যমে ৩০০ বস্তা ও নিজ উদ্যোগে ২৫০ বস্তায় আদা চাষ করেছি। আমার বাড়ির আঙ্গিনার ফল বাগান ও একটু ছায়াযুক্ত জায়গায় চাষ করেছি। যেখানে আগে কোনো ফসল করতম না সেখানে আদা চাষ করেছি। বস্তা প্রতি আমার খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আমি আশাকরি প্রতিবস্তা থেকে ৮০০ গ্রাম থেকে ১০ কেজি ফলন পাবো।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি গ্রামের সমন্বিত কৃষি খামারি গোলাম হোসেন বাবুল বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমি সমন্বিত কৃষি খামার শুরু করেছি। এ বছরই প্রথম কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় নিজ উদ্যোগে আম বাগান, পেয়ারা বাগান ও মালটা বাগানে বস্তায় আদা চাষ করেছি। এখানে আগে অন্য কোনো ফসল করতাম না। পরীক্ষামূলকভাবে ১৫০ বস্তা আদার চাষ করেছি। আদার অবস্থা বেশ ভালো। ফলন ও লাভজনক হলে আগামীতে পুরো বাগানে চাষ করব।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, শরীয়তপুরে আদা আবাদের প্রচলিত ছিল না। এবারই মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আমরা আদা আবাদ শুরু করেছি। কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও বস্তা প্রদান করেছি। এই পদ্ধতিতে আদা চাষ সম্প্রসারণে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছি। কৃষকরাও বেশ আগ্রহী। বস্তায় আদা চাষ করলে একটি বস্তায় ৫০ গ্রামের একটি আদা রোপণ করে ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে। এতে যেমন কৃষকের পারিবারিক চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি বোনাস আয়ও হবে। আমরা আশা করছি আগামীতে শরীয়তপুর জেলায় বস্তায় আদা চাষ অনেক বৃদ্ধি পাবে।


আরো সংবাদ



premium cement