২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চীনে উইঘুরদের যেভাবে অপরাধ স্বীকারে বাধ্য করা হয়

চীনে উইঘুরদের যেভাবে অপরাধ স্বীকারে বাধ্য করা হয়
চীনে উইঘুরদের যেভাবে অপরাধ স্বীকারে বাধ্য করা হয় - ছবি : সংগৃহীত

চীনে অন্তত ১০ লাখ উইঘুর মুসলমানকে আটকে রাখা হয়েছে। আধুনিক বৃত্তিমূলক শিক্ষার নামে চলছে নির্যাতন। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়া তাদের অপরাধ স্বীকারে বাধ্য করার তথ্যও উঠে এসেছে ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।

চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে ঠিক কতজন উইঘুর মুসলমানকে আটকে রাখা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা কারো জানা নেই। তবে নানা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও খবর অনুযায়ী সংখ্যাটা দশ লাখের কম হবে না।

২০০৯ সালে ভয়াবহ এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকুই শহরে। তাতে কমপক্ষে ১৪০ জন নিহত এবং কয়েকশ' মানুষ আহত হয়েছিল। অসংখ্য ঘর-বাড়ি জ্বালানো হয়েছিল সেই সংঘর্ষে, ধংস হয়েছিল অনেক রাষ্ট্রীয় সম্পদ।

এর পাঁচ বছর পর, অর্থাৎ ২০১৪ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় ৩১ জন। উইঘুর মুসলমানদের ওপর সরকারের কঠোর নজরদারি এবং দমন-পীড়ন-নির্যাতনের শুরু তখন থেকেই।

চীন সরকারের দাবি, সব করা হচ্ছে ইসলামি উগ্রবাদ এবং উইঘুরদের মনোজগত থেকে উগ্রবাদ নিশ্চিহ্ন করতে। সেই লক্ষ্যে শিনজিয়াং প্রদেশে খোলা হয় উইঘুর মুসলমানদের ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষাদান ক্যাম্প’। চীন সরকার বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের কথা বললেও উইঘুর, বিশ্বের বিভি্ন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম মনে করে ওই ক্যাম্পে উইঘুরদের আটকে রেখে আসলে একটি সম্প্রদায়কে অস্তিত্বের সংকটে ফেলা হচ্ছে।

ডয়চে ভেলের বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এমন দাবি। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে শিনজিয়াং-এ দীর্ঘদিন আটক থাকা চারজন উইঘুরের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেল। চারজনই কাজাখ বংশোদ্ভূত। শিনজিয়াং থেকে মুক্তি পেয়ে এই মুহূর্তে চীনের প্রতিবেশী মুসলিম প্রধান দেশ কাজাখস্তানেই রয়েছেন তারা।

অপরাধ স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়
কাজাখস্তানে ফিরে যাওয়া ওই চার উইঘুর মুসলমানের দুজন পুরুষ, দুজন নারী। টানা কয়েক সপ্তাহ তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিনজিয়াংয়ে আটকদের কোনো-না-কোনোভাবে অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

৭৫টি ছোট-বড় অপরাধের তালিকা ধরিয়ে তার অন্তত একটি বা একাধিক অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নির্দিষ্ট কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেয় কর্তৃপক্ষ। চারজনই দাবি করেন, বিদেশে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা, বিদেশে যাওয়া থেকে শুরু করে উগ্রঙ্গিবাদে জড়িত সন্দেহ করার মতো ‘অপরাধ’ হিসেবে নিয়মিত নামাজ পড়া, মেয়েদের হিজাব পরতে বাধ্য করার মতো বিষয়গুলোরও উল্লেখ আছে ওই তালিকায়।

তালিকা থেকে কিছু অপরাধে টিক চিহ্ন দিয়ে তাতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করা ব্যক্তিকে অনেক ক্ষেত্রে অল্প সাজা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। ডয়েচে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়া চার উইঘুরের তিনজনই সেভাবে কাজাখস্তানে ফিরে যাবার সুযোগ পেয়েছেন।

এক সাহসী উইঘুর
তবে চারজনের মধ্যে একজন ভীষণ সাহসী। তিনি জানান, বারবার চাপ দেয়া সত্ত্বেও তিনি সেই তালিকার কোনো অপরাধেই জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি। যতবার চাপ এসেছে ততবারই বলেছেন, ‘‘আমি নির্দোষ।'' অনেকেই বলেছিলেন, তাতে বিপদ হতে পারে, আসতে পারে দীর্ঘ কারাবাসের রায়। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। একদিন হঠাৎই আসে মুক্তির খবর।

অল্প শাস্তি সৌভাগ্যের
কাজাখস্তানের জনগণ চীনে আটক স্বজনদের মুক্তির দাবি তোলায় এবং কাজাখ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই মূলত কাজাখ উইঘুরদের ছেড়ে দিতে শুরু করে চীন সরকার।

ডয়চে ভেলেকে এক উইঘুর নারী বলেন, তালিকায় দু-একটা টিক চিহ্ন দিয়ে তিনি যখন স্বল্প মেয়াদের কারাবাস শেষে মুক্তির রায় পান, অন্যদের জন্য খারাপ লাগছিল তার। তিনি বলেন, যাদের দীর্ঘ কারাবাসের আদেশ হয়েছিল তাদের ‘‘চোখের পানি মুছতে দেখে, কাঁদতে দেখে মন খুব খারাপ হয়েছিল।''

তবে তিনি এ-ও জানান, নিজের স্বল্পমেয়াদি কারাদণ্ড হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন, কারণ, ‘‘আমি তো সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, মনে হচ্ছিল আর দু বছর সেখানে থাকতে হলে আমি মারা যাবো।” ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement