২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

পেশাদার বক্সিংয়ে বদলে যাওয়া জীবন

- ছবি : নয়া দিগন্ত

‘আমরা এখন ভালোই আছি। মাসে যেমন বেতন পাই। তেমনি ম্যাচ প্রতি পয়সা।’ এক সুরে কথা বলে গেলেন সাবিউল ইসলাম, মোহন আলী,মোতালেব হোসেনরা। এরা বাংলাদেশের পেশাদার বক্সার। আগে ছিলেন অ্যামেচার বক্সার। যা অলিম্পিক ইভেন্ট। জিতলে পদক। সাথে হয়তো পুরস্কার হিসেবে মিলতে পারে টানা।

অন্যদিকে পেশাদার বক্সিংয়ে অর্থের ঝনঝনানি। খেলতে নামলেই টাকা। আর জিতলে সে অর্থের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই একে একে অ্যামেচার বক্সিং ছেড়ে পেশাদার বক্সিংয়ে ছুটছেন বাংলাদেশী বক্সাররা। শুধু পুরুষরাই নন। মহিলা বক্সাররাও এখন পেশাদারিত্বে। খেলছেন একের পর এক আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আর ভান্ডারে জমা করছেন হাজার ছাড়িয়ে লাখ টাকা।

সাবেক কিক বক্সিংয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশী বংশোদ্ভত ব্রিটিশ নাগরিক আলী জ্যাকো বাংলাদেশে এই খেলা চালুর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তখনকার বাংলাদেশ অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস খানসহ সংশ্লিষ্টদের বাধায় বিরক্ত হয়ে চেষ্টায় ইস্তফা দেন আলী জ্যাকো।

এরপর প্রবল বাধা ডিঙ্গিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েই পেশাদার বক্সিং চালু করেন আসাদুজ্জামান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক এই বক্সারকে প্রথমে স্বাগতই জানান বক্সিং ফেডারেশনের সেক্রেটারি মাজহারুল ইসলাম তুহিন। পরে তিনিও আসাদুজ্জামানের বিপক্ষে চলে যান। শেষ পর্যন্ত বিকেএসপির সাবেক ডিজি এবং বিকেএসপির বক্সিং কোচের সহায়তায় ২০২০ সালে নভেম্বরে এদেশে যাত্রা শুরু পেশাদার বক্সিংয়ের। এখন সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ৫ শতাধিক পেশাদার বক্সার।

উল্লেখ্য, অ্যামেচার বক্সিংয়ে ম্যাচের সময় মুখে-মাথায় হেড গার্ড থাকে। পেশাদার বক্সিংয়ে খালি মাথা-আর মুখে চলে ঘুষির বন্যা।

এই পেশাদার বক্সিংয়ের কল্যাণেই আলী জ্যাকোর হাত ধরে ইংল্যান্ড সফর করেছিলেন সুর কৃষ্ণ চাকমা। আর এখন রিং মাতাচ্ছেন মোতালেব, মোহন, সাবিউলরা। সাবিউল অবশ্য কখনোই বাংলাদেশ অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশনের অধীনে বক্সিংয়ে লড়েননি। বিভাগীয় পর্যায়ে খেলেছেন।

তার মতে, ‘অ্যামেচার খেললে কোনো টাকা পয়সা মেলে না। তবে পেশাদার বক্সিংয়ে প্রতি ম্যাচেই টাকা। ম্যাচ প্রতি ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়।’

তিনি বলেন, প্রতি বছর আমরা ১০টির মতো ম্যাচ পাই। যদি বাইরের দেশের ভালো প্রতিযোগীর বিপক্ষে ম্যাচ হয় তাহলে প্রাইজমানি এক লাখ টাকার বেশীও ধরা হয়। সেখান থেকে শতাংশ অনুযায়ী টাকা পাই।’ তিনি এ পর্যন্ত এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন। ২০২১ সালে পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লেখান সাবিউল। যদিও ২০১৯ সালে রাজশাহীর হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে অ্যামেচার বক্সিংয়ে লড়েন রাজশাহীর এই ছেলে। এ পর্যন্ত তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতেছেন। এর মধ্যে দু’জয় ভারতীয় বক্সারের বিপক্ষে।

রাজশাহীর অপর ছেলে মোহন আলী। তার মতে, ‘অ্যামেচারে বক্সিং করলে বড় জোড় একটি পদক পাওয়া যায়। টাকাতো নেই। কিন্তু পেশাদার বক্সিংয়ে যে টাকা পাওয়া যায় তাতে ডাল ভাততো জোটে।’ ২০২১ সালে বাংলাদেশ গেমসে বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন মোহন। এরপর তিনি পেশাদার বক্সিংয়ে।

তিনি জানান, ‘আমি এখানে বলতে পারেন চাকরি করি। মাসে যেমন বেতন পাই। সাথে ম্যাচ খেললেও টাকা। খেলা থেকে ২০ শতাংশ টাকা পাই।’ মোহনের মতে , আরো আগেই এই পেশাদার বক্সিং শুরু হওয়া দরকার ছিল। তাহলে আরো উন্নতি হতো এই খেলার।

ডব্লিউবি -সি বেল্টধারী এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মাত্র একজনই বক্সার। তিনি নওগাঁর ছেলে মোতালেব। তিনি যদি থ্রি-স্টার ক্যাটাগরির হতে পারেন তাহলে ম্যাচ প্রতি আয় হবে তিন থেকে চার লাখ টাকা করবেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চাকরি ছেড়ে তিনি এখন দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পেশাদার বক্সার। আর্মিতে এসেই বক্সিংয়ে হাতে খড়ি। জাতীয় বক্সিংয়ে না খেললেও পেশাদার বক্সিংয়ে খেলে তিনি মাসে ২১ হাজার টাকা পান। এছাড়া ম্যাচ প্রতি টাকাতো আছেই।

তার মতে, ‘এই বক্সিংয়ে আসার ফলেই আমি ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ভারত সফর করেছেন। এর মধ্যে ৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতেছি। ভালো অর্থও আয় করেছি।’

এই মোতালেবের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছেন আসাদুজ্জামান। আসাদুজ্জামানের মতে, পেশাদার বক্সিং থেকে দেশের জন্য অ্যামেচার বক্সিংয়ে খেলতে পারবেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গেমসে। যদিও বক্সিং ফেডারেশন ভুল ধারণা পোষণ করছে বলে মন্তব্য তার।

শুধু ঢাকাতেই নয়। বিভিন্ন জেলাতেও হচ্ছে এই বক্সিং। ঢাকার আফতাব নগরে তাদের নিজস্ব রিং আছে। আমুলিয়াকে নতুন ভেন্যু করার প্রক্রিয়া চলছে। জানান প্রতিষ্ঠান আসাদুজ্জামান। বক্সিং ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞায় ভালো বক্সাররা খেলতে পারছেন না পেশাদার বক্সিংয়ে। তাই অন্য খেলোয়াড়দের খুঁজে এনে তারপর ট্রেনিং করানো হচ্ছে। অবশ্য রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের এখন রাস্তা খুলেছে।

এরই মধ্যে মোতালেব, রবিন মিয়া, আবু তালহা, সাবিউল, আবু তালহা এখন আলো ছড়িয়েছেন। নারী বক্সাররাও অংশ নিচ্ছেন এই পেশাদার বক্সিংয়ে। এর মধ্যে তানজিলা, রত্না, খুকুমনি, শামীমাদের নিয়ে আশা দেখছেন কর্মকর্তারা।


আরো সংবাদ



premium cement