লাওসে বাড়ছে মুসলমান
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ লাওস থেকে ফিরে
- ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:৫৬, আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:০৮
‘তোমরা বাংলাদেশীরা ভালো না। বাংলাদেশীরা সবাই লাওসে একটি করে বিয়ে করে। অন্যরা একাধিক বিয়ে করে এতে লাওসের মেয়েরা যেমন মুসলমান হচ্ছে তেমনি তাদের সন্তানরাও ইসলাম ধর্মের অনুসারী হচ্ছে। এতে বাড়ছে লাওসের মুসলমানের সংখ্যা।’ এক নিঃশ্বাসেই কথাগুলো বলে গেলেন শের খান। এরপর যোগ করেন, ‘বাংলাদেশীরাও যদি লাওসে একাধিক বিয়ে করতেন তাহলে তাদের স্ত্রী আর ছেলেমেয়েদের মাধ্যমে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেত।’ পাকিস্তানের পেশোয়ারে শের খানের পিতৃভূমি। তার বাবা লাওসে এসে বিয়ে করেছেন লাওসের এক মহিলাকে। সে সূত্র ধরেই শের খান এখন লাও মুসলিম। দেশটির পাঁচ শতাধিক মুসলমানের একজন তিনি। লাওসের নাগরিকদের সংক্ষেপে লাও বলে। শের খানের সাথে প্রথমে দেখা ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদে। পরে মর্নিং মার্কেটে। এই মর্নিং মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসায় আছে শের খানের।
প্রবাসী মুসলমানদের লাওসের মেয়ে বিয়ে করতে কোনো বাধা নেই। ফলে প্রবাস মুসলমানরা লাও মেয়েদের বিয়ে করে সেখানেই থেকে যাচ্ছেন। মুসলমানদের একাধিক বিয়েতেও কোনো আইনি বাধা নেই। শের খানসহ অন্যদের একাধিক বিয়ে করার নেপথ্যে তা-ই। শের খানের তিন স্ত্রীর একজন পাকিস্তানি। বাকি দুইজন লাওসের মহিলা। তার তিন স্ত্রীর ঘরে ৯ সন্তান। তার দেয়া তথ্য, ‘অন্যদেরও তিন স্ত্রীর একজন পাকিস্তানি এবং বাকি দুইজন লাও।
লাওসের ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদটি কোথায় এ তথ্য জানতে গুগলের আশ্রয় নিতে হলো হোটেল সেংপাসানের দুই কর্মচারীকে। আর ভিয়েনতিয়েনের রাস্তায় বাংলাদেশের ইজি বাইকের অনুরূপ সস্তা বাহন টুকটুক চলে তার চালকরাও জানেন না এই মসজিদের অবস্থান। হোটেলের দুই কর্মচারী দুই দফা চেষ্টার পর গুগল ম্যাপ দেখে সন্ধান দিলেন এই মসজিদের। তাদের অনুরোধ করায় তারা টুকটুক চালককে বুঝিয়ে দিলো মসজিদের অবস্থান। লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে মেকং নদী। এই নদীর তীর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদের। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে ব্রুনেই দূতাবাসের পাশেই এই মসজিদ। এবার বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যরা এই মসজিদেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। তাদের ৭ জুন জুমার নামাজের ভেনুও ছিল এই মসজিদ।
আসিয়ান অঞ্চলের দেশ লাওস। দেশটির রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে মসজিদ মাত্র দুটি। একটি এই ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদ। যে স্থানে এই মসজিদের অবস্থান সে স্থানটির নাম বান সিং ওয়ান। অপরটি চার মাইল দূরে পোন সা বাথ থাইয়ে মসজিদুল আজহা। পাকিস্তানি এবং ভারতীয় মুসলমানরা ভিয়েনতিয়েন জামে মসিজদটি নির্মাণ করেন ১৯৭০ সালে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনেইয়ের মুসলমানরা নির্মাণ করেছন মসজিদুল আজহা। এই ভিয়েততিয়েন জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন বাংলাদেশী। নাম হাফেজ হাসান মাহমুদ। সাত মাস ধরে মুয়াজ্জিনের দায়িত্বে তিনি। এসেছেন জানুয়ারিতে। কিশোরগঞ্জের লোক তিনি। হাসানসহ ৫০ বাংলাদেশী চাকরি করেন লাওসে। বাংলাদেশী এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বাংলাদেশীদের প্রথম লাওস যাওয়া শুরু। ভিয়েনতিয়েনে থাকেন ৩০ বাংলাদেশী। বাকিরা পাকশে এবং কাশিতে থাকেন। ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদে উপমহাদেশের মুসলমানরাই নামাজ আদায় করতে যান। মসজিদুল আজহাতে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদেরই উপস্থিতি বেশি। ভিয়েনতিয়েন মসজিদেই পরিচয় হয় প্রবাসী বাংলাদেশী তারেক এবং দ্বীন ইসলামের সাথে। দ্বীন ইসলাম রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। তাদের মতো সব বাংলাদেশীই বৈধ কাগজ নিয়ে লাওস এসেছেন। আসিয়ান অঞ্চলের এই দেশটিতে কোনো অবৈধ বাংলাদেশী নেই।
