০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

চীন থেকে ছড়াচ্ছে নতুন ভাইরাস, জনমনে আতঙ্ক!

চীনের হাসপাতালগুলোয় মানুষের উপচেপড়া ভিড় - ছবি - বিবিসি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের পাঁচ বছর পর সেই চীন থেকেই আবার ছড়িয়ে পড়ছে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা সংক্ষেপে এইচএমপিভি। চীনের ভেতরে ও আশপাশের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার খবর জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, আবারো ২০২০ সালে করোনার মতো ভয়াবহ মহামারি দেখা দেবে কি না।

তবে এখনই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। কেননা চীন সরকার বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কেউই এখনো আনুষ্ঠানিক সতর্কতা জারি করেনি।

নতুন এ ভাইরাসটি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি। তবে রোগটি যেন না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, চীনের হাসপাতালগুলোয় মানুষের উপচেপড়া ভিড়।

রোগীদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই শিশু। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ মানুষই শ্বাসকষ্টজনিত রোগের চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

ডিসেম্বরের শেষের দিকে ১৪ বছর বা এর কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রধানত এ রোগটি দেখা দিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে।

একই অবস্থা দেখা গেছে জাপানেও। দেশটির সরকারি হিসাব অনুযায়ী চলতি মৌসুমে দেশটিতে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন সাত লাখেরও বেশি মানুষ।

এই পরিস্থিতি করোনার সময় হাসপাতালে রোগীদের ভিড় ও আতঙ্কের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

ইতোমধ্যেই চীনের প্রতিবেশী দেশ হংকং, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছেন ভারতের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও।

আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু?
বাংলাদেশে ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞ বা ভাইরোলজিস্টরা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলও জানিয়েছে এইচএমপিভি নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

এর বড় কারণ হচ্ছে, এটি কোভিডের মতো নতুন কোনো ভাইরাস নয়। বাংলাদেশে ২০১৬ বা ২০১৭ সালের দিকে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল।

ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে আগেও মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর অর্থ হলো, মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি গড়ে উঠেছে।

মানে কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একে মোকাবিলা করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক ড. অতুল গয়াল জানান, প্রাথমিকভাবে এটিকে সাধারণ ফ্লু ভাইরাস বলেই মনে হচ্ছে। তবে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা প্রস্তুত। এখন থেকে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত কোনো সমস্যা ছোট করে দেখার উপায় নেই।

তাছাড়া কোভিড ফুসফুসকে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত করে, এইচএমপিভিতে ততটা ক্ষতি হয় না বলে জানান ভাইরোলজিস্ট মাহবুবা জামিল।

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এই বিশেষজ্ঞ জানান শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী বা কঠিন কোনো রোগে আক্রান্তদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র হতে পারে।

কেননা এই মানুষদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত দুর্বল থাকে। সেক্ষেত্রে সবসময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এইচএমপিভি ভাইরাস কী?
চীনের সেন্ট্রার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশান বা সিডিসির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এইচএমপিভি কোভিড-১৯ এর মতোই একটি আরএনএ ভাইরাস। অর্থাৎ এর জীনের গঠন একই। এই ভাইরাসও শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে।

তবে এরা একই পরিবারের ভাইরাস নয়। অর্থাৎ কোভিডের টিকা নেয়া থাকলে বা আগে কখনো কোভিড হলেও আপনার এইচএমপিভির সংক্রমণ হতে পারে। কোভিডের ইমিউনিটি আপনাকে এইচএমপিভি থেকে সুরক্ষা দেবে না।

এই ভাইরাসের ব্যাপারে প্রথম জানা যায় ২০০১ সালে। নেদারল্যান্ডসের গবেষকরা শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষা করার সময় প্রথম এই ভাইরাসের ব্যাপারে জানতে পারেন।

গবেষণার বরাত দিয়ে সিডিসি জানায়, ভাইরাসটি কমপক্ষে ৬০ বছর আগেই ছড়িয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এইচএমপিভিকে ‘শীতজনিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

লক্ষণ কী?
ভাইরাসটির ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’ তিন থেকে পাঁচ দিন। অর্থাৎ কেউ এতে সংক্রমিত হলে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তার দেহে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।

এই ভাইরাসের সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে–-

১) জ্বর
২) সর্দি/নাক থেকে পানি পড়া/নাকবন্ধ ভাব
৩) হাঁচি/কাশি/গলাব্যথা
৪) চামড়ায় র‍্যাশ

এক কথায় সাধারণ ফ্লুয়ের লক্ষণ, যা সাধারণত দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে লক্ষণ তীব্র হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি হতে পারে।

এই ভাইরাস থেকে যে কারো ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রংকাইটিস, ব্রংকিয়োলাইটিস, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

আগেই যেমনটা বলেছিলাম শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী বা জটিল রোগে আক্রান্তরা সবচেয়ে বেশি ভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। তাই তাদের ব্যাপারে সাবধান হওয়া প্রয়োজন।

ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথের ২০২১ সালের একটি নিবন্ধের তথ্য অনুযায়ী, তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে মারা যাওয়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এক শতাংশের মৃত্যুর জন্য দায়ী এইচএমপিভি।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা বা ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ আক্রান্তরা, সেইসাথে সিওপিডি, অ্যাজমা ও পালমোনারি ফাইব্রোসিসের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের রোগীদের মাঝে সংক্রমণের লক্ষণগুলো গুরুতর আকারে দেখা দিতে পারে। এমনকি তাদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই জটিল রোগের আক্রান্তদের এমন লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা করা যাবে না।

কিভাবে এই ভাইরাস ছড়ায়?
সারাবছরই মানুষের এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তবে সাধারণত শীত ও বসন্তকালে এই ভাইরাস মানুষের দেহে বেশি শনাক্ত হয়।

এইচএমপিভি মূলত হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়।

আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’ (সিডিসি) এবং ভারতের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়েছে।

এক কথায়, কেউ যদি এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়, তার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে আরেকজনের মধ্যেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। অনেকটা কোভিডের মতো।

অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেট লেগে থাকা কোনো স্থান- যেমন দরজার হাতল, লিফটের বাটন, চায়ের কাপ ইত্যাদি স্পর্শ করলে তারপর সেই হাত চোখে, নাকে বা মুখে ছোঁয়ালে এইচএমপিভি ছড়াতে পারে।

প্রতিরোধের ব্যবস্থা কী?
করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেয়া হয়েছিল, একই ধরনেরে পদক্ষেপে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন-

১) বাইরে গেলেই মাস্ক পরা।
২) ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া।
৩) হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা।
৪) আক্রান্তদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। জন সমাগমস্থল এড়িয়ে চলা।
৫) হাঁচি কাশি দেয়ার সময় মুখ টিস্যু দিয়ে ঢেকে নেয়া এবং ব্যবহৃত টিস্যুটি সাথে সাথে মুখবন্ধ করা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে হাত সাবান পানিতে ধুয়ে ফেলা।
৬) যদি টিস্যু না থাকে তাহলে কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি দেয়া।
৭) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা।
৮) সর্দিকাশি, জ্বর হলেও অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এই ভাইরাস প্রতিরোধে কয়েকটি টিকা তৈরি করা হলেও এইচএমপিভি প্রতিরোধ এখনও সে ধরনের কোনো টিকা নেই। তাই সতর্ক থাকার ওপরেই জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসা কী?
এই ভাইরাসের জন্য বর্তমানে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ নেই বা বিশেষ কোনো চিকিৎসা পদ্ধতিও নেই।

চিকিৎসকরা সাধারণত লক্ষণ বুঝে তা উপশমের চেষ্টা করে থাকেন। যেমন- জ্বর হলে তাপমাত্রা কমানোর ওষুধ দেন। সর্দি গলাব্যথা বা শ্বাস নিতে সমস্যা হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা বা ওষুধ দেয়া হয়।

চিকিৎসকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীকে বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তবে এই ভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন সাংহাই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং বাংলাদেশের ভাইরোলজিস্টরা।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
সচিবালয়ের সামনে পুলিশ-শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় তদন্ত কমিটি আড়াইহাজারে বিএনপির সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদক রোকন উদ্দিন মোল্লার স্মরণে দোয়া মাহফিল লন্ডন পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া টেকনাফে ৫০ হাজার ইয়াবাসহ আটক ১ কাউখালীতে চাঁদাবাজি রুখতে বিএনপির মাইকিং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত মোংলায় হরিণের গোশতসহ আটক ৬ নৌ-বিমান দুর্ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ায় নিহত ৩ ফেনীতে মিথ্যা মামলার বাদি-সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোকে জনগণ ইতিবাচকভাবে নেয়নি : রিজভী টিউলিপকে প্রশ্ন করায় ব্যারিস্টার আরমানের বাড়িতে অভিযান

সকল