লেখালেখি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ভাষাসৈনিক আবদুল গফুর
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২১:৩৫
‘লেখালেখি সাহিত্য পুরস্কার’ ২০২২ পেলেন ভাষা আন্দোলনের কিংবদন্তী ভাষাসৈনিক, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক-গবেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গফুর। মাতৃভাষার জন্য তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ পুরস্কার প্রবর্তন করেছে প্রকাশনা সংস্থা ‘লেখালেখি’।
বুধবার ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখ বেলা সাড়ে ১২টায় তার বাসভবনে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন লেখালেখির কর্ণধার আবুল কাসেম হায়দার ও কবি জাকির আবু জাফর, সচিব লেখালেখিসাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কমিটি।
পুরস্কার হিসেবে তাকে প্রদান করা হয়েছে ক্রেস্ট, সদনপত্র এবং পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার টাকা।
তিনি একজন ভাষা সৈনিক, বাংলা ভাষাকে গবেষণা, সাধনা, শ্রম, মেধা ও লেখা দিয়ে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। আমাদের জন্য আজকের দিনটি আনন্দের উপলক্ষ বয়ে এনেছে। আজ তিনি পুরস্কার পেয়েছেন, তার পুরস্কার পাওয়া না পাওয়ায় আসে যায় না। বরং তাকে পুরস্কার দিয়ে প্রকাশনা সংস্থা ‘লেখালেখি ’ সম্মানিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল থেকে ‘লেখালেখি সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তন হয়েছে। ইতোপূর্বে এ পুরস্কার পেয়েছিলেন কবি আল মাহমুদ, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি আল মুজাহিদী প্রমুখ।
আবদুল গফুর (জন্ম ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯) একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও ভাষা সৈনিক। ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০৫ সালে একুশে পদক প্রদান করে।
আবদুল গফুর ১৯২৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ি জেলার (তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর) পাংশা উপজেলার দাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী হাবিল উদ্দিন মুন্সী ও মাতার নাম শুকুরুন্নেসা খাতুন। ১৯৪৫ সালে স্থানীয় মইজুদ্দিন হাই মাদরাসা থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৪৭ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন। তিনিসহ এ বিভাগে তখন মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী ছিলেন। অন্য দু’জন হলেন নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী ও মমতাজ বেগম।
ভাষা আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে তিনি অংশ নেয়ার ফলে লেখাপড়ায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও ১৯৬২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
আবদুল গফুর ছাত্রাবস্থাতেই ১৯৪৭ সালে পাক্ষিক জিন্দেগীতে সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তমদ্দুন মজলিশের বাংলা মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’ পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি পত্রিকাটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মিল্লাত ও ১৯৫৮ সালে দৈনিক নাজাত পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
এরপর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ইংরেজি দৈনিক পিপল, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দৈনিক দেশ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তখন থেকে পত্রিকাটির ফিচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আবদুল গফুর ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দারুল উলুম (ইসলামিক একাডেমি)-এর সুপারিন্টেন্ডেট হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীকালে এক বছর চট্টগ্রামে জেলা যুব কল্যাণ অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আবু জর গিফারী কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা পরিচালক ছিলেন।
পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিস পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে নির্ধারণের দাবি তোলে। এ সময় সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের সাথে অগ্রণী সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলন আবদুল গফুর। ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর তমদ্দুন মজলিসের বাংলা মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হলে গফুর প্রথমে এর সহ-সম্পাদক ও পরে সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলন ছাড়াও তিনি পাকিস্তান আন্দোলন ও স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
অধ্যাপক আবদুল গফুরের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে - ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ইসলাম, বিপ্লবী উমর, কর্মবীর সোলায়মান, সমাজকল্যাণ পরিক্রমা, কোরআনী সমাজের রূপরেখা, খোদার রাজ্য, ইসলাম কী এ যুগে অচল, ইসলামের জীবনদৃষ্টি, রমজানের সাধনা, ইসলামের রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য, আসমান জমিনের মালিক, শাশ্বত নবী, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলাদেশ আমার স্বাধীনতা, স্বাধীনতার গল্প শোনো, আমার কালের কথা (স্মৃতিচারণমূলক, ২০০০)। প্রেস বিজ্ঞপ্তি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা