১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

রাশিয়াকে সমর্থন প্রশ্নে বেইজিংকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে চীনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

-

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি শুক্রবার ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে চীনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে বেইজিংয়ে তার প্রতিপক্ষ ওয়াং ই এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

জুলাই মাসে লেবার প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার দায়িত্ব নেয়ার পর ল্যামি হলেন প্রথম ব্রিটিশ মন্ত্রী যিনি চীন সফর করেছেন।

বেইজিং থেকে বার্তা সংস্থা জানায়, চীনের ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েশিয়াং এবং কমিউনিস্ট পার্টির অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার পর ল্যামি ওয়াংয়ের সাথে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ডাউনিং স্ট্রিটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ল্যামি তার দুই দিনের সফরে সাংহাইয়ের পূর্ব মেগাসিটিতে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন।

তিনি মানবাধিকার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মতো ইস্যুতে বেইজিংকে চাপ দেয়ার সময় একটি প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম রেখা অনুসরণ করতে চাইছেন।

ল্যামি শুক্রবারের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘চীনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া বাস্তবানুগ এবং যুক্তরাজ্য ও বৈশ্বিক স্বার্থের সমর্থনে প্রয়োজনীয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই প্রায়ই এবং অকপটে কথা বলতে হবে।’

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে, ডাউনিং স্ট্রিট লন্ডন ও বেইজিংয়ের ‘উল্লেখযোগ্য পার্থক্য’ রয়েছে স্বীকার করে বলেছে, ‘ব্রিটেন চীনকে যেখানে প্রয়োজন সেখানে চ্যালেঞ্জ করবে।’

এতে আরে উল্লেখ করা হয়, ল্যামি চীনকে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন বন্ধ করার অনুরোধ করবে।

চীন আক্রমণের পর থেকে মস্কোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করেছে কিন্তু একটি নিরপেক্ষ বজায় রেখেছে এবং দেশটি রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে অস্বীকার করেছে।

হংকংয়ে বেইজিংয়ের নিরাপত্তা অভিযান এবং চীনের অশান্ত জিনজিয়াং অঞ্চলসহ বেশ কিছু মানবাধিকার উদ্বেগের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ব্রিটেনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে ভাটা পড়ে। এখন তারা সে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চাইছে।

বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা আশা করে, ল্যামির সফর ‘কৌশলগত পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে এবং সব ক্ষেত্রে সংলাপ ও সহযোগিতা জোরদার করতে সাহায্য করবে।’

বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ল্যামি ১৮ থেকে ১৯ অক্টোবর চীনে সরকারি সফর করবেন।’

বেইজিংয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মাও বলেন, আগস্টে এক ফোনালাপে দুই পক্ষের মধ্যে তাদের নেতৃবৃন্দের দ্বারা উপনীত ঐকমত্য বাস্তবায়নে গভীরভাবে মতবিনিময় হবে।’

মাও বলেন, ‘চীন ও যুক্তরাজ্য উভয়ই জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং প্রধান বিশ্ব অর্থনীতি।’

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘমেয়াদে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়ন উভয় দেশের অভিন্ন স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

মাও সাংবাদিকদের বলেন, বেইজিং কৌশলগত পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি এবং সকল ক্ষেত্রে সংলাপ ও সহযোগিতা জোরদারের আশা করেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘চীন অংশীদার হিসেবে দুই দেশের অবস্থান সমুন্নত করতে, উন্মুক্ততা ও সহযোগিতা বজায় রাখতে...এবং চীন-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালাতে যুক্তরাজ্যের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।’

২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন লন্ডন ও বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্কের ‘স্বর্ণযুগ’-কে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। তখন থেকে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে, মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের চীনের সমালোচনা বেইজিংয়ের কাছ থেকে তীব্র তিরস্কারের প্ররোচণা দিয়েছে।

সাইবার আক্রমণ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপসহ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ নিয়েও উভয়পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয়েছে।

যুক্তরাজ্য হংকংয়ে কয়েক মাস ধরে চলা গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের পর ২০২০ সালে হংকংয়ে বেইজিংয়ের ঢালাওভাবে জাতীয় সুরক্ষা আইন আরোপ করার সমালোচনা করে।

লন্ডন এই পদক্ষেপটিকে হংকংয়ের মিনি-সংবিধানে সুরক্ষিত অধিকার ও স্বাধীনতা ক্ষুণ্নকারী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।

তবে বেইজিং মনে করে, এ আইন হংকংয়ের স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন হওয়ার পর এতে শান্তি ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করেছে।

বেইজিং যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশকে এমন একটি ইস্যুতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে বলেছে যা তারা সম্পূর্ণরূপে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে।

সফরের প্রাক্কালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জেলবন্দী হংকংয়ের ধনকুবের জিমি লাইকে হংকংয়ের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহে লাইয়ের আইনি দল লন্ডনে সাংবাদিকদের বলে যে তারা আশা করে যে ল্যামি তার সফরের সময় জিমি লাইয়ের বিষয়টি ‘সামনে ও কেন্দ্রে’ রাখবেন।

এসব বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বেশ কিছু উদ্বেগের কারণে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘুদের সাথে চীনের আচরণ এবং তিব্বতে মানবাধিকার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাদানুবাদ চলমান রয়েছে।

লন্ডন অভিযোগ করছে বেইজিং জিনজিয়াংয়ে প্রায় এক মিলিয়ন উইঘুর মুসলিমকে আটক রেখেছে।

স্টারমার এ সপ্তাহে তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক মহড়ার পর চীনের কঠোর সমালোচনা করেছে। চীন স্ব-শাসিত গণতান্ত্রিক দ্বীপটিকে তার মূল ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনে এটি দখল করতে শক্তি প্রয়োগের বিষয়টিও নাচক করে না।

স্টারমার বলেন, তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের তৎপরতা শান্তি ও স্থিতিশীলতার অনুকূল নয়। তিনি বেইজিংকে যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ারও আহ্বান জানান।

চীন ও যুক্তরাজ্য একে অপরের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনে থাকে। বেইজিং অভিযোগ করে যে লন্ডন বেইজিংয়ের প্রতি ওয়াশিংটনের বৈরী পথই অনুসরণ করে।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement