ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টার কারাদণ্ড
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:০৬
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক একজন উপদেষ্টাকে ১৪ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন সে দেশের একটি আদালত। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রভাবিত করতে রাশিয়ার সাথে যোগসাজশের অভিযোগে তাকে এই কারাদণ্ড প্রদান করেন। খবর বিবিসির।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির আদালত ১৪ দিনের কারাদণ্ডের পাশাপাশি জর্জকে সাড়ে নয় হাজার ডলার জরিমানা করেন। এ ছাড়া তাকে ২০০ ঘণ্টার বাধ্যতামূলক সমাজসেবাসহ মুক্তির পর ১২ মাসের নজরদারির শাস্তি দেওয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত উপদেষ্টার নাম জর্জ পাপাডোপোলস (৩১)। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া তিনিই প্রথম ব্যক্তি। তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা প্যানেলের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
আদালতে জর্জ স্বীকার করেন, তিনি এ মামলার তদন্তকালে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোকে (এফবিআই) মিথ্যা বলেছিলেন এবং এ জন্য তিনি অনুতপ্ত।
২০১৭-এর জানুয়ারিতে এফবিআইকে ট্রাম্পের উপদেষ্টা বলেন, রাশিয়ার এক নারী ও মাল্টার প্রফেসর জোসেফ মিফসুদের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা দলে যোগদানের আগেই দেখা করেন। পরে প্রমাণ হয়, আসলে তিনি ওই দুজনের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা দলে থাকা অবস্থায় সাক্ষাৎ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে আদালতের বাইরে জর্জের আইনজীবী টমাস ব্রিন বলেন, ‘আমার মক্কেল একজন বোকা লোক, এফবিআইয়ের কাছে তথ্য দেওয়ার সময় অথর্বের মতো কাজ করেছেন।’
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় ‘কোনো যোগসাজশ হয়নি’ বলে জানান। এর আগেও ট্রাম্প বেশ কয়েরকবার একে ‘ভুয়া খবর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
কিছুদিন আগে এ নিয়ে লন্ডনের একটি পানশালায় দেওয়া জর্জের বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিচারেও তার ওই বক্তব্যকে আমলে নেওয়া হয়।
বিবিসি জানায়, প্রফেসর জোসেফ মিফসুদ ট্রাম্পের উপদেষ্টা জর্জকে জানান যে, নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নামে হাজার হাজার ই-মেইলের মাধ্যমে কুৎসা রটানো হচ্ছে এবং তাতে রাশিয়ার সরকারের হাত রয়েছে। পরে জর্জ প্রস্তাব দেন নির্বাচনের আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া উচিৎ ট্রাম্পের। প্রস্তাবটি অন্যরা নাকচ করে দিলেও এতে মাথা নেড়ে সায় দেন ট্রাম্প।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জর্জ পাপাডোপোলস জানান, প্রস্তাব দেওয়ার সময় ট্রাম্প মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু এ বিষয়ে পরে কিছুই ঘটেনি।
আরো পড়ুন: নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ অস্বীকার করে তীব্র সমালোচনার মুখে ট্রাম্প
বিবিসি ও আলজাজিরা, ১৮ জুলাই ২০১৮
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও গোয়েন্দাদের এমন বক্তব্য দৃশ্যত প্রত্যাখ্যান করে নিজ দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। তার সমালোচনায় ডেমোক্র্যাটদের সাথে যোগ দিয়েছেন ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকান সদস্যরাও। সোমবার ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে এক শীর্ষ বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ওই মন্তব্যটি করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, হেলসিংকিতে পুতিনের সাথে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে দীর্ঘ কথা হয়েছে। এই আলাপচারিতায় ২০১৬ সালের নির্বাচনে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার পেছনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কোনো কারণ তিনি দেখতে পাননি। পুতিন বেশ জোরালোভাবে এমন হস্তক্ষেপের খবর নাকচ করে দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে সরাসরি আলোচনার প্রয়োজন ছিল এবং সেটিই করা হয়েছে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি তার নিজের গোয়েন্দা সংস্থা না রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে বিশ্বাস করবেন। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া এটি করেনি বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এটি কেন হবে তার কোনো কারণ দেখি না আমি।’
তার এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্যের পরিপন্থী।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সমর্থনের পাল্লা হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে নেয়ার একটি উদ্যোগের পেছনে রাশিয়ার ভূমিকা ছিল।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো সাইবার হামলা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে এ কাজ করেছিল তারা। ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের শীর্ষ রিপাবলিকান সদস্য হাউজ স্পিকার পল রায়ান বলেছেন, ‘রাশিয়া আমাদের মিত্র নয়, ট্রাম্পকে এটি বিবেচনায় রাখতে হবে।’
রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন ট্রাম্পের এমন মন্তব্যকে ‘অশোভন কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন। পরে নিজের অবস্থান থেকে সরে এক টুইটে ট্রাম্প তার নিজের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি তার ‘গভীর আস্থা আছে’ বলে দাবি করেছেন।
নিজ দেশে তার এই টুইটের কোনো প্রভাব পড়েছে কি না তা পরিষ্কার নয়। কঠোর ভাষায় দেয়া এক বিবৃতিতে স্পিকার রায়ান বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে কোনো নৈতিক সমতা নেই, দেশটি আমাদের মৌলিক মূল্যবোধ ও আদর্শের প্রতি শত্রুভাবাপন্নই রয়ে গেছে।’
২০১৬-এর নির্বাচনে মস্কো প্রভাব বিস্তার করেছিল, এতে ‘কোনো প্রশ্ন’ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের আর্মড সার্ভিস কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সিনেটর ম্যাককেইন বলেছেন, ‘এটি একটি অশোভন কাজ’। নিজের বিবৃতিতে ম্যাককেইন বলেছেন, ‘কোনো স্বেচ্ছাচারী শাসকের সামনে নিজেকে এতটা শোচনীয়ভাবে নিচে নামায়নি আগের কোনো প্রেসিডেন্ট।’
বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে
সিরিয়া থেকে শুরু করে পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়টিসহ কোরিয়া উপদ্বীপ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে। আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে ১২ রুশ অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টিও।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে ট্রাম্প কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন পুতিন। তবে ওই নির্বাচনে রাশিয়ার হাত থাকার কথা পুতিন জোরালোভাবেই নাকচ করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। বৈঠকে দুই নেতার মধ্যেই ঐক্য দেখা গেছে।
মস্কো এবং ওয়াশিংটন উভয়ে মিলেই নির্বাচনী প্রচারে রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হ্যাকিংয়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পারেন এমন আভাসও দিয়েছেন তারা। পুতিন বলেছেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের যুগ শেষ হয়েছে। এখন আমেরিকা এবং রাশিয়ার একসাথে মিলে সব সমস্যা সমাধান করা উচিত।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘তথ্য হাতানোয়’ অভিযুক্ত ১২ রুশের বিষয়ে পুতিন বলেন তাদেরকে হস্তান্তরের বিষয়টি দেখবেন তিনি। এ বিষয়ে পারস্পরিক আইনি সহায়তাবিষয়ক ১৯৯৯ সালের একটি চুক্তি অনুযায়ী কাজ করার পরামর্শ দিয়ে পুতিন বলেন, এর আওতায় মার্কিন কর্মকর্তারা রুশ কর্তৃপক্ষকে ১২ অভিযুক্তকে জেরা করার অনুরোধ জানাতে পারে। সেক্ষেত্রে জেরার সময় মার্কিন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার অনুমতি দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রচার শিবিরের কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের ঘটনায় ১২ রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগ অভিযোগ আনার পর ট্রাম্পের সাথে পুতিনের বৈঠক হলো। অনেক মার্কিন রাজনীতিবিদই ওই হ্যাকিংয়ের ঘটনার কারণে পুতিনের সাথে ট্রাম্পের বৈঠকে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
কিন্তু ট্রাম্প রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার জন্য তার পূর্বসুরিদের বোকামিকে দায়ী করার পাশাপাশি বর্তমানে নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ এবং হ্যাকিংয়ের অভিযোগের বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক উইচ-হান্ট’ আখ্যা দিয়ে ওই আপত্তি অগ্রাহ্য করে বৈঠক করলেন।
বৈঠকে পারমাণবিক অস্ত্র প্রশ্নে দুই নেতা ভারসাম্য বজায় রাখা নিয়ে আলোচনা শুরু করতে একমত হন। পুতিন বলেন, ‘বৃহত্তর পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ দায়িত্ব আছে। আর তাই আমি মনে করি এটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এবং এটি নিয়ে সংলাপ আয়োজনের জন্য আমরা আলোচনা করেছি।’ তা ছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধেও রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার এ প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন তিনি।
ক্রিমিয়া উপদ্বীপ প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘এ বিষয়টিকে ট্রাম্প বলেন অবৈধ। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। ফলে এ বিষয়ে আর প্রশ্নের কোনো অবকাশ নেই।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা