২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অলিম্পিকে আরচারীই বাংলাদেশের ভরসা?

- ছবি : সংগৃহীত

সেই ১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস গেমস দিয়ে অলিম্পিকে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের। আর প্যারালম্পিকে লাল-সবুজদের প্রথম উপস্থিতি ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিকে। এরপর বেইজিং প্যারালম্পিকেও দল পাঠায় ন্যাশনাল প্যারালম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশ। তবে এই দুই প্যারালম্পিকে বাংলাদেশের দুই অ্যাথলেটের টাইমিং রেকর্ডের জন্ম দিয়েছে।

গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নেন মাকসুদ। এতে দৌড় শেষ করতে তিনি ব্যয় করেন ১ মিনিট ১৫.৯০ সেকেন্ড। এটিই প্যারালম্পিক গেমসের ইতিহাসে ৪০০ মিটারে সবচেয়ে বেশী টাইমিংয়ে দৌড় শেষ করা। সে সাথে মাকসুদই হলেন প্রথম প্যারা অলিম্পিয়ান, যিনি ১ মিনিটের বেশী সময় নিয়ে ৪০০ মিটারের ফিনিশিং টাচে পৌঁছিয়েছেন। চার বছর পর বেইজিংয়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন আবদুল কাদের সুমন। তার ১৬.৬৩ সেকেন্ডের টাইমিংও ১০০ মিটারে অলিম্পিক ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে টাইমিং। পরে ২০১২ লন্ডন, ২০১৬ রিও এবং ২০২১ টোকিও প্যারালম্পিকে বাংলাদেশ অংশ নেয়নি। এবার প্যারিসের প্যারালম্পিকে দুই আরচার ঝুমা আক্তার এবং আল আমিন হোসেন অংশ নেন। ঝুমা এসেছেন সরাসরি কোয়ালিফাই করে। আল আমিন পান বাইপার টাইট।

দুই অলিম্পিকেই খেলে সরাসরি কোয়ালিফাই করার ঘটনা ঘটেছে আরচারীতেই। এর আগে ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের গলফার সিদ্দিকুর রহমান সরাসরি খেলার ছাড়পত্র পান। তা তার র‌্যাংকিং ভালো থাকার কারণে। তবে প্রতিযোগিতামূলক আসরে ম্যাচ জিতে অলিম্পিক গেমসে কোয়ালিফাই করার ঘটনা বাংলাদেশ আরচাররাই করেছেন তিন বার। ২০১৯ সালে রোমান সানা এবং এবার সাগর ইসলাম ও ঝুমা আক্তার। এই তিন জনের মধ্যে নিজেদের রেকর্ড বুকে নিতে পেয়েছেন রোমান সানা এবং ঝুমাই। টোকিও অলিম্পিকে রিকার্ভ এককে রোমান সানা প্রথম ইলিমিনেশন রাউন্ডে পরাজিত করেন বৃটিশ আরচারকে। অলিম্পিকে এটাই প্রথম কোনো জয় বাংলাদেশী কোনো খেলোয়াড়ের। আর এবার ঝুমা আক্তার প্রথম কোনো অলিম্পিক গেমসের ম্যাচকে টাইব্রেকার পর্যন্ত নিতে পেরেছেন। পুরুষদের প্যারা অলিম্পিকের ম্যাচে এক রাউন্ডের খেলাটাই করা আরেক আরচার আল আমিনের। এবার প্যারিসে তৃতীয় রাউন্ডে তার ২৪-২৪ স্কোর ছিল মেক্সিকোর প্রতিপক্ষের বিপক্ষে।

অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, শ্যুটিং, আরচারী, জিমন্যাস্টিক্স, গলফ এই ডিসিপ্লিনেই অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা। পদকের স্বপ্ন না থাকলেও ভালো করার জন্যই যুক্তরাজ্য থেকে স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান, সাঁতারু জুনাইনা আহমেদ, মার্কিন যুক্তরাস্ট্র থেকে জিমন্যাস্ট সাইক সিজারকে এনে অলিম্পিকের মঞ্চে নামানো হয়। তবে কেউই সে অর্থে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।

টিম ইভেন্টে এখনো অলিম্পিকে খেলার মতো পর্যায়ে যায়নি। ফলে এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত ইভেন্টই ভরসা। আর এই ভরসার জায়গা ক্রমশ: পোক্ত করছেন আরচাররা। টানা তিনটি অলিম্পিকে বাংলাদেশের তীরন্দাজরাই ওয়াইল্ড কার্ডের গন্ডী পেরিয়ে সরাসরি কোয়ালিফাই করছেন। অন্যদের চিরাচরিত হিটেই বাদ পড়ার কাহিনীতে ব্যস্ত রেখে তারা ম্যাচ জিতছেন বা রাউন্ডে জয়ের মুখ দেখছেন। টাই পর্যন্ত করে ছাড়ছেন।

তবে সুস্থদের অলিম্পিকের তুলনায় প্যারালস্পিকে আরচারীতে বাংলাদেশের ভালো করা সম্ভব। কারণ এখনো প্যারাতে সেভাবে শক্ত আরচার নেই বিভিন্ন দেশে মনে করেন বাংলাদেশ কোচ নিশিথ দাস। একই সাথে আরো বেশি মাত্রায় প্যারালম্পিকে বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদ পাঠানো যেতে পারে।

প্যারিসে বাংলাদেশ প্যারালম্পিক দলের সেফ ডি মিশন এবং ন্যাশনাল প্যারালম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের সহসভাপতি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) ফখরুল হায়দার জানান, আমরা দু’জন করে অ্যাথলেট ও সাঁতারুকে খুঁজে বের করে তাদের ট্রেনিংও করিয়েছিলাম। কিন্তু তারা র‌্যাংকিংয়ে আসতে পারেনি। তাই খেলার সুযোগই পায়নি। আবার বিজ্ঞপান দিয়েও পাওয়া যায়নি বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদ।

তিনি যোগ করেন, প্যারালম্পিকে বাংলাদেশের আরচারীর মতো শ্যুটিংয়েও ভালো করা সম্ভব। শ্যুটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইনিতখাব হামিদ অপু বলেছিলেন, তাদের কাছে প্যারা শুটার আছে। তবে তাদের নিয়ে কোনো টুর্নামেন্ট করতে পারেনি। তবে আমি ঝুমাকে নিয়ে আশাবাদী। তার ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল। এবার প্রথম রাউন্ডে সে একটি ৭ স্কোর না করলে সেই জিতে পরের রাউন্ডে যেত।

অন্যদিকে থাইল্যান্ডে কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলতে যাওয়ার জন্য ভিসা পাননি ব্যাডমিন্টনের খেলোয়াড়রা। ফলে তাদেরও সুযোগ নস্ট হয় প্যারিসে আসার।


আরো সংবাদ



premium cement