২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত

রিকশাচালক হাফিজুলের চিকিৎসায় দেরি

-

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন হাফিজুল ইসলাম (৩৫) নামের এক রিকশাচালক। তিনি দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ঢাকার পূর্ব বাড্ডার রূপনগর এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। হাফিজুল নাজিরপুর উপজেলার সেখমাটিয়া ইউনিয়নের চর রঘুনাথপুর গ্রামের আবু বক্কর সিকদারের ছেলে।
শহীদ হাফিজুলের বাবা আবু বক্কর সিকদার বলেন, হাফিজুল ২০ জুলাই আমাদের বাসা বাড্ডার রূপনগর এলাকা থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়। মধ্যবাড্ডা পর্যন্ত গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে বিজিবি এবং পুলিশের তুমুল সংঘর্ষের কবলে পড়ে। এ সময় বিজিবির গুলিতে তার বুক ঝাঁঝড়া হয়ে যায়। পরে কে যেন মোবাইলে আমাকে এ খবরটি জানায়।
তিনি আরো বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি ছাত্ররা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য বাড্ডা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা করতে অনাগ্রহ দেখায়। পরে একপর্যায়ে ছাত্রদের পীড়াপীড়িতে চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে হাফিজুলের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন। চিকিৎসা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পড়ই আমার ছেলে আমার কোলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
কান্নাজড়িত গলায় তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে শত বাধা ডিঙ্গিয়ে ছেলের লাশ রক্তমাখা অবস্থায়ই রিকশায় করে বাসায় নিয়ে আসি। লাশ বাড্ডার (বরকতপুর) কবরস্থানেই দাফন করা হয়। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমি বাড়িভিটা ছেড়ে ২১ বছর আগে ঢাকায় চলে আসি। বাড়িতে মাথা গোজার মত একটুও ঠাঁই নেই। আমি এখন বৃদ্ধ। আমার এই ছেলেটাই রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতো। তিনিই আমাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
বাবা বক্কর সিকদার বলেন, হাফিজুলের দু’টি সন্তান, স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ও প্রতিবন্ধী। তাদের বাকি জীবন কিভাবে কাটবে, কে নিবে তাদের দায়িত্ব। ছেলে তো কোনো রাজনীতি করেনি। দিনরাত হাড়ভাঙা খাটুনি করে সংসার চালাত। আল্লাহর রহমতে আমাদের সংসার সুন্দরভাবেই চলছিল। এখন আমার এই নাতি-নাতনীসহ পরিবারের কী উপায় হবে? আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ বলেন, আমাদের কাছে খবর এসেছে। আমরা যাচাই বাছাই করে সত্যতা পেয়েছি। ডিসির কাছে সব তথ্য পাঠানো হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement