দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউনের অভিশংসন কি অনিবার্য?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৪
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা এত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে যে পত্রিকাগুলো এর সাথে তাল মেলাতে পারছে না। গত মঙ্গলবার রাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের আকস্মিক সামরিক আইন জারির চেষ্টা এতই স্বল্পস্থায়ী ছিল যে খবরটি পত্রিকার প্রথম পাতায়ও আসতে পারেনি।
তিনি যখন ওই ঘোষণা দেন, তখন পত্রিকাগুলো ইতোমধ্যেই মুদ্রণের জন্য চলে গেছে। পরদিনের সংস্করণে তার ওই ঘোষণাকে ক্ষমতা দখলের ব্যর্থ চেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
পরবর্তী এক সপ্তাহ ছিল ঘটনাবহুল। এ সময় প্রেসিডেন্ট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আশা করা হচ্ছিল যে তিনি হয়তো অভিশংসন এড়াতে পারবেন। কিন্ত না, তিনি এখন এক উদ্ধত ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী নেতায় পরিণত হয়েছে। যদিও তার সামনে অনেক বিপদ অপেক্ষা করছে।
মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং দেশত্যাগের বেলায় তার প্রতি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই সপ্তাহের শেষে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের ভোটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই তার প্রতি দলের সমর্থনও কমে এসেছে। সেইসাথে রাস্তায়ও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তার বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলছেন।
এই সপ্তাহের শুরুতে ক্ষণিকের জন্য মনে হয়েছিল যে তিনি তার দলের সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন। তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন। বিপরীতে তাকে ভোটাভুটি করে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে না। কিন্তু সপ্তাহ শেষ হয়ে গেলেও প্রেসিডেন্টের এমন কোনো পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যায়নি। বরং ধীরে ধীরে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে তার পদত্যাগ করার কোনো ইচ্ছেই নেই। উল্টা গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ঘোষণা দেন, ‘আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব।‘
তিনি তার ওই ঘোষণায় মার্শাল ল জারির সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই দেন। তার ওই ভাষণ ছিল অসংলগ্ন ও ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে ভরা। তিনি সেখানে বলেন, উত্তর কোরিয়ার পূর্ববর্তী নির্বাচনে কারচুপি হওয়ায় তিনি সংসদের নিয়ন্ত্রণ অর্জনে ব্যর্থ হন।
তিনি সংসদকে ‘দানব‘ আখ্যা দেন, বিরোধী দলকে ‘বিপজ্জনক‘ বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন যে সামরিক আইন জারি করে তিনি জনগণকে এবং গণতন্ত্র রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন।
গত শনিবার ক্ষমা চাওয়ার পর এটি ছিল প্রেসিডেন্ট ইউনের প্রথম ভাষণ। তিনি বলেন, ‘আমাকে অভিশংসন করা হোক বা তদন্তের মুখোমুখি করা হোক, আমি দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকব।‘
সেখানে তিনি দাবি করেছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা ‘মিথ্যা উস্কানি‘ দিচ্ছে। তিনি এও অস্বীকার করেছেন যে সামরিক আইন জারির আদেশ বিদ্রোহ না।
এদিকে, এই সপ্তাহে পুলিশ তার কার্যালয়ে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য অভিযান চালালেও প্রেসিডেন্ট ইউন সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় আড়ালেই কাটিয়েছেন। সেইসাথে, জনরোষ সামাল দেয়ার জন্য হলেও তার দল ঘোষণা করেছে যে প্রেসিডেন্ট ইউন আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
আইন বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়ে একমত যে সংবিধানে এমন কিছু নেই যা এটি সমর্থন করবে।
এখন তাহলে প্রায় সবার প্রশ্ন হলো, এই মুহূর্তে কে দেশ পরিচালনা করছে?
প্রেসিডেন্ট ইউনের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা বলেছেন, তিনি যদি আবার সামরিক আইন জারির চেষ্টা করেন, তাহলে তারা সেই আদেশ অমান্য করবে।
এই মুহূর্তে দেশে এমন একটি ক্ষমতাশূন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যে দেশটি সারাবছরই উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগর হামলার হুমকির মাঝে থাকে।
সোগাং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক লিম জি-বং বলেন, ‘এই অবস্থার আইনি কোনো বন্দোবস্ত নেই। আমরা একটি বিপজ্জনক ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে রয়েছি।’
বাইরে থেকে যারা দেখছেন, তাদের সবার কাছে এটি স্পষ্ট যে এই ধরনের অস্থিতিশীল ও অদ্ভুত পরিস্থিতি আর বেশি দিন চলতে দেয়া যাবে না। তবে প্রেসিডেন্টের দল পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) এটা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল যে প্রেসিডেন্ট ইউনের অভিশংসন অনিবার্য।
শুরুর দিকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে দলের সবাই তাকে রক্ষা করেছিলেন। কারণ, পিপিপি মনে করেছিল যে প্রেসিডেন্ট ইউনকে যদি ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী নেতা লি জে-মিয়ং প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। কিন্তু দেরিতে হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার পিপিপি নেতা হান ডং-হুন প্রকাশ্যে এসে সকল সংসদ সদস্যকে ইউনের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টকে অবিলম্বে পদ থেকে স্থগিত করা উচিত।’
অভিশংসন প্রস্তাব পাশ করতে ২০০ ভোট প্রয়োজন। বিরোধী দলের হাতে ১৯২টি আসন রয়েছে। অর্থাৎ প্রস্তাব পাশ করার জন্য তাদের শাসক দল থেকে আটজনের ভোট প্রয়োজন।
এমনিতে শাসক দলের সংসদ সদস্যের সংখ্যা ১০৮ জন।
সামরিক শাসন জারির চেষ্টা করার আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট ইউন অজনপ্রিয়। দুর্নীতির অভিযোগ ও বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত সংসদের কারণে কার্যত একপ্রকার অচলাবস্থার মধ্যে ছিলেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা