২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করবে অস্ট্রেলিয়া

বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের বিলটি উপস্থাপন করছেন যোগাযোগমন্ত্রী মিশেল রোল্যান্ড। - ছবি : ইউএনবি

অনলাইনে সন্তানদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাবা-মায়ের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে যুগান্তকারী এক আইন উত্থাপন করেছেন দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী মিশেল রোল্যান্ড। প্রস্তাবিত আইনে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে রোল্যান্ড বলেন, এই আইন পাস হলে ছোট ছোট বাচ্চাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা ও ব্যবহার আটকাতে ব্যর্থ হলে টিকটক, ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট, রেডিট, এক্স ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে পাঁচ কোটি (অস্ট্রেলিয়ান) ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

এ সময় তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিশুদের বেড়ে ওঠা যে অস্ট্রেলিয়ার সামাজিক বৈশিষ্ট নয়, এ বিষয়ে এই বিলের মাধ্যমে একটি নতুন আদর্শিক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা হবে। যাচাই না করা বিপুল পরিমাণ কনটেন্টের সংস্পর্শ থেকে শিশু-কিশোরদের বিরত রাখতে তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্যই কিছু করা উচিত। আর এ বিষয়টি দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।’

তবে বিষয়টি অন্যভাবে দেখছেন এক্সের মালিক ইলন মাস্ক। তিনি বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণে এটি (সরকারের) একটি গোপন কৌশল বলে মনে হচ্ছে।’

অবশ্য পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর বিলটি ব্যাপক রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছে। এটি আইনে পরিণত হলে সামাজিক মাধ্যমে বয়সের সীমাবদ্ধতা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে কাজ করার জন্য প্ল্যাটফর্মগুলো এক বছর সময় পাবে।

রোল্যান্ড বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার অনেক তরুণের জন্যই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ক্ষতিকর হতে পারে। ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ানদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই অনলাইনে মাদকের ব্যবহার, আত্মহত্যা কিংবা সহিংস কনটেন্ট দেখে থাকে। অনিরাপদ খাদ্যাভ্যাসের বিজ্ঞাপন দেখেছে তাদের এক-চতুর্থাংশ।’

‘সরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার ৯৫ শতাংশ সেবাদাতা অনলাইন নিরাপত্তাকে অভিভাবকত্বের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। নিজেদের প্ল্যাটফর্ম থেকে হওয়া ক্ষতির মোকাবিলায় তারা আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘তরুণদের শাস্তি দেয়া বা (অনলাইনে কর্মকাণ্ড থেকে) বিচ্ছিন্ন করে ফেলা নয়, বরং তাদের সুরক্ষার জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে। বাবা-মায়েদের উদ্দেশে বলতে চাই, সন্তানের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য আমরা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি।’

এরপরও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির শিশু কল্যাণ ও ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞরা।

তাদের আশঙ্কা, ইতোমধ্যে তরুণরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। এই আইন হলে তাদের সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে।

এ বিষয়ে রোলান্ডের বক্তব্য, সামাজিক মাধ্যমের ওপর এই আইন কার্যকর হলেও মেসেজিং সেবা ও অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মের ওপর কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে না। ফলে তরুণ ব্যবহারকারীদের যোগাযোগ, বিনোদন ও শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

‘আমরা বলছি না যে মেসেজিং অ্যাপ বা অনলাইন গেমিংয়ে কোনো ঝুঁকি নেই। কারণ এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীরাও নিজেদের মধ্যে ক্ষতিকর কনটেন্ট আদান-প্রদান করতে পারে। তবে (সামাজিক মাধ্যমের মতো) এখানে ব্যবহারকারীদের মনস্তত্ত্ব বুঝে অনবরত সেই ধরনের কনটেন্ট প্রদর্শনের মতো অ্যালগরিদম ব্যবহার হয় না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের বয়স অনুমান ও যাচাইয়ে গত সপ্তাহে ব্রিটিশ কোম্পানি ‘এজ চেক সার্টিফিকেশন স্কিম’-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার থেকে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের বিরত রাখার পাশাপাশি ১৮ বছরের কম বয়সীদের অনলাইন পর্নোগ্রাফি থেকে বিরত রাখার উপায়ও খুঁজছে অস্ট্রেলিয়া।

রোল্যান্ডের উত্থাপিত বিলটির ওপর আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে বলে আশা করছে অস্ট্রেলিয়ার ডিজিটাল শিল্পের মুখপাত্র ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ ইনকর্পোরেটেড (ডিআইজিআই)। সংস্থাটির দাবি, এত কম সময়ে যদি বিলটি পাস হয়ে যায়, তাহলে এটি নিয়ে যতটা আলোচনা-সমালোচনার প্রয়োজন তা হবে না।

মূলধারার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে এই নিষেধাজ্ঞা তরুণদের অন্ধকার ও কম নিরাপদ অনলাইন স্পেসে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ডিআইজিআই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনিতা বোস।

তিনি বলেছেন, মূলধারার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে নানা নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়। ফলে সেগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকে তরুণদের সরিয়ে দিলে তারা অরক্ষিত ও অনিরাপদ প্ল্যাটফর্মগুলোর দিকে ঝুঁকবে।

‘কিশোর-কিশোরীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে সরিয়ে রাখাই এ ধরনের ভোঁতা নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য, যা প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে মোটেও উৎসাহিত করবে না। তার চেয়ে তরুণদের প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারের সুযোগ দিয়েই কিভাবে তাদের জন্য এগুলো আরো নিরাপদ করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দেয়া উচিৎ।’

সূত্র : এপি/ ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement