১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬
`

চীনে শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ

চীনে শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ - সংগৃহীত

চীনের উত্তর-পশ্চিমের একটি শহরে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় সহিংস বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, শানসি প্রদেশের পুচেং শহরে কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে নানা কিছু ছুড়ে মারছে। এসময় অফিসারদের কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে মারধর করতেও দেখা যায়।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই কিশোর গত ২ জানুয়ারি তার স্কুলের ছাত্রাবাসে এক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ উঠতে থাকে যে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

কিশোরের মৃত্যুর পরপরই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েকদিন ধরে তা চলতে থাকে। তবে এই সপ্তাহের শুরুতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। এরপর থেকে পুচেং-এ আর কোনো বিক্ষোভের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

চীনের জন্য প্রকাশ্যে বিক্ষোভ নতুন কিছু নয়। তবে ২০২২ সালে কোভিড নীতির বিরুদ্ধে হওয়া ‘হোয়াইট পেপার’ বিক্ষোভের পর থেকে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিক্ষোভের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। কারণ সেগুলোতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছিল, যা দেশটিতে বিরল।

পুচেং-এর বিক্ষোভ নিয়ে নীরব রয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। কর্তৃপক্ষের কাছে সংবেদনশীল মনে হওয়া অন্য যেকোনো ঘটনার মতোই এবারের বিক্ষোভেরও কোনো ভিডিও ক্লিপ বা এ নিয়ে দেয়া পোস্ট চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অনেকাংশে সেন্সর করা হয়েছে।

তবে চীন থেকে ফাঁস হওয়া বেশ কিছু ভিডিও এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা হয়েছে।

এই ভিডিওগুলো পুচেং ভোকেশনাল এডুকেশন সেন্টারে ধারণ করার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি। তবে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগের কোনো সংস্করণ অনলাইনে পাওয়া যায়নি।

বিবিসির পক্ষ থেকে পুচেং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রচার বিভাগের একজন প্রতিনিধি বিক্ষোভের বিষয়টি নাকচ করে দেন। গণমাধ্যমের সাথে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই সপ্তাহের শুরুতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই কিশোরের পদবি ছিল ড্যাং। তিনি পুচেং-এর এডুকেশন সেন্টারের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগে রাতের বেলা শিক্ষার্থীদের আড্ডার শব্দে ড্যাংয়ের ঘুম ভেঙে যায়। এ নিয়ে এক শিক্ষার্থীর সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়লে স্কুলের এক কর্মকর্তা সেটি মীমাংসা করে দেন। সেই রাতেই ছাত্রাবাসের নিচে এক শিক্ষার্থী ড্যাংয়ের লাশ দেখতে পায়।

বিবৃতিতে একে ‘স্কুলের ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ায় ঘটা দুর্ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, পুলিশ তদন্ত এবং ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে বর্তমানে ঘটনাটিকে ফৌজদারি মামলার বাইরে রেখেছে।

তবে অনলাইনে অভিযোগ উঠছে, ঘটনাটির পেছনে আরো ঘটনা আছে এবং কর্তৃপক্ষ সত্য গোপন করছে। তথ্য-প্রমাণহীন একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, ড্যাং আত্মহত্যা করেছে কারণ তার সাথে ঝগড়া করা ছেলেটি তাকে হয়রানি করেছিল।

সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া ছড়িয়ে পড়া তার পরিবারের কিছু মন্তব্যে দাবি করা হয়েছে যে ড্যাংয়ের শরীরে পাওয়া আঘাতের চিহ্নের সাথে কর্তৃপক্ষের বর্ণিত ঘটনার মিল নেই আর তাদেরকে অনেকক্ষণ তার লাশ পরীক্ষা করতে দেয়া হয়নি।

এসব অভিযোগ পুচেং-এর অনেক মানুষকে ক্ষুব্ধ করে, যা অন্তত কয়েক শ’ মানুষকে নিয়ে হওয়া বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের জন্য বুলিং একটি সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে। এর আগেও ছাত্রদের মৃত্যুর কিছু ঘটনা বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। গত মাসে চীনের একটি আদালত সহপাঠীকে হত্যার দায়ে দুই কিশোরকে দীর্ঘ কারাদণ্ড দিয়েছে।

সোমবার এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা পুচেং ভোকেশনাল এডুকেশন সেন্টারের আরো কিছু ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি। ভিডিওগুলোতে সাধারণ মানুষকে ওই কিশোরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে দেখা যায়। তারা স্কুলের মূল ফটকে ফুল এবং অন্যান্য অর্ঘ্য রেখে এবং স্কুল ভবনের ছাদ থেকে কাগজের টুকরো ফেলে রীতি অনুযায়ী শোক পালন করে।

অন্য ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা একটি ভবনে ঢুকে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে এবং ‘আমাদের সত্য বলো’ বলে চিৎকার করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই তরুণ ছিল।

যাচাই করা আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন স্কুল-কর্মকর্তা চিৎকার করে বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হলে তারা তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুরিয়ে দিচ্ছে।

অন্য ভিডিওতে স্কুল প্রাঙ্গণের ধ্বংসপ্রাপ্ত অফিস এবং বিক্ষোভকারীদের স্কুলের প্রবেশপথে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার দৃশ্য দেখা যায়।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পিছু হটা পুলিশদের দিকে বিক্ষোভকারীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জিনিসগুলো ছুড়ে মারছে আর পুলিশ কর্মকর্তারা কিছু বিক্ষোভকারীকে আটকের পর লাঠি দিয়ে মারধর করছে। এসময় কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মাথা এবং মুখ থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।

এরপর কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পুচেং-এ পুলিশের উপস্থিতি অনেক বেশি বেড়েছে এবং সেখানে আর কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।

জনগণকে ‘গুজব তৈরি না করা, গুজবে বিশ্বাস না করা এবং গুজব না ছড়ানোর’ আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রশিবিরের সভাপতি সুফিয়ান, সেক্রেটারি রাকিব ২০ জানুয়ারির আগেই যুদ্ধ সমাপ্তির আশা হামাসের ক্রীড়াঙ্গনে অরাজনৈতিক ঐক্য দরকার : মির্জা ফখরুল গাজায় নিহত প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি : ল্যানচেট টেকনাফ মহাসড়কে মিনিট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে ১ যুবক নিহত, আহত ৩ হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে ভাঙচুর-মারামারি সমাজে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই জামায়াতের উদ্দেশ্য : রফিকুল ইসলাম দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা প্রধানের পদত্যাগ এমন একটি ছবি শুধু ভাবায় না, কাঁদায়ও : মুশফিকুল ফজল আনসারী শ্রীলঙ্কাকে চতুর্থবার হোয়াইটওয়াশের মিশন নিউজিল্যান্ডের কুষ্টিয়ায় টংঘর থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করল বিজিবি

সকল