২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ঢাকাবাসী

-

নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। যদিও এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণকে সচেতন করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। মশার উপদ্রব থেকে রা করতে নাগরিকদের সচেতন করতে চায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ ল্েয সম্প্রতি মহাখালী ও উত্তরাতে সচেতনতামূলক পরামর্শ সভা করেছে সংস্থাটি।
গত মঙ্গলবার উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডিএনসিসির অঞ্চল-১ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত একটি সচেতনতামূলক পরামর্শ সভা করে তারা। গত বৃহস্পতিবার মহাখালী সচেতনতামূলক পরামর্শ সভা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
উত্তরার সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যের বরাত দিয়ে বলা হয়, দেশে গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত করার রেকর্ড থাকলেও আগস্টে ছিল সর্বোচ্চ। এ বছরও একই সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এ কারণে এ বছর আগে থেকেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম জানানো হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয় চিকিৎসকদের প্রশিণ ও এডিস মশার ওপর গবেষণা।
সভায় বলা হয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য গত বছরের মতো এবারো অবহিতকরণ সভা, সচেতনতামূলক পদযাত্রা ও পথসভা, বাউলগান, পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি, সচেতনতামূলক বার্তা, টেলিভিশনে টিভিসি প্রচার কার্যক্রম করা হবে। মশক নিধন কার্যক্রমে ডিএনসিসির ২০০টি ফগার মেশিন, ২৩৮ পালস ফগমেশিন, ১৫০ হার্টসন হস্তচালিত মেশিন, ৩৪০ প্লাস্টিক হস্তচালিত মেশিন, ২ ভেহিক্যাল মাউন্টিং ফগার মেশিন, ১০ মোটরসাইকেল ফগার ও হস্তচালিত মেশিন ও ২০টি মিস্ট ব্লোয়ার বা পাওয়ার স্প্রে মেশিন কেনা হয়েছে। যেগুলো মশক নিধনে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় এক হাজার বিঘা জলাশয়-ডোবা-পুকুরের জলজ আগাছা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করেছে ডিএনসিসি। এ কাজ এখনো চলছে বলে জানায় সংস্থাটি।
অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান বলেন, গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর এডিস মশার প্রজননস্থল, ঘনত্ব ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের বয়সের তথ্য-উপাত্ত দেখা হচ্ছে। এসব তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে বছরের শুরু থেকেই পুরোদমে কাজে নেমেছে সিটি করপোরেশন।
বর্তমানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, মহাখালী, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
মিরপুরের বাসিন্দা সাঈদা খানম বলেন, ‘আমার বাসা ছয়তলা, এত ওপরেও মশার যন্ত্রণা থেকে নিস্তার নেই। সিটি করপোরেশন কাজ করে বললেও সে কাজের ফল আমরা পাচ্ছি না।’
গুলশান এলাকার বাসিন্দা নাইমুদ্দিন ওমর বলেন, ‘গুলশানে একটি অভিজাত এলাকা। এই এলাকায় সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কাজ করলেও মশার উপদ্রব ঠেকাতে সে কাজ যথেষ্ট নয়। গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকা লেক দিয়ে ঘেরা। লেকগুলো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এতে মশার ওষুধ দিলেও তা কাজ করে না। গুলশান ছাড়াও মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রকল্প এলাকায়ও আছে মশার উপদ্রব।
উত্তরায় বিভিন্ন সেক্টরে মশার উপদ্রব অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন কয়েকজন বাসিন্দা। ১১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এই এলাকার ৯ ও ১১এর মাঝখানে উত্তরা লেক। লেকটিতে এলাকার বর্জ্য এসে পড়ায় সব সময় আবর্জনায় পূর্ণ থাকে। এটি মশার প্রজননস্থল হয়ে পড়েছে। ’
মশার উপদ্রবের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: মোমিনুর রহমান বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরে ডিএনসিসি মশকনিধনে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছে। এর ফলে মশার উপদ্রব কমেছিল। তবে গত দুই সপ্তাহে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন চলার সময় কিছু কাজে ব্যাঘাত হওয়ায় মশা কিছুটা বেড়েছে। তবে আবার কাজ শুরু করেছে ডিএনসিসি। সংস্থার ১০টি অঞ্চলে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক সভা করা হবে। ইতোমধ্যে দু’টি সভা করা হয়েছে। এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সব কটি অঞ্চলে এ কাজ শেষ হবে।
সভায় এডিস মশার উৎপত্তিস্থল, বংশবিস্তারসহ ডেঙ্গুর তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন সিডিসির সার্ভিল্যান্স চিকিৎসা কর্মকর্তা খাদিজা সুলতানা। এতে বলা হয়, ১২৬টি দেশে ইতোমধ্যে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ২৫০ কোটির বেশি মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে আছে। এতে আরও বলা হয়, গত আগস্টে দেশে ডেঙ্গু রোগী ছিল প্রায় ৫৩ হাজার; যা অতীতের সব সময়ের চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ বছরও একই সময়ে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
সভায় এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির কার্যক্রম সম্পর্কে জানান সংস্থার উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: গোলাম মোস্তফা সারওয়ার। ডিএনসিসি বলছে, গত বছর ডিএনসিসির ‘চিরুনি অভিযান’ পরিচালনার ফলে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় এক হাজার বিঘা জলাশয়, ডোবা, পুকুরের জলজ আগাছা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। এ কাজ এখনো চলছে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো: মোমিনুর রহমান বলেন, আমরা গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাজ করব। কোথায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে, ঘনত্ব বেশি, কোন বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি এ তথ্যগুলো এখন আমরা জানি। এসব তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে বছরের শুরু থেকে কাজ করলে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচা যাবে।
ছবি : আর্কাইভ


আরো সংবাদ



premium cement