২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মাগুরার ৫ এলএসডিতে বিপুল পরিমাণ চাল, ধান ও গমের হদিস নেই

-

আবারো মাগুরা জেলার পাঁচটি খাদ্য গুদামে ব্যাপক পরিমাণ ঘাটতি ধরা পড়েছে। খাদ্য অধিদফতরের অডিট টিমের কাছে ধরা পড়া ঘাটতি খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, ধান ও গম। যার সরকারি মূল্য ৫৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫২.৭৮ টাকা। মাগুরার চলতি দায়িত্বের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ মজুমদারের নেতৃত্বে এ সব চাল, ধান ও গম সরানো হয়েছে বলে খাদ্য বিভাগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি ধরা পড়ায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে বদলি করা হয়েছে। বদলির মাধ্যমে তিনি পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
মনোতোষ বিগত সরকারের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের মাধ্যমে বিধিবহির্ভূত মাগুরার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন মাগুরার তৎকালীন জেলা প্রশাসক খাদ্যমন্ত্রীর জামাই আবু নাসের বেগ। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হওয়ার পর রাতারাতি পাল্টে যান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের সন্তান যশোরে বসবাসকারী মনোতোষ মজুমদার। তিনি খুলনা বিভাগে হয়ে যান মুকুটহীন ‘সম্রাট’। শুরু করেন লুটপাট, বদলি, নিয়োগ ও টেন্ডারবাণিজ্য।
ক্ষমতার দাপটে সৎ অফিসার বলে পরিচিত তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা (আরসি ফুড) সেলিমুল আজমকে প্রত্যাহার এবং তার বিরুদ্ধে খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুলকে দিয়ে আইসিটি আইনে মামলাও করান তিনি।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মনোতোষ মাগুরার আড়পাড়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে ব্যবহার করে এক কোটি ১৫ লাখ টাকার চাল ও খালি বস্তা বাইরে বিক্রি করে দেয়ার সংবাদ সর্বপ্রথম নয়া দিগন্তে প্রকাশিত হলে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে মনোতোষ পার পেয়ে যান। ওই সময় তিনি নয়া দিগন্তকে লিগ্যাল নোটিশ দেন।
৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর মাগুরা জেলা প্রশাসক সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধনের জামাই আবু নাসেরকে প্রত্যাহার করা হয়। তার কিছু দিনের মধ্যে বদলি করা হয় মনোতোষকেও।
সূত্র জানিয়েছে, মনোতোষ জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক থাকা অবস্থায় দুই বছরে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন। সরকারিভাবে ৪৬ টাকা দরে চাল কেনা হলেও পুরনো চাল ৩০-৩২ টাকা দরে কিনে মাগুরার অধিকাংশ খাদ্য গুদামে ঢোকান।
অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বছরের বোরো মৌসুমে আড়পাড়া খাদ্য গুদামে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৩৪৯.৫৪, বিনোদপুর পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৭০৮.৮৪, মহম্মদপুর ছয় লাখ ছয় হাজার ২৮১.১০, মাগুরা সদর ২৪ লাখ দুই হাজার ২৯৬.০৫ ও শ্রীপুর খাদ্য গুদামে সাত লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৬.১৫ টাকার চাল, ধান ও গম কম কেনেন। খাদ্য অধিদফতরের সহকারী উপপরিচালক কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের নেতৃত্বাধীন অডিট টিমের কাছে এই চুরি ধরা পড়েছে। এখানেই শেষ না, মনোতোষ তার দুর্নীতির অন্যতম সহায়তাকারী মাগুরা অটো রাইসমিল মালিককে ধান ছাঁটাই কমিশন, পরিবহন বিলসহ মোট এক কোটি ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ টাকা পরিশোধ করেছেন। এই টাকা থেকে পাঁচ শতাংশ হারে আয়কর কর্তন করার কথা থাকলেও মনোতোষ কর্তন করেছেন ছয় লাখ দুই হাজার ৬৯২ টাকা। তিনি বিভিন্ন সময়ে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালান বলে ভুক্তভোগীরা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন।
এ ব্যাপারে মনোতোষ মজুমদার বলেন, ‘আমরা বাইরে থেকে কোনো পুরনো চাল কিনিনি। সরকারি বিভিন্ন গুদাম থেকে চাল এসেছে। সেখানে খারাপ থাকলে তার দায় আমার না।’


আরো সংবাদ



premium cement