২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

১১ অলিম্পিক্স পদক! ‘বুড়ি’-দের নিয়ে ইতিহাস বাইলসের

১১ অলিম্পিক্স পদক! ‘বুড়ি’-দের নিয়ে ইতিহাস বাইলসের - ছবি : সংগৃহীত

মহিলাদের জিমন্যাস্টিক্সের দলগত ফাইনালে সোনা জেতার পরে তখন দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে উল্লাস করছেন আমেরিকার পাঁচ জিমন্যাস্ট। সেই পাঁচজনের মধ্যে একমাত্র সিমোন বাইলসের খেলা নিশ্চিত ছিল এবারের অলিম্পিক্সে। বাকি চারজনের খেলার কথাই ছিল না। অথচ মাত্র ৭২ ঘণ্টায় বদলে যায় গোটা দল। আধুনিক যুগে আমেরিকার বয়স্কতম জিমন্যাস্টিক্স দল নামে খেলতে। সেই দলই বাজিমাত করে। বাইলসের নেতৃত্বে। তিন বছর আগে টোকিয়োয় বাইলস ছেড়ে চলে যাওয়ায় যে স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছিল, তা পূরণ করেন সুনিসা লি, জর্ডন চিলেস, জেড ক্যারেরা।

দলগত প্রতিযোগিতার ফাইনালে ভল্ট, ব্যালান্স বিম, আনইভেন বার ও ফ্লোর- চারটি রোটেশনেই নামেন বাইলস ও সুনিসা। জর্ডন ভল্ট ছাড়া বাকি তিনটি রোটেশনে নামেন। ক্যারে নামেন শুধু ভল্টে। রিভেরা রিজার্ভেই ছিলেন।

শুধু দলগত প্রতিযোগিতায় নয়, অলরাউন্ড ফাইনালেও সোনা জিতেছেন বাইলস। ভল্ট ও ফ্লোরে সবচেয়ে বেশি স্কোর করেছেন। বাইলসের পাশাপাশি অলরাউন্ড ইভেন্টে নিজের দ্বিতীয় পদক জিতেছেন সুনিসা। টোকিওয় সোনার পরে প্যারিসে ব্রোঞ্জ জিতেছেন তিনি। দুই অভিজ্ঞ তারকা দাপট দেখাচ্ছেন প্যারিসে। ভল্টেও সোনা জিতেছেন বাইলস। প্যারিসে এটি তার তিন নম্বর সোনা। ব্যালান্স বিমের ফাইনালে অবশ্য হতাশ করেছেন বাইলস। বিম থেকে পড়ে যান তিনি। ফলে শেষ করেন পঞ্চম স্থানে। ফ্লোর এক্সারসাইজে জোর লড়াই হয় ব্রাজিলের রেবেকা আনদ্রাদের সাথে। শেষ পর্যন্ত ১৪.১৩৩ স্কোর করে রুপা পান বাইলস।

অলিম্পিক্সে সব মিলিয়ে ১১টি পদক জিতলেন বাইলস। রিয়োয় জিতেছিলেন পাঁচটি। টোকিওয় দু’টি। এই অলিম্পিক্সে জিতেছেন চারটি পদক। তার মধ্যে তিনটি সোনা। এই বয়সেও দাপট দেখাচ্ছেন আমেরিকার জিমন্যাস্ট।

এবারের অলিম্পিক্সে বাইলসের বয়স ২৭ বছর। আধুনিক যুগে অলিম্পিক্সে নামা আমেরিকার বয়স্কতম জিমন্যাস্ট। ক্যারের বয়স ২৪ বছর। জর্ডনের ২৩ বছর। সুনিসার ২১ বছর। রিজার্ভে থেকে হেজলি রিভেরার বয়স একমাত্র কম, ১৬ বছর। দলের গড় বয়স ২২ বছর ৬ মাস। সেই রিভেরারও খেলার কথা ছিল না এ বারের অলিম্পিক্সে। কিন্তু অলিম্পিক্সের ঠিক আগেই ছবিটা বদলে যায়।

গতবার টোকিও অলিম্পিক্সে মাঝপথে নাম তুলে নিয়েছিলেন বাইলস। মানসিক সমস্যা হচ্ছিল তার। মনে আতঙ্ক বাসা বেঁধেছিল। ঘরবন্দি করে নিয়েছিলেন নিজেকে। বাইলস আবার ফিরবেন কি না তা নিশ্চিত ছিল না। টোকিওয় অলরাউন্ড ফাইনালে সোনাজয়ী সুনিসাও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। সেই কারণে জিমন্যাস্টদের নতুন প্রজন্ম তৈরি করছিল আমেরিকা। প্যারিসের দৌড়ে এগিয়ে ছিসেন স্কাই ব্লেকলি, শিলেস জোনস, জোসেলিন রবারসন ও লিয়ানে ওং। রিজার্ভে ছিলেন কাইলা ডিসেলো। নতুন প্রজন্ম নজর কাড়ছিল। বাইলসদের থেকে ব্যাটন নিতে তৈরি ছিলেন তারা।

প্যারিসের আগে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন বাইলস। তিনি অনুশীলন শুরু করেন। ধীরে ধীরে ফর্মে ফেরেন। আত্মবিশ্বাস বাড়ে তার। অলিম্পিক্সের আগে বিশ্ব জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতায় সোনা জেতেন বাইলস। ইউএস ক্ল্যাসিকসেও নজর কাড়েন তিনি। তার পরেই আমেরিকার দলে ঢোকেন বাইলস। অলিম্পিক্সের আগে শেষ প্রতিযোগিতায় তার নেতৃত্বেই তরুণী জিমন্যাস্টদের দল খেলতে নামে। তখনও পর্যন্ত ঠিক ছিল, ব্লেকলি, জোনস, রবারসনেরাই প্যারিসে খেলবেন। কিন্তু অলিম্পিক্সের ঠিক আগে অঘটন ঘটে আমেরিকার মহিলাদের জিমন্যাস্টিক্সে।

অনুশীলনের সময় পায়ের পেশি ছিঁড়ে যায় ব্লেকলির। তার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চোট পান আরো তিন জিমন্যাস্ট। ভল্ট দিতে গিয়ে পায়ের পেশি ছিঁড়ে যায় ডিসেলোর। হাঁটুর চোটে নাম তুলে নেন জোনস। চোট লাগে রবারসনেরও। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চার জিমন্যাস্ট চোটে ছিটকে য়াওয়ায় চাপে পড়ে যায় আমেরিকা। তখনই তাদের নজর যায় প্রাক্তনদের দিকে। জিমন্যাস্টিক্সে পিছিয়ে যাওয়া সুনিসা, জর্ডন ও ক্যারে তার আগেই ফর্মে ফিরতে শুরু করেছিলেন। আমেরিকার বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় নজর কাড়েন তারা।

ফলে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় আমেরিকার জিমন্যাস্টিক্স সংস্থাকে। বাইলসের পুরনো সতীর্থ সুনিসা, জর্ডন ও ক্যারেকে ফিরিয়ে আনা হয় দলে। রিজার্ভে নেয়া হয় সিনিয়র দলের হয়ে একটিও প্রতিযোগিতা না খেলা রিভেরাকে। ফলে দলগত প্রতিযোগিতায় টোকিওর দলই নামায় আমেরিকা।

প্যারিসকে টোকিয়োর বদলার মঞ্চ হিসেবে দেখছিলেন বাইলসেরা। দলের সাথে থাকা চেলসি মেমেল সংবাদমাধ্যমে বলেন, 'আমার মনে হয় সবকিছু আগে থেকে পরিকল্পনা করা যায় না। কিছু কিছু নিয়তিতে লেখা থাকে। প্যারিসে নামার আগে ওরা বলছিল, এটা বদলার মঞ্চ। ওরা তা করে দেখাল।' তাদের যে জবাব দেয়ার ছিল, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বাইলস। দলগত সোনা জিতে তিনি বলেন, 'আমার মনে হয় টোকিয়োর পরে সকলেরই জবাব দেওয়ার ছিল। সেটা আমাদের খেলায় দেখা গিয়েছে।'

বাইলসের হাত ধরে হঠাৎ করেই যেন আমেরিকার মহিলাদের জিমন্যাস্টিক্সে বদল এসেছে। কয়েক বছর আগেও যে কর্মকর্তারা তারুণ্যকে এগিয়ে রাখছিলেন তারাই এখন অভিজ্ঞতার প্রশংসা করছেন। বাইলসদের হাত ধরে এখন থেকেই চার বছর পরের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন আমেরিকাবাসী। ২০২৮ সালে নিজেদের ঘরে অলিম্পিক্স। সেখানেও হয়তো জিমন্যাস্টিক্সের দলে সুনিসা, জর্ডন, ক্যারেদেরই দেখা যাবে। নেতৃত্ব দেবেন ৩১ বছরের বাইলস। বয়স্ক দলের হাত ধরে আবার হয়তো অলিম্পিক্সে আসবে সোনা।


আরো সংবাদ



premium cement