২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১, ২৭ রজব ১৪৪৬
`

দক্ষিণ কোরিয়ায় অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ

দক্ষিণ কোরিয়ায় অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ - ছবি : সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সামরিক আইন জারি করার মাধ্যমে বিদ্রোহ করেছেন মর্মে অভিযোগ এনেছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। দেশটির ইতিহাসে ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টের এমন অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া এই প্রথম।

গত ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেছিলেন ইউন। কিন্তু তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে মাত্র ছয় ঘণ্টার মাথায় তিনি তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।

স্বল্পস্থায়ী এই সামরিক আইন জারির জেরে ১৪ ডিসেম্বর ইউনকে দেশটির পার্লামেন্টে অভিশংসন করা হয়। তাকে সাময়িকভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে বরখাস্তও করা হয়।

গত ১৫ জানুয়ারি গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন।

এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে একবার ইউনকে গ্রেফতারের জন্য তার বাড়িতে কয়েক ঘণ্টার অভিযান চালান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তবে তার নিরাপত্তা বাহিনীর বাধায় সেই অভিযান ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় তাকে গ্রেফতার করা যায়।

দোষী সাব্যস্ত হলে ইউনের আজীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে গত কয়েক দশকে দেশটিতে কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আজ ইউন সুক ইওলকে বিদ্রোহের মূলহোতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং তাকে আটক রাখা হয়েছে।’

তিনি এখন সিউল ডিটেনশন সেন্টারে আটক আছেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হওয়ার পর তিনি তার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে থাকবেন, যা ছয় মাসের মধ্যে হওয়া বাধ্যতামূলক।

আদালত দু’বার অভিযুক্তদের গ্রেফতারি পরোয়ানা বাড়ানোর আবেদন প্রত্যাখ্যান করার প্রেক্ষাপটে অভিযোগটি ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত ছিল।

অভিযোগকারীরা বলেন, ‘তদন্তের সময় প্রাপ্ত প্রমাণের ব্যাপক পর্যালোচনা করার পর আমরা মনে করি যে তাকে অভিযুক্ত করা একমাত্র সঠিক পদক্ষেপ ছিল।’

তাদের মতে, ‘প্রমাণ ধ্বংসের সম্ভাব্য ঝুঁকি’র কারণে ইউনকে আটক রাখা প্রয়োজন।

তারা আরো উল্লেখ করেছেন বিশেষ অভিযোগ- বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়া- প্রেসিডেন্টের সংবিধানিক সুরক্ষার আওতার মধ্যে পড়ে না।

ইউনের আইনজীবীরা বিদ্রোহের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এটি আদালতে মোকাবেলার অঙ্গীকার করেছেন।

তারা বলেছেন, ‘ইউনের মার্শাল ল ঘোষণা বিদ্রোহ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিপরীত দিকে বিরোধী দল এই অভিযুক্তকরণকে স্বাগত জানিয়েছে। আইনপ্রণেতা হান মিন-সু বলেছেন, ‘আমাদের যারা অবৈধ বিদ্রোহ সংগঠিত করার পরিকল্পনা করে শুধু তাদেরই নয়, বরং যারা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিদ্রোহ উসকে দিয়েছে তাদেরও বিচার করতে হবে।’

ইউন এবং তার আইনজীবীরা নির্বাচনী জালিয়াতি এবং বিরোধী দলের সংসদ নিয়ন্ত্রণের কারণে মার্শাল ল ঘোষণা করার যৌক্তিকতা হিসেবে দাবি করেছেন। যদিও তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।

ইউন ‘শেষ পর্যন্ত লড়াই’ চালিয়ে যাওয়ার ‘প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে তিনি তাদের সমর্থন পেয়েছেন যারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সংযুক্ত ‘চুরি থামাও’ স্লোগান ব্যবহার করেছেন।

রাজনৈতিক চিন্তাধারা বিষয়ক সংস্থা ভ্যালিডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বে কাং-হুন বলেছেন, ‘এই অভিযোগটি শান্তি বয়ে আনবে, যা পুনপ্রমাণ করবে যে সংবিধানিক ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করছে।’

এছাড়া ইউনের বিরুদ্ধে সংবিধানিক আদালতে একাধিক শুনানিও চলছে, যা ঠিক করবে তার অভিশংসন বজায় থাকবে কি না এবং তাকে প্রেসিডেন্সি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদচ্যুত করা হবে কি না।

যদি আদালত ইউনের বিরুদ্ধে রায় দেয়, তবে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণ করা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement