২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পাপুয়া নিউগিনিতে ভয়াবহ ভুমিধসের পর শতশত মানুষ নিখোঁজ

শুক্রবার সকালে এই ভূমিধসের ঘটনাটি ঘটেছে - ছবি : সংগৃহীত

পাপুয়া নিউগিনিতে ভয়াবহ ভূমিধসে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে মরিয়া গ্রামবাসীরা ক্রমাগত পাথর ও কাদা খুঁড়ে চলেছেন। একইসাথে চলছে লাশ ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনার কাজও।

শুক্রবার পাপুয়া নিউগিনিতে ভূমিধসের পর ধ্বংসস্তূপের নিচে ৬৭০ জন আটকে পড়েছেন বলে জাতিসঙ্ঘের তরফ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

তবে ন্যাশনাল ডিজাস্টার সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আশঙ্কা করছেন, শুক্রবারের বিপর্যয়ে দুই হাজারের বেশি মানুষের জীবন্ত অবস্থাতেই কবর হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে ঘটা এই ধসে এনগা প্রদেশের একটি গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পাপুয়া নিউ গিনি অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে অবস্থিত একটি দ্বীপ এবং ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলটি এর উত্তরে এনগা প্রদেশের উচ্চভূমি এলাকায় অবস্থিত।

ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের কিছু জায়গায় ১০ মিটার (৩২ ফুট) গভীর ধ্বংসাবশেষ এবং পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধারকার্যের চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এখন পর্যন্ত ১২টি লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, ধ্বংসস্তূপে আটক এক দম্পতিকে পাথরের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের যে অংশ থেকে ধস শুরু হয়, তার প্রান্তিক অংশে ওই দম্পতির বাড়ি অবস্থিত হওয়ার কারণে তারা বেঁচে গিয়েছেন।

স্থানীয় সংবাদ চ্যানেল এনবিসি জানিয়েছে, উদ্ধারকর্মীরা সাহায্যের জন্য তাদের আর্তচিৎকার শুনতে পান। তারপরই পাথরের নিচে আটকে থাকা ওই দম্পতিকে উদ্ধার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী ও জরুরি সংস্থাগুলোকে রাজধানী পোর্ট মোর্সবি থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ওই এলাকায় পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত কাওকালাম গ্রামের স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা এখনো উদ্ধার অভিযানে কর্মকর্তাদের পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী কমিউনিটির নেতা ইগনাস নেম্বো বিবিসিকে জানিয়েছেন, স্থানীয়রা মনে করছেন, তাদের নিজেদের রক্ষার দায়িত্ব যেন তাদের ওপরেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা খালি হাতে বা বেলচার সাহায্যে ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা ব্যক্তিদের উদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিবিসির নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামকে এগনাস নেম্বো বলেছেন, প্রায় তিন-চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেক লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভূমিধসের কারণে এখনো চারিদিক ঢেকে গেছে এবং লোকজনের পক্ষে তাদের (ক্ষতিগ্রস্তদের) খুঁজে বের করার কাজ সত্যিই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা (সাধারণ মানুষ) সরকারের সমর্থন ও সাহায্যের জন্য আর্জি জানাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাতের কারণে তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলটিতে এখনো বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়ার কাজকে সরকারি সংস্থাগুলো অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

মানবিক ত্রাণ সহায়তা সংস্থা কেয়ার অস্ট্রেলিয়ার কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর জাস্টিন ম্যাকমাহন বলেছেন, এই মুহূর্তে, এই অঞ্চল বেশ অস্থিতিশীল এবং আবারো ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।

‘উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং ত্রাণকার্যের জন্য কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাই আমরা আপাতত বিষয়টি থেকে বাইরে থাকব বলে ঠিক করা হয়েছে।’

এর আগে নিউ গিনিতে জাতিসঙ্ঘের অভিবাসন সংস্থার এক কর্মকর্তা বিবিসির সাথে কথোপকথনের সময় উদ্ধারকাজের জটিলতার বিষয়টি বর্ণনা করেছিলেন।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের কর্মকর্তা সেরহান আকটোপ্রাক বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের চেষ্টায় বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শোকাহত স্বজনরা উদ্ধারকার্যের জন্য ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি তাদের প্রিয়জনের কাছে যেতে দিতে অনীহা প্রকাশের বিষয়ও।’

তিনি বলেছিলেন, লোকজন মাটির নিচে চাপা পড়া লাশগুলো সরাতে খনন লাঠি, কোদাল ইত্যাদি ব্যবহার করছে।

ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বড় বড় পাথর, গাছ এবং বাস্তুচ্যুত মাটি রয়েছে। কিছু অঞ্চলে এই ধ্বংসস্তূপ ১০ মিটার (৩২ ফুট) পর্যন্ত গভীর।

এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পাপুয়া নিউ গিনিতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রধান সেরহান ওকটোপ্রাক বলেছিলেন, এখনো ভূমিধস চলছে, যা উদ্ধারকারীদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। একইসাথে ওই অংশে অবিরাম পানি বয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ওই অঞ্চলে কর্মরত সমস্ত মানুষের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেড় শ’রও বেশি বাড়ি-ঘর মাটিচাপা পড়েছে এবং প্রায় ১ হাজার ২৫০ জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ঘটনাস্থলে থাকা উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, শহরে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে। এর ফলে, উদ্ধারকার্য ব্যাহত হচ্ছে। ভূমিধসে প্রায় ২০০ মিটার (৬৫০ ফুট) দৈর্ঘ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিজ ম্যাকমাহোন।

প্রাথমিক খবরে মৃতের সংখ্যা যা জানানো হয়েছিল সেই সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকে রোববার জাতিসঙ্ঘের পরিসংখ্যান সংক্রান্ত সংশোধনী প্রকাশের পর।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস ছিল।

কেয়ার অস্ট্রেলিয়া এজেন্সির কর্মকর্তারা মনে করেন, এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে, কারণ আশপাশের এলাকাগুলোতে উপজাতি সংঘাত থেকে অনেক মানুষ পালিয়ে এসেছে।

এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এক হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

অক্টোপ্রাক জবনিয়েছেন, যে জমিতে ফসল উৎপাদন ও জল সরবরাহ করা হতো, সেই জমি প্রায় পুরোপুরি ডুবে গিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উপজাতীয় সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া অনেক মানুষ বিধ্বস্ত কাওকালাম গ্রামে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

এনগা প্রদেশের রাজধানীর আরো উত্তরে অবস্থিত একটি সোনার খনির (পোরগেরা প্রকল্প) সাথে সংযোগকারী প্রধান রাস্তার মাঝখানে রয়েছে কাওকালাম গ্রামটি ।

পোরগেরা প্রকল্পটি কানাডিয়ান খনি সংস্থা, ব্যারিক গোল্ড কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত। শেয়ারহোল্ডারদের রিপোর্ট অনুসারে এই বছরের শুরুতে ওই খনিতে আবার কাজ শুরু হয়।

স্থানীয় কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা ওই পর্বতে ধসের জন্য গত কয়েক সপ্তাহের ভারী বৃষ্টিপাত এবং ওই অঞ্চলে অন্যান্য আর্দ্র পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। সূত্র : বিবিসি

 


আরো সংবাদ



premium cement