২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আমাজনে দাবানল, নেপথ্যে প্রেসিডেন্টের কলকাঠি?

আমাজনে দাবানল, নেপথ্যে প্রেসিডেন্টের কলকাঠি? - ছবি : সংগৃহীত

আমাজন জঙ্গলের দাবানল যে প্রাকৃতিক নয়, বরং তা ম্যানমেড, সেই ইঙ্গিত মিলছিল আগেই। এবার স্যাটেলাইটের পাঠানো ছবি দেখে তা অনেকটাই নিশ্চিত হলেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। অন্তত ২৫০০টি জায়গায় পকেট ফায়ার রয়েছে। অর্থাৎ এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।অরণ্য কেটে চাষযোগ্য জমি তৈরির জন্যই এমন দুর্দশার মুখে আমাজনের বৃষ্টিচ্ছায় অরণ্য। চিন্তিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও। জি-৭ সামিট চলাকালীন এপ্রসঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল ‘জরুরি’ আলোচনার প্রস্তাব রেখেছেন। তবে আমাজনের এই দুর্ভোগ এই প্রথমবার নয়, দেড় দশক আগেও একবার হয়েছিল।

২০০৩ সালে এমনই সংকটজনক পরিস্থিতি হয়েছিল আমাজনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় এলাকায়। যার জেরে ব্রাজিলের মাতো গ্রোসো এলাকা ছেয়ে গিয়েছিল প্রবল দূষণ, কালো ধোঁয়ায়। স্যাটেলাইট ছবি থেকে সেবারও দেখা গিয়েছিল, জঙ্গলে মোটা, বড় গাছের গুঁড়ি কেটে,আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে, যা থেকে এমন দাবানল। এমনিতে বছরভর বৃষ্টির কারণে আমাজনের জঙ্গল চিরসবুজ। আর এখানেই প্রশ্ন। এমন সিক্ত অঞ্চল কীভাবে দাবানলের শিকার হয় কীভাবে? পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাজনের আবহাওয়া একটু শুষ্ক থাকে। তাই সহজে আগুন নেভে না। এবার স্যাটেলাইট ছবি দেখে জঙ্গলের অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের কর্মীরা।

দগ্ধ অরণ্যের বিভিন্ন অঞ্চল দেখা গেছে, জঙ্গল সাফ করে মাটির চিত্রই বদলে ফেলা হয়েছে। একেবারে ন্যাড়া হয়ে গেছে জমি। স্যাটেলাইট ছবিতে আরো যা যা দেখে বিজ্ঞানীরা শিহরিত, তা হল জঙ্গলে একেবারে ট্রাক্টর ঢুকিয়ে মাটি চষা হচ্ছে। যার জেরে আলগা হচ্ছে গাছের শিকড়। নিজের বৈচিত্র্য হারাচ্ছে এই চিরসবুজ অরণ্য। এত বড় বড় গাছের শিকড় যেখানে জমির পানি ধরে রেখে মাটিকে পোক্ত রাখে, সেখানে শিকড় আলগা হয়ে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, মাথার উপর ঘিরে থাকা সবুজ ছাতার মতো ঘন গাছের পাতার ফাঁকে দেখা যাচ্ছে, আমাজন অরণ্যের সামগ্রিক ছবিতেই একটা বড়সড় বদল আসছে। এসব দেখে পরিবেশবিজ্ঞানীরা চিন্তার সুরে বলছে, হয়ত আমাদের চোখের সামনেই একদিন এভাবে মরে যাবে পৃথিবীর ফুসফুস। সাফ হয়ে যাবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অরণ্যানী।

এদিকে, আমাজনের এই পরিস্থিতির জন্য আঙুল উঠেছে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের দিকে। তার বেআইনি জমিনীতির জন্যই এই জঙ্গলকে কৃষিকাজের জন্য জমি মাফিয়াদের দল ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ। আবার তিনিই ঘটনার দিন দুয়েক পর নাশকতার অভিযোগ তুলেছেন। এতেই সন্দেহ আরো বেড়েছে। তাহলে কি নিজের দোষ ঢাকতে, পরিস্থিতি অবিলম্বে আয়ত্তে আনার চেষ্টা না করে নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট? এই প্রশ্নও জোরদার হচ্ছে নানা মহলে।


আরো সংবাদ



premium cement