২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জাপানে নতুন করে করোনার হানা : জরুরি অবস্থা জারি

জাপানে নতুন করে করোনার হানা : জরুরি অবস্থা জারি - সংগৃহীত

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণে জাপানের যেই অঞ্চলের গল্প কিছুদিন আগেও সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হতো - যখন তারা সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল - সেই হোক্কাইডো অঞ্চলই দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ধাক্কা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

জাপানের মূল দ্বীপপুঞ্জগুলোর সর্ব দক্ষিণের দ্বীপ হোক্কাইডো ফেব্রুয়ারিতে যখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, তারাই ছিল পুরো দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা প্রথম এলাকা। স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়, বড় ধরণের জনসমাগম বন্ধ করে দেয়া হয় এবং মানুষকে ঘরে থাকতে 'উৎসাহ' দেয়া হয়।

স্থানীয় সরকার ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দৃঢ় সঙ্কল্প ছিল - শনাক্ত করা এবং আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের দ্রুত আইসোলেট করে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করে তারা।

তাদের ঐ নীতি কাজ করে, মার্চের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ঐ অঞ্চলে প্রতিদিন নতুন সংক্রমণের সংখ্যা এক বা দুইয়ে নেমে আসে।

১৯ মার্চ জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া হয় এবং এপ্রিলের শুরুতে স্কুলও খুলে যায়। কিন্তু জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার ২৬ দিনের মাথায় আবারো জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয় তারা।

'প্রায়' সফল শহর
গত সপ্তাহে জাপানের কেন্দ্রীয় সরকার টোকিও, ওসাকা ও আরো পাঁচটি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করে। বৃহস্পতিবার সারা দেশেই জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।

গত সপ্তাহে হোক্কাইডোতে ১৩৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দফায় সংক্রমণের সাথে এবারের পার্থক্য ছিল, এবার বিদেশ থেকে আসা কারো মাধ্যমে শহরের মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়েছে সেরকম কোনো প্রমাণ নেই।

নতুন আক্রান্তদের কেউই বিদেশি নন, তাদের মধ্যে কেউ গত একমাসের মধ্যে জাপানের বাইরে ভ্রমণও করেননি।

লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক কেনজি শিবুইয়া মনে করেন হোক্কাইডো শহর শুরুতে যথাযথভাবেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু তারা তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি।

"একদম শুরুতে পদক্ষেপ নিলে ক্লাস্টার শনাক্ত করা, আইসোলেট করা কন্টাক্ট ট্রেস করা সহজ। হোক্কাইডোর কর্তৃপক্ষ এভাবে প্রথম দফায় সংক্রমণ সামলেছে।"

এই ক্ষেত্রে হোক্কাইডোর উদাহরণটি অনেকটা দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহরের মতো। সেখানে ধর্মীয় এক জমায়েত থেকে অনেকের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়ায় আক্রান্তদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা ও কন্টাক্ট ট্রেসিং করার পর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার গণহারে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়, যেটা জাপান সরকার করেনি।

জাপানে কম সংখ্যক পরীক্ষা করার কারণ কী?
এখনও জাপান তাদের জনসংখ্যার একটা ক্ষুদ্র অংশের করোনাভাইরাস পরীক্ষা চালায়।

জাপানের সরকার প্রথমদিকে বলেছিল যে বড় পরিসরে পরীক্ষা চালালে 'সম্পদের অপচয়' হবে। এখন তারা সুর কিছুটা পাল্টেছে এবং বলছে যে তারা আরো বেশি মানুষের পরীক্ষা করবে, কিন্তু নানা কারণে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে না।

প্রথমত, জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আশঙ্কা যে পরীক্ষা করে মানুষের ফল যদি পজিটিভ আসে, তাহলে সবাই হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইবে ও হাসপাতালগুলো উপচে পড়বে - যদিও মৃদু উপসর্গ থাকা অনেকেরই হয়তো হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন নেই।

তাছাড়া পরীক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের নয়, স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের। আর স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনেকগুলোরই পরীক্ষা করা ও চিকিৎসা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই। এসব বিভিন্ন কারণের জন্যই ভাইরাসটি সংক্রমণের গতিপথ সম্পর্কে জাপানের কর্তৃপক্ষ যথাযথ তথ্য পাচ্ছে না বলে মনে করেন অধ্যাপক শিবুইয়া।

"হোক্কাইডোর কাছ থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, প্রথমবার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও দীর্ঘ সময় ধরে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। আপনি যদি পরীক্ষা করার সক্ষমতা না বাড়ান, তাহলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ও হাসপাতাল ট্রান্সমিশন শনাক্ত করা কঠিন।"

সামনে দীর্ঘ সময়ের পরীক্ষা
আরেকটি বিষয়ে ধারণা করা যেতে পারে, এই সমস্যায় যতদিন ভুগতে হবে বলে মানুষ মনে করেছিল, হয়তো তার চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে ভুগতে হবে। হোক্কাইডোর দ্বিতীয় দফা জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে এটি কিছুটা ধারণা করা যায়।

অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে জাপানের 'লকডাউন'এর নিয়মনীতি যথেষ্ট শিথিল। সেখানে অধিকাংশ মানুষই কাজে যাচ্ছে। স্কুল যদিও বন্ধ রয়েছে, তবে দোকানপাট ও পানশালা খোলা রয়েছে।

অধ্যাপক শিবুইয়া মনে করেন আরো কড়া পদক্ষেপ না নেয়া হলে শুধু হোক্কাইডো নয়, পুরো জাপানেই এই 'দ্বিতীয় দফা' সংক্রমণের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

"স্থানীয়ভাবে আপনি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার পর যদি দেশের অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ হতে থাকে এবং মানুষ অবাধে চলাফেরা করতে থাকে, তাহলে পুরো দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।"

জাপানের জরুরি অবস্থার মেয়াদ চলবে ৬ মে পর্যন্ত।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

সকল