২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে রয়েছে পশ্চিমা স্বার্থ

- ছবি : সংগৃহীত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেছেন, সুদানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির স্বাধীন নীতি অনুসরণ করতেন। তিনি পশ্চিমা ‘অর্থনৈতিক স্বৈরতন্ত্রের’ নির্দেশনা অনুসরণ করতেন না। দেশটিতে সম্প্রতি যে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে তা হয়েছে পশ্চিমা ও কয়েকটি আরব দেশের স্বার্থে। এ দেশগুলো সুদানের প্রাকৃতিক সম্পদ কব্জা করতে চায়। বিশেষজ্ঞরা গত সোমবার আনাদোলু বার্তাসংস্থাকে এ কথা বলেছেন।

রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের বরিস ডলগোভ বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল।

তিনি বলেন, সুদান বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ। অনেক পশ্চিমা দেশে এমন সম্পদ নেই অথবা থাকলেও তারা তাদের ওই সম্পদ খরচ করে ফেলেছে। এসব দেশ সুদানের এ সম্পদ দখলের চেষ্টা করছে। ডলগোভ বলেন, এই একই প্রকল্পের অংশ হিসেবে এক সময়ের আফ্রিকার সব চেয়ে বড় দেশটিকে বিভক্ত করা হয়েছে। যার ফল এখন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইতোমধ্যে দক্ষিণ সুদানের সম্পদ কব্জা করতে শুরু করেছে। এখন সুদানের পালা। বর্তমান সেনাবাহিনী পশ্চিমাপন্থী হওয়ায় শিগগিরই আমরা জানতে পারবো যে, দেশটিতে খনিজ সম্পদ উত্তোলনে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। ডলগোভ বলেন, বশির যদিও একজন ‘বিতর্কিত ব্যক্তি’ ছিলেন তথাপি তিনি চাপ সত্ত্বেও ‘স্বাধীন নীতি’ অনুসরণ করতেন।

তিনি বলেন, পাশ্চাত্য বশিরকে একঘরে করে রেখেছিল। এমনকি আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত তাকে ফেরারি ঘোষণা করেছিল। বহুবার দেশটির ওপর তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছিল ফলে দেশটির অর্থনীতির অবনতি ঘটে। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ওরা এসব কিছুই করেছিল।

অভ্যুত্থানে আমিরাতের পৃষ্ঠপোষকতা
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (থিংক-ট্যাংক) ‘ভয়েস অব আফ্রিকা’এর এনজিন ওজের আনাদোলুকে বলেন, অনেক বিষয়ে বশিরের অবস্থানের কারণে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে সুদান সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন সূচিত করেছে। বশির রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছেন এবং সুদানে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করার অনুমতি দিয়েছেন। এ ছাড়া বশির ওই অঞ্চলে স্বার্থের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় সাউকিনে তুরস্ককে একটি নৌ ঘাঁটি নির্মাণ করতে দিতে সম্মত হয়েছিলেন।

তিনি গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, সাউকিন হচ্ছে একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী, লোহিত সাগরপথের জন্য এটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। এ নৌপথ দিয়েই উপসাগরীয় অঞ্চলে তেল ট্যাংকারগুলো চলাচল করে। এই নৌপথের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সৌদি আরব জিবুতিতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে।

ওজের বলেন, সাউকিনে একটি নৌ ঘাঁটি স্থাপনের একটি কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল তুরস্কের। তুরস্কের জন্য এটি হতো ওই অঞ্চলে তৃতীয় সামরিক ঘাঁটি। এর প্রথমটি দোহাতে, দ্বিতীয়টি মোগাদিসুতে অবস্থিত। মানচিত্রে এই ঘাঁটিগুলোর অবস্থানের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে যে, এগুলো একটি তুর্কি ত্রিভুজ নির্মাণ করেছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তুরস্কের নীতি হচ্ছে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা বিধানে শক্তির ভারসাম্য স্থাপন করা।

ওজের বলেন, তুরস্কের প্রধান লক্ষ্য হলো, বন্ধু ও ভ্রাতৃপ্রতীম দেশগুলোকে রক্ষা করা। কিন্তু এতে বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে সংযুক্তআরব আমিরাত ও সৌদি আরব। আমিরাতের গোয়েন্দা সংস্থা গত দুই বছর ধরে বশিরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু করতে দেশটির বিরোধীদলগুলোকে প্রস্তুত করেছে বলে নিশ্চিত জানা গেছে। মিসর সুদানের সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছে কারণ দেশটির সাথে তাদের ভৌগোলিক বিরোধ রয়েছে।

রাশিয়া ও তুরস্ক সুদানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে স্বর্ণের খনিতে। একুশ শতকের পশ্চিমা অর্থনৈতিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই তাদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। রাশিয়া ও তুরস্কের জন্য আফ্রিকার নিকটতম এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হচ্ছে সুদান। রাশিয়া ও তুরস্কের আফ্রিকায় সহযোগিতা শুরুই হয় সুদান দিয়ে।

ওজার ভবিষ্যদ্বাণী করেন, সুদানের নতুন সরকার ঘনিষ্ঠভাবে পশ্চিমের সাথে জড়িত হবেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে দেশটিতে কৌশলগত অবস্থান হারাতে পারে রাশিয়া ও তুরস্ক। গত বছর মস্কোতে বশিরের সাথে এক বৈঠকে রাশিয়া-সুদান সম্পর্কের ইতিবাচক উন্নতির প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। 

বশির সুদানের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা এবং জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে দারফুর থেকে জাতিসঙ্ঘ-আফ্রিকান ইউনিয়ন মিশনের বাহিনী প্রত্যাহারের বিষয়ে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে পুতিনের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান । বশিরকে পদত্যাগ করাতে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে সাবেক এমপি রায়হান গ্রেফতার পাবনায় পানিতে ডুবে ২ বছরের শিশুর মৃত্যু টেকনাফে বিজিবির অভিযানে আড়াই লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার চট্টগ্রামে আইনজীবী কুপিয়ে হত্যা করল চিন্ময়ের সমর্থকরা তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চট্টগ্রামে ইসকন সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ বিপুল পরিমাণে বিদেশী মুদ্রাসহ শাহ আমানতে যাত্রী আটক রাখাইনে গণহত্যা ও চলমান সহিংসতার বিচারের দাবি রোহিঙ্গাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৪র্থ বর্ষের সমন্বিত ফলাফল প্রকাশ রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির কুলাউড়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি

সকল