আশকোনা থেকে বাড়ি ফিরলেন চীনফেরত বাংলাদেশীরা
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশীদের কোয়ারেন্টাইন (পৃথক করে রাখা) মেয়াদ শেষ হয়েছে। রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে গত শনিবার বিকেল ৫টা থেকে তাদের সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার পর রাতে প্রত্যেককে স্বাস্থ্য সনদ ও সংবর্ধনা দেয়া হয়। এই প্রক্রিয়া শেষে অনেকে রাতেই বাড়ি ফিরেছেন। এর আগে গত ১ ফেব্র“য়ারি তাদের ফিরিয়ে এনে ওই হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন সময়কাল গত শনিবার শেষ হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা: এ এস এম আলমগীর বলেন, আশকোনা হজ ক্যাম্পে অবস্থানকারী ৩০১ জন এবং ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১১ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে প্রত্যেককে সংবর্ধনা দেয়া হয়। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে দেশে ফেরার পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার কারণে তাদের মানসিক অবস্থা যাতে স্বাভাবিক থাকে সে জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ এ আয়োজন করেছে। চিকিৎসক, নার্সসহ কোয়ারেন্টাইনে দায়িত্বরত এবং উহানফেরতরা একসাথে রাতের খাবার খেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের ভেতর যে ভীতি ছিল, তা দূর হয়েছে। এ জন্য তাদের কাউন্সেলিং করাও হয়। বাড়ি ফেরার পর কোনো ধরনের জটিলতা অনুভব করলে তাদের আইইডিসিআরের সাথে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে।
কোয়ারেন্টাইন থাকা ব্যক্তিদের বাড়ি নিয়ে যেতে স্বজনরা আশকোনা হজক্যাম্পের সামনে বিকেল থেকেই ভিড় করেন। কয়েকজন স্বজন জানান, বিকেল থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকা কারো জ্বর কিংবা বড় ধরনের অসুস্থতার খবর তারা পাননি।
এর আগে গত শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিষ্ঠানটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উহানফেরত যাত্রীদের ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রাখা সব পক্ষের পেশাগত নৈতিক দায়িত্ব। এ কারণে কোয়ারেন্টাইন সমাপনী কার্যক্রম সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়নি।
উহানফেরতদের নাম-ঠিকানা ও ছবি প্রকাশ না করার আহ্বান জানান আইইডিসিআর পরিচালক। তিনি বলেন, উহানফেরতদের বিষয়ে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। করোনা সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, নাম, পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করলে তারা সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হতে পারে। এ ছাড়া হজক্যাম্পে থাকা ৩১২ জনের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। সামাজিক হেনস্তার হাত থেকে রক্ষা করতে তাদের সব কিছু গোপনীয়তার সাথে করা হচ্ছে।
পরিচালক আরো বলেন, হজক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে থাকা সবাই ভালো আছেন। কারো শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব গাইডলাইন অনুসরণ করে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর তারা সবাই সুস্থ আছেন। এ কারণে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
চীন-সিঙ্গাপুর থেকে ফিরলেই সন্দেহ নয় : আইইডিসিআর
চীন ও সিঙ্গাপুরফেরত সবাইকে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হিসেবে সন্দেহ না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। গত রোববার আইইডিসিআর কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চীনের সব প্রদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটেনি। যেসব অঞ্চলে মহামারী আকার ধারণ করেছে, চীন সরকারই সেগুলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। সিঙ্গাপুরও একই কাজ করছে। সুতরাং এই দুই দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ঢালাওভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহ করা সমীচীন নয়।
সরকারিভাবে দেশের সর্বত্র সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ডা: ফ্লোরা বলেন, চীন ও সিঙ্গাপুরফেরত যাত্রীদের মধ্যে যারা জ্বর ও হাঁচি-কাশিতে ভুগছেন, তাদের আইসোলেশন করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সাথে নমুনাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। অন্যদের বাড়িতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই দুই দেশের বাইরেও বিদেশফেরত সব যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে।