এগিয়ে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অভিবাসী কাফেলা
- বিবিসি
- ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ১১:১৯, আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩৮
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাজার হাজার অভিবাসী মধ্য আমেরিকান দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তারা বলছেন, নির্যাতন, দারিদ্র্য আর সহিংসতা থেকে বাঁচতে তারা নিজেদের দেশ গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস বা এল সালভাদোর থেকে পালিয়ে এসেছেন।
পুরো যাত্রাপথে তারা পানিশূন্যতা, অপরাধী চক্রের মতো বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু অনেক অভিবাসী বলছেন, যখন তারা একত্রে অনেক মানুষ মিলে ভ্রমণ করেন, তখন তারা অনেক নিরাপদ বোধ করেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই অভিবাসী কাফেলা সম্পর্কে আর কি জানা যাচ্ছে?
কিভাবে এই কাফেলার শুরু হলো?
গত ১২ অক্টোবর, অপরাধ প্রবণ হন্ডুরাসের শহর সান পেড্রো সুলার ১৬০জন মানুষের একটি দল সেখানকার বাস টার্মিনালে সমবেত হন এবং বিপজ্জনক এই যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করেন।
নিজের দেশের বেকারত্ব আর সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য একমাসের বেশি সময় ধরে তারা এর জন্য পরিকল্পনা করেছেন।
এর আগের বেশিরভাগ অভিবাসী কাফেলাগুলোয় কয়েকশো মানুষ ছিল। কিন্তু সাবেক একজন রাজনীতিবিদ এবারের পরিকল্পনা সম্পর্কে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়ার পর দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
১৩ অক্টোবর যখন ওই ছোট গ্রুপটির যাত্রা শুরু হওয়ার কথা, তখন সেখানে অভিবাসন প্রত্যাশী ১ হাজারের বেশি মানুষ জড়ো হয়েছেন।
এরপর তারা প্রতিবেশী গুয়াতেমালা অতিক্রম করে মেক্সিকোয় পৌঁছান, যে যাত্রাপথে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরো হাজার হাজার মানুষ।
কেন তারা এভাবে একত্রে কাফেলার মতো যাত্রা করছেন?
বেশিরভাগ অভিবাসী বলছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র বা মেক্সিকোয় নতুন জীবন এবং উন্নত সুযোগের আশা করছেন।
অন্যরা বলছেন, নিজ দেশের সহিংসতা থেকে বাঁচার জন্য তারা পালিয়ে এসেছেন এবং নতুন দেশে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় চাইবেন।
যেমন হন্ডুরাসে অপরাধী চক্রের সহিংসতা, মাদক যুদ্ধ এবং দুর্নীতি বড় ধরণের সমস্যা। পুরো অঞ্চলটিতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
‘আমাদের স্বপ্ন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া, কারণ আমরা আমাদের সন্তানদের একটি উন্নত ভবিষ্যৎ দিতে চাই। এখানে (হন্ডুরাসে) আমরা কোন কাজ পাই না’, স্থানীয় একটি সংবাদপত্র এল হেরাল্ডোকে এভাবেই বলছিলেন দুই সন্তানের একজন মা।
যদিও মধ্য আমেরিকান দেশগুলো থেকে অনেক দিন ধরেই অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে যাবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু এভাবে সংগঠিত অভিবাসী স্রোতের ব্যাপারটা একেবারেই নতুন।
অনেক সময় এই অভিবাসীদের মানব পাচারকারী এবং মাদক ব্যবসায়ীরা অপহরণ করে নিজেদের জন্য কাজ করতে বাধ্য করে। তবে এ ধরণের বিশাল গ্রুপকে লক্ষ্যবস্তু করা কঠিন। ফলে তারা অধিক নিরাপত্তা বোধ করেন।
এই স্রোত আসলে কতো বড়?
এটা আসলে সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে যতই উত্তরের দিকে এগোচ্ছে, ততই এর আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ২২ অক্টোবরের পর থেকে এই কাফেলায় অন্তত সাত হাজার মানুষ যোগ দিয়েছে।
তবে গ্রুপটি কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে গেছে, ফলে অভিবাসীদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন।
কিছু অভিবাসী এর মধ্যেই মেক্সিকোর টাপাচুলা শহরে পৌঁছে গেছে, তবে বেশিরভাগই এখনো গুয়াতেমালা-মেক্সিকো সীমান্তে আটকে রয়েছেন।
নতুন করে আরো এক হাজার হন্ডুরাসের অভিবাসীর যাত্রা শুরুর কথা জানা গেছে। অন্যদিকে তিন হাজারের বেশি অভিবাসী আবার হন্ডুরাসে ফিরে গেছে।
একজন অভিবাসী হিসাবে জীবনযাত্রা আসলে কেমন?
এই মানব স্রোতে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে।
উষ্ণ আবহাওয়া মানে তাদের সূর্যের তাপে পোড়া আর পানিশূন্যতার ঝুঁকিতে পড়তে হয়েছে। অনেক অভিবাসী ছাড়া আর কাগজের টুকরো দিয়ে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন।
টানা ছয়দিন ধরে হাঁটার পরে অনেকের অচেতন হয়ে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
অভিবাসীরা সড়কের পাশে বা অস্থায়ী ঘরে ঘুমাচ্ছেন যেখানে পরিষ্কার পানি বা পয়ঃনিষ্কাষণেরও অভাব রয়েছে।
খাবারেরও যোগান স্বল্প। অতিক্রম করার সময় স্থানীয় লোকজন এই কনভয়কে কিছু কিছু খাবার দিচ্ছেন বলে জানা যায়।
গুয়াতেমালা এবং মেক্সিকোর যে সীমান্তে কর্মকর্তারা অভিবাসীদের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন, সেখানে দীর্ঘ সময় তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে অভিবাসীদের সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে।
কোনো কোনো অভিবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছে আর পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে, যাতে অনেকে আহত হয়েছেন।
তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান, তাহলে কি ঘটবে?
কোনো ব্যক্তি যদি নিজ দেশের সহিংসতা থেকে বাঁচার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন, তার আশ্রয়ের আবেদন শোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স গত জুন মাসে বলেছেন, ভীতির কারণে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয়ের আইনের অতীতে অনেক অপব্যবহার হয়েছে। আর তাই নিজ দেশে সহিংসতা আর অপরাধ চক্রের বিষয় আর আশ্রয়ের জন্য কোনো যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে না।
কিন্তু এই নীতি পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে এখন একটি মামলা চলছে, যেখানে একটি সংস্থা অভিযোগ করেছে যে অভিবাসন কর্মকর্তারা অবৈধভাবে শরণার্থী প্রক্রিয়ার বিষয়গুলোয় সময়ক্ষেপণ করছেন।
কেন এই কাফেলা নিয়ে এত বেশি আলোচনা হচ্ছে?
এর আগের ছোটখাটো কাফেলাগুলোর তুলনায় এই অভিবাসী স্রোত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
নিজ দেশ ছেড়ে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে 'অবৈধভাবে' আসতে দেয়ার অভিযোগ তুলে সোমবার তিনি মধ্য আমেরিকান কয়েকটি দেশের সমালোচনা করেছেন।
মি. ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, এসব দেশের জন্য বিদেশী সহায়তা অর্থ কাটছাঁট করা হবে। তবে তিনি পরিষ্কারভাবে বলেননি যে, কত টাকা কাটা হবে অথবা তিনি কিভাবে সেই ব্যবস্থা নেবেন।
প্রেসিডেন্ট পদের প্রচারণার সময় অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করা ছিল মি. ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।
৬ নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে তার রিপাবলিকান পার্টি, যারা প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটদের কাছে হারের মুখোমুখি হতে পারে।
তবে কোনো প্রমাণ তুলে না ধরণেও ডোনাল্ড ট্রাম্প অব্যাহতভাবে অভিযোগ করে যাচ্ছেন যে, এই কাফেলার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।
গত সোমবার তিনি এই সীমান্ত সংকটের জন্য ডেমোক্রেটদের দায়ী করার জন্য নাগরিকদের আহবান জানিয়েছেন।
তিনি টুইট করেছেন যে, এই কাফেলায় অপরাধী আর অজানা মধ্যপ্রাচ্যের লোকজন আছে। কিন্তু যখন সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান যে, এর মানে তিনি কি বোঝাতে চান, তখন তিনি তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি। বরং সাংবাদিকদেরই সেটি তদন্ত করে দেখতে বলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা