২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ মাঘ ১৪৩১, ১৯ রজব ১৪৪৬
`

নির্বাচন নয়, শান্তিকে অগ্রাধিকার দিন : জান্তা সরকারকে আসিয়ান

- ছবি : এএফপি

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলো মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে জানিয়েছে, ‘নির্বাচন নয়, শান্তিকে অগ্রাধিকার দিন। ক্রমবর্ধমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে নির্বাচনের পরিকল্পনা অগ্রাধিকার দেয়া উচিত হবে না।’ অবিলম্বে সংলাপ শুরু করতে এবং শত্রুতা বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোববার সদস্য দেশ মিয়ানমারের যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ সময় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ হাসান আসিয়ানের প্রতিনিধিদেরকে মানবিক সহায়তার জন্য অবাধ প্রবেশাধিকার দেয়ার জন্যও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের মনে কী আছে, মালয়েশিয়া সেটি জানতে চায়।

হাসান বলেন, মিয়ানমার এ বছর একটি সাধারণ নির্বাচনে পরিকল্পনা করছে। এ বিষয়ে তারা আসিয়ানকে অবগত করেছে। তবে আসিয়ান চায়, যেকোনো নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন সরকার দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বলেছি নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। নির্বাচন বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না। এতে সকল অংশীদারদের জড়িত করতে হবে।’ মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের বলেছি যে নির্বাচন আমাদের অগ্রাধিকার নয়। আমাদের অগ্রাধিকার হলো সহিংসতা বন্ধ করা।

২০২১ সালের শুরুর দিকে মিয়ানমারে অস্থিরতা শুরু হয়। সেনাবাহিনী নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে। এর ফলে গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে তা ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র বিদ্রোহে রূপ নেয়। এখন বিদ্রোহীরা দেশের একাংশ দখল করে নিয়েছে।

একাধিক ফ্রন্টে ক্ষতিগ্রস্ত, অর্থনীতি ভেঙে পড়া এবং কয়েক ডজন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও সামরিক সরকার এই বছর একটি নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। তবে সমালোচকরা প্রক্সির মাধ্যমে জেনারেলদের ক্ষমতায় রাখার প্রহসন হিসেবে সেটাকে বিবেচনা করছে।

এই বছর ১০ সদস্যের ব্লকের সভাপতি মালয়েশিয়া, মিয়ানমারের সঙ্কটের বিষয়ে বিশেষ দূত হিসেবে সাবেক কূটনীতিক ওথমান হাশিমকে নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

জাতিসঙ্ঘ বলেছে যে মিয়ানমারে মানবিক চাহিদা ‘উদ্বেগজনক পর্যায়ে’ রয়েছে। সেখানে প্রায় ২ কোটি মানুষ- যা জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি হবে- সাহায্যের মুখাপেক্ষী।

মোহাম্মদ হাসান বলেন, হাশিম শিগগির মিয়ানমার সফর করবেন। এ সময় তিনি চেষ্টা করবেন, যেন মিয়ানমারের সকল পক্ষকে আসিয়ানের পাঁচ-দফা শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজি করানো যায়। অভ্যুত্থানের কয়েক মাস পর থেকে যাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

হাসান বলেন, বৈঠকে চীনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও আসিয়ানের দ্বিতীয় মেয়াদের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, মন্ত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে দুই পরাশক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতা আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে। তিনি আরো বলেন, আসিয়ান মন্ত্রীরা বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার মধ্যে আঞ্চলিক ঐক্য জোরদার করার এবং অর্থনৈতিক একীকরণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার তাগিদের উপর জোর দিয়েছেন।

গত বছর জলসীমায় সহিংস সংঘর্ষের পর দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা শুরু হয়। অথচ এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ। সেখানে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বার্ষিক জাহাজ-বাহিত বাণিজ্য রয়েছে। তাও আলোচ্য সূচিতে শীর্ষে ছিল।

ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়া তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা জাহাজ পরিচালনার প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু বেইজিং এর জবাবে বলেছে যে তাদের জলসীমায় বৈধভাবেই তারা সেটি পরিচালিত করছে।

চীন দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ অংশের উপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে। তবে তাইওয়ানের সাথে আসিয়ান সদস্য ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং ব্রুনাইও তাদের দাবির উপর আস্থা রেখেছে।

চীন এবং আসিয়ান দক্ষিণ চীন সাগরের জন্য একটি আচরণবিধি তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু আলোচনা কচ্ছপের গতিতে এগুচ্ছে।

মোহাম্মদ বলেছেন, মন্ত্রীরা এখন পর্যন্ত অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে ‘আচরণবিধি ত্বরান্বিত করার জন্য গতি অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন যে কোডের জন্য কণ্টকাকীর্ণ ‘মাইলফলক বিষয়গুলো’ নিয়ে আলোচনা শুরু করার সময় এসেছে। যার মধ্যে রয়েছে এর পরিধি, এটি আইনত বাধ্যতামূলক হতে পারে কিনা এবং তৃতীয় পক্ষের রাষ্ট্রগুলোর উপর এর প্রভাব।

হাসান বলেন, মন্ত্রীরা নৌপথে আচরণবিধি নিয়ে আসিয়ান এবং চীনের মধ্যে দ্রুত আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা জোর দিয়েছি যে দক্ষিণ চীন সাগরকে শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল থাকতে হবে।

সূত্র : আল জাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement