২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ইউরোপপ্রবাসীসহ ৩ সহোদরের অর্থ-ব্যবসা-বাণিজ্য আত্মসাৎ

আত্মসাৎ করা সম্পদের বাজার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা
-

কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানাধীন কুর্শা গ্রামের মরহুম আলতাফ উদ্দিনের ছেলে ইদ্রিছ আলী তার তিন ভাই হাজী মো: সোনালী, হাজী মো: রূপালী ও ইউরোপ প্রবাসী প্রকৌশলী এমএ হাসিমের বিনিয়োগকৃত অর্থে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গড়ে তোলা বিশাল সম্পদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজে আত্মসাৎ করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে করগাওঁ গ্রামে হাজী মো: রূপালী ও এম এ হাসিমসহ স্থানীয় লোকদের ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ‘শাপলা ব্রিকস’ নামের ইটভাটাসহ আরো অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
জানা যায়, অতি দরিদ্র পরিবাবের কনিষ্ঠ ছেলে এম এ হাসিম ব্যাংক, স্বজন ও বন্ধুদের সহযোগিতায় ১৯৯২ সালে ইউরোপ পাড়ি দেন। ব্রিটেনে উচ্চশিক্ষা নিয়ে তিনি বর্তমানে জাতিঙ্ঘের একটা সংস্থার হেডকোয়ার্টার চাকরি করেন। দীর্ঘ ৩৩ বছর যাবত দেশের বাহিরে অবস্থান করে প্রবাসী জীবনে অর্জিত অর্থ তিনি ভাইদের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকে প্রেরণ করেন এবং ব্যাংক থেকে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করেন। তার টাকা ও ব্যাংকের বিনিয়োগ মূলে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করা হয় তার পরিচালনার ভার দেয়া হয় বড় ভাই ইদ্রিছ আলীর ওপর।
এদিকে ২০০৭ সালে তাদের বাবা ও সকল ভাইয়ের উপস্থিতিতে একটি পারিবারিক চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। চুক্তি মোতাবেক ব্যবসার লভ্যাংশের চার আনা হিস্যা (শতকরা ২৫ টাকা) স্ব-উদ্যোগে এম এ হাসিমের কাছে পৌঁছাইয়া দেয়ার ব্যাপারে ইদ্রিছ আলী লিখিতভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। মেসার্স আলতাফ অটো রাইস দিয়ে ব্যবসা শুরু করে পরবর্তীতে ইটভাটায় বিনিয়োগ এবং শেষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে অবস্থিত করগাঁও গামে ‘শাপলা ব্রিকস’ দিয়ে ইটভাটার ব্যবসা শুরু করেন। উল্লেখ্য, একই চুক্তি মূলে আরেক ভাই হাজী মো: রূপালী ‘আলতাফ ব্রিকস’ এর লভ্যাংশের চার আনা হিস্যা এম এ হাসিমকে দিয়ে যাচ্ছেন।
চুক্তিপত্রে শর্ত অনুযায়ী ইদ্রিস আলী ব্যবসার লভ্যাংশের চার আনা হিস্যা স্ব-উদ্যোগে পৌঁছানোর কথা থাকলেও কোনোরকমের হিসাব না দিয়েই মনগড়া ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। বিদেশ থেকে এম এ হাসিমের ফরেন রেমিট্যান্স ও ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট দিয়ে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজের দখলে নিয়ে ইদ্রিছ আলী বর্তমানে বিশাল সম্পদের মালিক। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, সমাজ, এলাকাবাসীর মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের জন্য বৈঠক করা হলেও কারো কোনো কথাই শুনছেন না; বরং ব্যবসার লভ্যাংশ দাবি করায় গত কয়েক বছর আগে ইদ্রিস আলী জোরপূর্বক এম এ হাসিমের বাড়ি ও জায়গা দখল করে নেন।
শুধু তাই নয়, ইদ্রিছ আলী তার অন্য দুই ভাইয়ের অর্থও আত্মসাৎ করেন বলে জানান মেজ ভাই হাজী মো: সোনালী। তিনি জানান, তার সাথে ইদ্রিস আলীর ‘মেসার্স সোনালী ব্রিকস’ নামীয় যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। তার দাবি ইদ্রিস আলীর কাছে তার তিন কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
অপর সহোদর হাজী রূপালীর কাছ থেকে ইদ্রিস আলী প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়েছিলেন ১৫ বছর আগে। ব্যাংকের প্রফিটসহ সেই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এক সালিশি দরবারের মাধ্যমে ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন ইদ্রিস আলী। হাজী রূপালী এখনো প্রায় তিন কোটি টাকা পাবেন হাজী ইদ্রিস আলীর কাছে।
ইদ্রিছ আলী তিন ভাইয়ের অর্থ আত্মসাৎ করে বিশাল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তার রয়েছে কিশোরগঞ্জ শহরে দুটি পাঁচতলা বাড়ি, কর্মুলীতে কয়েক কোটি টাকার জায়গা, নিজ এলাকায় ৭ তলা ফাউন্ডেশনসহ বিশাল জমি-জায়গা। সব মিলেয়ে তিনি আনুমানিক ৪০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। এসব সম্পদ নিজের নামে দলিল করলেও সকল সম্পদ ভাইদের যৌথ ব্যবসার লভ্যাংশের ফসল বলে দাবি করছেন তার অন্য তিন ভাই।
উল্লেখ্য, উভয় পক্ষের হিসাবনিকাশ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসার জন্য বিগত ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি তারিখে করগাওঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, এম এ হাসিম ইদ্রিস আলীর কাছে শুরু থেকে এ পর্যন্ত চার আনা অংশ পাবেন। চার আনা অংশ আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement