১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ মাঘ ১৪৩১, ১৭ রজব ১৪৪৬
`

আমাদের মূল সংগ্রাম একনায়কতন্ত্র উৎখাত করা : সাক্ষাৎকারে কেএনডিএফ নেতা

কেএনডিএফ চেয়ারম্যান খুন বেদু। - ছবি : ইরাবতি।

মিয়ানমারের বিদ্রোহী কারেন্নি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ) চেয়ারম্যান খুন বেদু বলেছেন, আমাদের মূল সংগ্রাম হলো একনায়কতন্ত্র উৎখাত করা। সবাই বিশ্বাস করে, এক সময় জান্তার পতন হবে। তবে আমি জানি না ভবিষ্যতে পুরো দেশের চিত্র কেমন হবে। সম্প্রতি মিয়ানমারের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ইরাবতির সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

সাক্ষাৎকারে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের সম্ভাব্য পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ এবং নির্বাচনের সম্ভাবনা সম্পর্কে কথা বলেন তিনি। কারেন্নি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ) কারেন্নি রাজ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট যা ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর শাসনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর প্রতিরোধ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গঠিত হয়েছিল।

মিয়ানমারের জান্তা ডিসেম্বর থেকে সম্ভাব্য সাধারণ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য শাসনবিরোধী সংগঠনগুলোকে শান্তি আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে বিপ্লবী দলগুলো ২০২৫ সালের মধ্যে সামরিক সাফল্য অর্জনের আশা করছে। এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে কথা বলেন খুন বেদু। ইরাবতি থেকে সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন আরিফা সাইয়্যারা পরমা

২০২৫ সালে আপনি কি ধরনের পরিবর্তন আশা করছেন?

সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সাথে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। তবে এর মাধ্যমে জেনারেলরা ক্ষমতা বজায় রাখতে চান এবং কেন্দ্রীভূত কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান। এটা আমরাসহ মিয়ানমারের জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য। ২০২৫ সালে জনসমর্থনের মাধ্যমে একটি শক্ত রাজনৈতিক ভিত্তি স্থাপিত হওয়ার সাথে সাথে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকবে।

কোন ধরনের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিতে পারে?

এ মুর্হূতে পুরো দেশের কথা বলা কঠিন। আমাদের মূল সংগ্রাম হলো একনায়কতন্ত্র উৎখাত করা। সবাই বিশ্বাস করে যে এক সময় এর পতন হবে। তবে আমি জানি না ভবিষ্যতে পুরো দেশের চিত্র কেমন হবে।

কিন্তু কারেন্নি রাজ্যে আমি সকলের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আমরা আমাদের দিক এবং আমাদের জনগণ যে ব্যবস্থা চায় তা গণতান্ত্রিকভাবে সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে এবং ক্ষমতার তিনটি শাখা (নির্বাহী, আইনসভা ও বিচার বিভাগ) পৃথক করার মাধ্যমে এবং প্রত্যেকের চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাধীনভাবে কথা বলার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে পারি। আমরা একটি রাজনৈতিক মঞ্চ গঠন করতে চাই যা সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়াই জনগণ স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে পারবে।

শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন সত্ত্বেও আমরা (কারেন্নি রাজ্যে) এ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার মাধ্যমে আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এভাবেই আমরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি।

আমি দেশের অন্য অঞ্চলগুলোকেও একই কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। দেখা যাক, কোন অঞ্চল স্বাধীনতা ও সমতা সবচেয়ে ভালো দিতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, এভাবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পুরো দেশ স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হবে। সকল নেতা, বিশেষ করে যারা গণতন্ত্রপন্থী, তারা এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।

সামরিক একনায়কতন্ত্র থেকে মুক্তি অর্জনে আপনি কতটা কাছাকাছি যেতে পেরেছেন?

আমরা দেশব্যাপী স্বাধীনতা অর্জনের কাছাকাছি চলে এসেছি। এটি মূলত আমাদের জনগণ এবং নেতাদের ঐক্যের ওপর নির্ভর করে। আমরা বিভিন্ন সামরিক কৌশল এবং পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি। কিছু অঞ্চল হয়তো দ্রুত মুক্তি পেতে পারে কিন্তু পুরো দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তা প্রকৃত স্বাধীনতা নয়। পুরো দেশের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যতক্ষণ নেপিদোতে শাসকগোষ্ঠী থাকবে, ততক্ষণ তারা রাখাইনে যুদ্ধ করার জন্য তাদের বাহিনীকে পুনর্গঠিত করতে পারবে, কোকাংয়ে বোমাবর্ষণ করতে পারবে অথবা যে কোনো সময় কারেন্নিতে আক্রমণ করতে পারবে।

প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনসাধারণকে তথ্য দেয়া এবং জান্তা বিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। জান্তা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা কঠিন।

যতক্ষণ আমাদের জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং আমাদের প্রচেষ্টা অবিচল থাকবে, ততক্ষণ আমরা অগ্রগতি দেখতে পাব। ২০২৫ সালে আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি থাকব।

আমরা যদি সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকি, শাসকগোষ্ঠী নির্বাচন করতে বা পাল্টা লড়াই করতে সক্ষম হবে না। এই দেশ মুক্ত এবং স্বাধীন হবে যদি আমরা আমাদের লাভগুলোকে সুসংহত করার জন্য শাসকগোষ্ঠীকে চাপ প্রয়োগ করা অব্যাহত রাখি।

২০২৫ সালের জন্য আপনার সামরিক প্রস্তুতি কী?

জান্তা আক্রমণাত্মক অভিযান চালিয়েছে কিন্তু তারা হারানো অঞ্চলের ২০ শতাংশ পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা প্রধান সড়কগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে।

আমরা জান্তার পাল্টা আক্রমণকে পরাজিত করেছি। আমাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সৈন্য সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এই বছর আমরা কোথায় আক্রমণ করব সে সম্পর্কে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেব। আমরা ২০২৫ সালে সর্বোত্তম সামরিক ফলাফল অর্জনের লক্ষ্য রাখব। আমাদের একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থাও স্থাপন করতে হবে এবং ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সম্প্রতি সামরিক বাহিনী বাস্তুচ্যুত শিবিরসহ জনগণের ওপর আক্রমণ বাড়িয়েছে। তারা আমাদের আর্থ-সামাজিক জীবনকে ব্যাহত করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের দৃঢ়তার সাথে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।

কাচিন, মান্দালয় এবং কারেনে যুদ্ধ চলছে। আমাদের সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করে শাসনব্যবস্থার ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। এভাবেই আমরা ২০২৫ সালে বিজয় অর্জন করবো।

জান্তার পাল্টা আক্রমণগুলো দুর্বল। ৬০ জনেরও বেশি নতুন সৈন্য চাকরি ছেড়ে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। বর্তমান শক্তি দিয়ে এই শাসকগোষ্ঠী তার বাহিনী পুনর্গঠন করতে বা অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে পারবে না।

সরকারের নির্বাচন এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নিয়ে আমি খুবই সন্দিহান। অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে, তারা আশঙ্কা করছে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ভোটগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করবে। তাই তারাও এর প্রতিক্রিয়ায় অস্ত্র বহন করবে।

রাজনীতিবিদরা যদি অস্ত্র ধারণ করেন, তাহলে নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হতে পারবে না। নির্বাচনের জন্য দাঁড়ানো দলগুলো সরকারের সাথে জোটবদ্ধ হবে। এটি একটি কুৎসিত নির্বাচন হবে।

সরকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সাথে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড তাদের কথার পরিপন্থী। তারা প্রতিদিনই জনগণের ওপর বোমাবর্ষণ করছে। আমরা এমন সরল বিপ্লবী নই যারা অস্ত্র সমর্পণ করে শাসকগোষ্ঠীর ‘আন্তরিক’ আমন্ত্রণে বিশ্বাস করব। তাদের আমন্ত্রণে বিশ্বাস না করার স্পষ্ট কারণ এবং প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।

আমরা আন্তর্জাতিক চাপেরও সম্মুখীন হচ্ছি। এর ফলে শান্তি আলোচনা বা আলোচনা শুরু হবে না। জেনারেলদের জন্য সর্বোত্তম পদক্ষেপ হলো ক্ষমতা ত্যাগ করা এবং অন্য দেশে আশ্রয় নেয়া।


আরো সংবাদ



premium cement
সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন কতটা চ্যালেঞ্জের হবে দেশের সম্পদ লুটপাটকারী দেশপ্রেমী হতে পারে না : ড. মিজানুর রহমান বাঞ্ছারামপুরে জাতীয় কোরআন প্রতিযোগিতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ফের উত্তেজনা, মুখোমুখি দুই দেশের নাগরিকরা নোয়াখালীতে হত্যা মামলার আসামি আ.লীগ নেতা গ্রেফতার বাংলার জমিনে ইনসাফ কায়েমের লড়াই চলবেই : জামায়াত আমির যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত কানাডা জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ওসিসহ আহত ২০ অস্ত্র মামলায় সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর কারাগারে ‘সমতল ভূমি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের’ সাথে মির্জা ফখরুলের মতবিনিময় পানের দাম বৃদ্ধিতে মাইকিং!

সকল