৬ জুন ভিয়েনতিয়েনে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের প্রাক বাছাই ম্যাচ শেষে ৭ জুন রাতে লাওস ত্যাগ করে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। দুপুরে তারা এই ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে। বাংলাদেশ দল ছিল পাঁচ তারকা হোটেল ল্যান্ডমার্কে। আমার হোটেল ছিল পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে। আমার হোটেলের দায়িত্বশীলরা টুকটুকের ড্রাইভারকে মসজিদের অবস্থান সম্পর্কে বলে দিলেও ড্রাইভার আমাকে মসজিদের বেশ দূরে নামিয়ে দিলো। পরে স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করে মসজিদ খুঁজতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম টুপি পরা এক লোক। সাথে একটি ছেলে। রাস্তায় তাদের হাঁটতে দেখে ধরেই নিয়েছিলাম জুমার নামাজ বোধ হয় শেষ। তারপরও তাকে দেখেই ‘মুসলিম ব্রাদার’ ‘মুসলিম ব্রাদার’ বলে ডাকতে থাকলাম দূর থেকে। কিন্তু তার কানে আমার ডাক পৌঁছালোই না। তিনি বেশ জোরেই হাঁটছিলেন। পরে দৌড়ে তাকে ধরলাম। সালাম দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম জুমা শেষ কি না। আর মসজিদের অবস্থানটা কোথায়। আমি মুসলমান এটা জানার পর সে আমাকে তার ব্যাগে থাকা একটি টুপি দিলো। আর সাথে থাকা আতর আমার হাতে লাগিয়ে দিয়ে বলল ‘এটা সুন্নত’। হাবিব নামের ওই মুসলিম বললেন, আমিও নামাজ পড়তে যাচ্ছি। এটি আমার ছেলে আলী। এরপর বললেন, ‘কথা কম, জোরে হাঁটো। নামাজ শেষ হওয়ার পথে।’ তার সাথে দ্রুত পা চালিয়ে মসজিদে পৌঁছার পর দেখলাম নামাজ শুরু হয়ে গেছে। এক রাকাত শেষ। বাংলাদেশী ফুটবলারদের সাথে আমিও পেছনের কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করলাম।
নামাজ শেষে পেলাম চার-পাঁচজন বাংলাদেশীকে। এগিয়ে এলেন বাংলাদেশী মুয়াজ্জিন হাসানসহ আরো কয়েকজন। এই মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ রফিক পাকিস্তানের নাগরিক। ভারতের কেরালা থেকে আসা মুসলমান মোহাম্মদ নাজিম মুসল্লিমদের দানের টাকা একটি খোলা বাটিতে করে এনে গুনছিলেন। উনি স্থানীয় মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ। সাথে ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদেরও। নাজিমের দেয়া তথ্য, ‘লাওসে ৫০০ মুসলমান আছেন। ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই এবং বাংলাদেশীরই লাওসে বসবাসকারী মুসলমান। আর স্থানীয় মুসলমান মাত্র ২০ জন।’ নাজিমের সাথে কথা বলার সময়ই সেখানে এসে হাজির এক লাও নও মুসলিম। তিনি লাও ভাষায় কি যেন বলছিলেন নাজিমকে।
৪৮০ মিটারের দোতলা ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদে একত্রে দেড়শত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ঈদের নামাজের সময় মসজিদে জায়গা হয় না তখন মসজিদসংলগ্ন রাস্তায় নামাজ আদায় করেন মুসলমানরা। তাতে স্থানীয় বৌদ্ধরা কোনো সমস্যাই করে না। লাওসে কোনো ধর্মীয় সহিংসতা বা উত্তেজনা নেই। মসজিদের ভেতর মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা আছে। তা দেয়াল দিয়ে আলাদা করা নয়, পর্দা দিয়ে। যতজন মহিলা উপস্থিত হন সেই অনুযায়ী পর্দা বিস্তৃত করা যায়। এই মসজিদে এবার তিনজন মহিলা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। আর জুমার দিনে পাওয়া গেল একজনকে। পৃথিবীর অনেক দেশেই মসজিদে উচ্চস্বরে আজান নিষিদ্ধ। কিন্তু লাওসের দুই মসজিদে মাইকে উচ্চস্বরেই আযান হয়। জানান, মোহাম্মদ নাজিম। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদ। মসজিদ কমিটিই কিনে নিয়েছে জমিটি। মসজিদ কমিটিই বেতন দেয় ইমাম ও মুয়াজ্জিনের। বাংলাদেশী মুয়াজ্জিন হাসান মাসে তিন শ’ ডলার বেতন পান। তার থাকা-খাওয়া ফ্রি।
প্রতি রমজানে প্রায় দেড় শ’ রোজাদারকে ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদে ইফতার করানো হয়। আর ঈদুল ফিতরের দিন মোহাম্মদ নাজিমের খাবারের দোকান নাজিম রেস্টুরেন্ট থেকে বিনা পয়সায় খাবার দেয়া হয় ঈদের নামাজ পড়তে আসা মুসলমানদের। খাদ্য তালিকায় থাকে গরুর গোশত আর রুটি। এবার বাংলাদেশের ফুটবলারদের কয়েকজন ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে এই গোশত-রুটি খেয়েছেন। মোহাম্মদ নাজিম জানালেন এই খাবার তার হোটেল থেকে বহু বছর থেকে ফ্রি খাওয়ানো হয়। ৪৮ বছর আগে কেরালা থেকে এসেছেন নাজিম। ইমাম রফিক পাকিস্তান থেকে এসেছেন ১৯৬৬ সালে। অবশ্য লাওসের পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য তাদের লাওসের ভাষায় নাম রাখতে হয়েছে। রফিকের লাও ভাষায় নাম সুফি সেন সং। নাজিমের স্থানীয় নাম সমসেক সিভিলাই। লাওসের অধিকাংশ প্রবাসী মুসলমান ব্যবসায় করেন। ভিয়েনতিয়েনের মর্নিং মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল কাপড়ের ব্যবসায় করছেন পাকিস্তান থেকে আসা মুসলমানরা। নাজিম রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন কিশোরগঞ্জের দ্বীন ইসলাম। তার বেতন ৫০০ ডলার। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের এই সন্তান লাওস এসেছেন পাঁচ বছর আগে। বর্তমানে নাজিম রেস্টুরেন্টে চাকরি করা অপর বাংলাদেশীরা হলেন রাজু ও শাহীনসহ আরো দুইজন।
নামাজের সময় উঠানো দানের টাকা আর মুসলমানদের অনুদানের টাকায় চলে ভিয়েনতিয়েন মসজিদের যাবতীয় খরচ। এতে যে টাকা উঠে তাতে খরচ নির্বাহের পর উদ্বৃত্ত থাকে। বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে তালাবদ্ধ বাক্সে দানের টাকা তোলা হয়। এই বক্সে তালা লাগানোটা চুরি রোধে। কিন্তু লাওসের রাজধানীর এই মসজিদে দেখা গেল উন্মুক্ত একটি বাটিতে সবাই দানের টাকা দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি, বাফুফের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান এবং ন্যাশনাল টিমস কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়াল বাংলাদেশ দলের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করেন ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদে। নামাজ শেষে তিনি মসজিদের জন্য একশত ডলার অনুদান দেন। লাওসের মুদ্রা কিপি এই অর্থ ৮৬ হাজারে উপরে। বাংলাদেশের লোক ১০০ ডলার অনুদান দিয়েছে মুহূর্তেই তা পুরো মসজিদের মুসল্লিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সবাই এসে তাবিথ আউয়ালের সাথে কোলাকুলি এবং করমর্দন করতে থাকেন।
আগে বাংলাদেশীরা অন অ্যারাই্ভাল ভিসা নিয়ে সহজেই আসতে পারতো লাওসে। কিন্তু কিছু অসৎ বাংলাদেশীর কারণে লাওস সরকার বাংলাদেশীদের ব্যাপারে বেশ কঠোর হয়ে গেছে। বেশ কয়েক বছর আগে কালাম নামে এক বাংলাদেশী আদম পাচারকারী ১০০ জন বাংলাদেশীকে ইউরোপ বা মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে লাওস নিয়ে আসে। এরপর তাদের পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে যায় কালাম। পরে লাওস মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন টাকা তুলে তাদের পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। বছর খানেক আগে চার বাংলাদেশীকে এভাবেই লাওস নিয়ে এসে ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদে রেখে লাপাত্তা হয়ে যায় আরেক দালাল। পরে মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
এখনো দুই-তিনজন বাংলাদেশী দালাল সক্রিয়। তাদের একজন লাওসেই থাকেন। তারা বাংলাদেশে লোকদের জানায় চার-পাঁচ শত ডলার বেতনের কথা। কিন্তু লাওস আসার পর দেখা যায় সেই বেতন মাত্র দুই শ’ ডলার। আট ঘণ্টার কাজের কথা বলা হলেও খাটানো হয় ১২ ঘণ্টা। তাদের কাছ থেকে তারা আদায় করে তিন লাখ টাকা। অথচ লাগে আরো কম। এক লাখ টাকার সামান্য বেশি। ভারতীয় ব্যবসায়ী নাজিম তো এ জন্য চটেছেন বাংলাদেশীদের ওপর। ক্ষোভের সাথে তিনি জানান, আপনাদের বাংলাদেশীরাই তো অপর বাংলাদেশীদের মারাত্মক ক্ষতি করছেন।
লাওস প্রবাসী বাংলাদেশীদের কেউ কেউ কাজ করেন গার্মেন্টে। কেউ বা রেস্টুরেন্টে। লাওসের অন্যতম রফতানি পণ্য বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করছেন কিছু বাংলাদেশী। বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায় গুটিয়ে নেয়া এক চীনা জুতা কোম্পানি লাওসে কারখানা দিয়েছে। সেখানেও কর্মরত আছে কিছু বাংলাদেশী। বিদ্যুৎ রফতানি ছাড়াও পর্যটন খাতে আয় আছে লাওসের। লাওসজুড়ে আছে প্রচুর প্রাকৃতিক ঝরনা এবং লেক। এসবই ব্যাপক হারে আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।
লাওস প্রবাসী বাংলাদেশীরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল নন। নাজিম রেস্টুরেন্টে কর্মরত দ্বীন ইসলাম জানান, বেশ কিছু দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্রাহ্মহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের মোমেন ইসলাম কাজল প্রাণ হারান। তখন তার লাশ দেশে পাঠাতে আর্থিক সহায়তায় সব বাংলাদেশীকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। পরে মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন টাকা তুলে তার পরিবারের সম্মতি নিয়ে লাওসেই তার দাফনের ব্যবস্থা করে। তবে লাওসে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় প্রবাসীদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে তাদের পাড়ি দিতে হয় থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামে। অন্য দেশগুলো দূতাবাস খুলে লাওসে তাদের দক্ষ জনশক্তি রফতানি করছে। বিশেষ করে ভারত লাওসের বিকাশমান জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে তাদের লোকদের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে বলে জানান দ্বীন ইসলাম।
দারুণ নিয়মশৃঙ্খলার দেশ লাওস। রাস্তায় কোনো ট্রাফিক নেই। একটু পরপর জ্বলে উঠা লাল-হলুদ-সবুজ বাতি দেখে গাড়ি চলে। চুরিচামারির কোনো ঘটনা নেই। মর্নিং মার্কেটে দেখলাম এক মহিলা দোকানের এক পাশে একাধিক মোবাইল চার্জে দিয়ে অন্য প্রান্তে কথা বলছেন ক্রেতার সাথে। যেখানে মোবাইলগুলো চার্জ দেয়া হচ্ছিল তার পাশেই জনগণের চলার পথ। আরেক খাবারের হোটেলে গিয়ে দেখা গেল দোকান খোলা রেখে দোকানি বিছানা বিছিয়ে ঘুমাচ্ছেন। তাকে ঘুম থেকে তুলে খাবারের অর্ডার দিলাম। দোকান খোলা, চুরির কি কোনো আশঙ্কা নেই, প্রশ্নের জবারে ওই দোকানির উত্তর, না আমাদের এখানে চুরি হয় না।
দ্বীন ইসলাম জানালেন, আমি চার বছর ধরে লাওসে আছি। কোনো দিন মারামারি হতে দেখিনি। এখানে নিয়ম হলো দুইজনের মধ্যে মারামারি হলে পুলিশ তাকেই গ্রেফতার করে যে আগে আঘাত করেছে। পুলিশের বক্তব্য হলো, সমস্যা হলে আমরা বিচার করব। কিন্তু তুমি কেন গায়ে হাত তুললে।
বাংলাদেশে রাস্তায় ইজিবাইক চললে সেটার ওপর কত বিধিনিষেধ। অথচ ভিয়েনতিয়েনে খুবই জনপ্রিয় এই ইজিবাইক আকৃতির টুকটুক। যেকোনো গন্তব্যে তারা যেতে রাজি। ২০১১ সালে কম্বোডিয়া সফরের সময় রাস্তায় এই টুকটুক চলতে দেখেছি। পর্যটকদের খুব প্রিয় সস্তা এই বাহন। সাধারণ ট্যাক্সিতে যে ভাড়া ১৫ ডলার লাগে। সেখানে এই টুকটুকে চড়লে দিতে হয় তিন-চার ডলার। অবশ্য দরকষাকষি করতে হয়। কম্বোডিয়ার মতো লাওসেও বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় মার্কিন ডলার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা