ব্রাজিলে চামড়া ছাড়া জুতা উৎপাদনের উদ্যোগ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ মার্চ ২০২৪, ২৩:২০
ব্রাজিলে প্রতি বছর প্রায় ৮০ কোটি জুতা তৈরি করা হয়। সেই সব চামড়ার ট্যানিং প্রক্রিয়ায় প্রচুর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। ফলে উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের রোগব্যাধী এবং পানির দূষণের মতো সমস্যা দেখা যায়।
স্ট্যান্ড ডট আর্থ সংগঠনের গবেষক গ্রেগ হিগস বলেন, ‘বাজারের ইচ্ছা ও বাজারের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে। বাজার পরিবেশ দূষণ চায় না। মানুষ জুতা চায়, হ্যান্ডব্যাগ চায়, কিন্তু আবার অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট ধ্বংসও করতে চায় না।’
বড় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো অ্যামাজন ধ্বংসের জন্য আংশিকভাবে দায়ী। স্ট্যান্ড ডট আর্থ সেটা খুঁজে বের করেছে। তারা পুরো বিশ্বে ১০০ কোম্পানির চামড়ার সরবরাহ বিশ্লেষণ করে।
২০২২ সালে অ্যামাজন অরণ্যে প্রায় ১২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ধ্বংস করা হয়েছে। মূলত গবাদি পশুপালন ও চামড়া উৎপাদন এমন অবস্থার জন্য দায়ী।
গ্রেগ হিগস বলেন, ‘ব্র্যান্ড ও বন নিধনের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরাই আমাদের সাপ্লাই চেইন বা সরবারহ শৃঙ্খল সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাতে উৎসাহ জুগিয়েছে। কারণ ব্র্যান্ডগুলো সরবরাহকারীদের কাছে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর দাবি করতে পারে।’
ব্রাজিলের অন্যতম প্রধান কোম্পানি হিসেবে আরেজো বন নিধনের সাথে নিজেদের জুতার কোনো সংযোগ দেখতে চায় না। কয়েক বছর আগে সেই কোম্পানি আলমে নামের এক ব্র্যান্ড চালু করেছে, যা চামড়ার বিকল্প হিসেবে সুতি ও কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করে।
কিন্তু অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলোর জন্য আরেজোর চামড়ার প্রয়োজন। তবে কোথা থেকে সেই চামড়া আসছে, কোম্পানি সে বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে। আরেজো কোম্পানির কর্মকর্তা সুয়েলেন জোনার বলেন, ‘২০২৬, ২০৩০ সাল পর্যন্ত বড় এক প্রকল্প চলবে। এর আওতায় লেদারের উৎস জানার প্রক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। আরেজোর চামড়া কারখানায় যাবতীয় ব্র্যান্ডগুলোর জন্য যে উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোর সাথে যেন বন নিধনের কোনো সম্পর্ক না থাকে, তা নিশ্চিত করাই এর উদ্দেশ্য।’
বিশ্বের সর্বত্র প্রাণীর চামড়ার বিকল্পের সন্ধান চলছে। ইতোমধ্যেই এক ল্যাবে ব্যাকটিরিয়ার সাহায্যে ‘ভিগান লেদার’ সৃষ্টি করা হয়েছে। মাত্র তিন সপ্তাহে এত পরিমাণ কৃত্রিম চামড়া প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে, যা তিন বছর ধরে গরু পালন করে পাওয়া সম্ভব। আনারসের মতো খাদ্যের তন্তু বিভিন্ন ডিজাইন পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। সেগুলোর উপরিভাগ চামড়ার মতোই দেখায়।
তাছাড়া ছত্রাক দিয়ে তৈরি লেদার এখনই জুতার দোকানে পাওয়া যায়। ছত্রাক মাইসেলিয়াম নামের এক উপাদান সৃষ্টি করে, যা দেখতে চামড়ার মতো হলেও তার জন্য কোনো রাসায়নিকের প্রয়োজন পড়ে না।
রিও গ্রান্দে দো সোল ব্রাজিলের জুতা উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র। জুতা শিল্প প্রায় ৮৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। সেখানেও ভিন্নভাবে জুতা তৈরির প্রথম প্রচেষ্টা চলছে। ‘আর্বান ফ্লাওয়ার্স’ নামের কোম্পানি চামড়া ব্যবহার করতে অস্বীকার করছে। তবে প্রাণীর চামড়া ছাড়াও যে উচ্চমানের জুতা তৈরি করা সম্ভব, সবার আগে কোম্পানিটিকে সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে হয়েছে।
কোম্পানির প্রতিনিধি ফেলিকে ভাইলার বলেন, ‘খুব সুন্দর, তাই না? কারখানা খোলার সময় জুতা শিল্পে আমাদের প্রবেশ বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ এই জুতা শিল্পক্ষেত্রে লেদার ও প্রাণীজ উপাদানের বড় ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা সেই বুদবুদ থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব আইডিয়া সম্বল করে নিজস্ব কোম্পানি গড়ে তুলেছি।’
মানের পাশাপাশি কাচামালের অপচয় এড়ানোও এই উদ্যোগের লক্ষ্য। আর্বান ফ্লাওয়ার্সের ক্রেতারা সচেতনভাবে চামড়ার জুতা না পরার সিদ্ধান্ত নেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা