২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঈদ উপলক্ষে আফগান সরকারের সাথে অস্ত্র-বিরতিতে গেল তালেবান

- ছবি : সংগৃহীত

ঈদ উপলক্ষে আফগান সরকারের সাথে তিন দিনের অস্ত্র বিরতি ঘোষণা করেছে তালেবানরা। দেশটিতে রোববার ঈদের দিন থেকে এই অস্ত্র-বিরতি শুরু হবে। সম্প্রতি সপ্তাহ গুলোতে সরকারি বাহিনীর উপর এই গোষ্ঠীর হামলা জোরদার হওয়ার মধ্যেই এই ঘোষণা আসলো।

প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে তার সেনারা অস্ত্র-বিরতির শর্ত মেনে চলবে। এই তিন দিনের অস্ত্র-বিরতি ভবিষ্যতে দীর্ঘ মেয়াদে সহিংসতা কমিয়ে আনার আশা জাগিয়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু ২০১৮ সালের ঈদের সময়ও এ ধরণের ঘোষণা এসেছিল এবং তখন আসলে সেটি আর দীর্ঘায়িত হয়নি।

"কোথাও কোন শত্রু ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো যাবে না। তবে যদি শত্রুপক্ষ হামলা চালায় তখন নিজেদের রক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে," শনিবার নিজের দলের সদস্যদের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছেন তালেবানদের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ।

তিনি আরো বলেন, অস্ত্র-বিরতি শুধুমাত্র ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে ঘোষণা করা হয়েছে যা পবিত্র রমজান মাসের সমাপ্তি টানে।

এ ঘোষণার পর পরই আশরাফ ঘানি তার টুইটারে লেখেন, "আমি অস্ত্র-বিরতিকে স্বাগত জানাই। আমি সামরিক বাহিনীকে তিন দিনের অস্ত্র-বিরতির শর্ত মেনে চলার এবং শুধু হামলার শিকার হলেই যাতে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নেয় সে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি।"

পুরো চিত্রটি কী?
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানদের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি সই হওয়ার পর আফগান এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আশা করেছিলেন যে, সহিংসতা হয়তো কমে আসবে।

কিন্তু বন্দী বিনিময় পদক্ষেপের জের ধরে শান্তি আলোচনা আটকে গেছে এবং সম্প্রতি সপ্তাহগুলোতে সরকারি বাহিনীর উপর হামলার ঘটনাও বেড়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে রাজধানী কাবুলে একটি হাসপাতালের মেটারনিটি ওয়ার্ডে হামলার ঘটনা ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়েছে। তবে তালেবানরা এই হামলার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। আর এ ঘটনার পর তালেবানসহ সব ধরণের জঙ্গী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ঘানি।

তিনি জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি অভিযোগ তুলেছেন যে, বার বার সহিংসতা কমানোর আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তারা তা অমান্য করেছে।

গত মাসে, রমজান উপলক্ষে আফগানিস্তান জুড়ে অস্ত্র বিরতির সরকারি আহ্বান নাকচ করে তালেবানরা। তারা বলে যে, এই আহ্বান 'যৌক্তিক' নয় এবং সাথে তারা আফগান বাহিনীর উপর হামলা জোরদার করে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এবং তার প্রতিপক্ষ আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ক্ষমতা ভাগাভাগি করে একটি চুক্তিতে সই করেন যা কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ইতি টানে।

তালেবান-মার্কিন চুক্তিতে কী আছে?
যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানদের মধ্যে যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় তার উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনা। যা দেশটিতে ১৮ বছর ধরে চলে আসা যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে পারতো।

চুক্তি অনুসারে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে ৫ হাজার মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে এবং অদূর ভবিষ্যতে তিনি তালেবান নেতাদের সাথে সাক্ষাত করবেন। আর তালেবানরা চুক্তির শর্ত মেনে চললে ১৪ মাসের মধ্যে মার্কিন এবং নেটো সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার কথা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের বিরুদ্ধে দেয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে রাজি হয়েছিল এবং গোষ্ঠীটির উপর জাতিসংঘের আলাদাভাবে দেয়া নিষেধাজ্ঞা বাতিল করতেও কাজ করার কথা ছিল। বিনিময়ে তালেবানরা অঙ্গীকার করেছিল যে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তারা আল-কায়েদা বা অন্য কোন চরমপন্থি গোষ্ঠীকে কাজ করতে দেবে না।

কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা তালেবান ও আফগান সরকারের সাথে আলোচনার প্রথম শর্ত হিসেবে দুই পক্ষের মধ্যে বন্দী বিনিময়েও রাজি হয়েছিল। যদিও আফগান সরকার ওই আলোচনায় অংশ নেয় নি।

গত এপ্রিলে ঐতিহাসিকভাবে মুখোমুখি আলোচনায় বসে দুই পক্ষ, কিন্তু তালেবানরা আলোচনা না করেই চলে যায়।

আফগান সরকার বলে যে, সশস্ত্র গোষ্ঠীটির দাবি দাওয়া গুলো যুক্তিহীন। প্রশাসনের পক্ষে সমঝোতা দলের এক সদস্য বলেন, তালেবানরা তাদের শীর্ষ ১৫ জন কমান্ডারের মুক্তি দাবি করেছে যারা বড় বড় হামলার পেছনে জড়িত ছিল।

কিন্তু তালেবানদের মুখপাত্র সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলেছে যে সরকার বন্দীদের মুক্তি "নানা কারণ দেখিয়ে বিলম্বিত করছে"।


আরো সংবাদ



premium cement