২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শুরু হচ্ছে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ

-

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল এর মধ্যে নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। বাকি টাকা আসবে জাইকার তহবিল থেকে। ২০২৩ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে সেপ্টেম্বর মাসে। এ প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। নির্মাণকাজে অর্থায়ন করবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। যদিও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করে ২০২১ সালের এপ্রিলে তা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হবে ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার জমির ওপর। নতুন এ টার্মিনাল ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ করা হবে। স্থানান্তর ও সম্প্রসারণ করা হবে কার্গো ভিলেজ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স, হ্যাঙ্গার ও পদ্মা ওয়েল ডিপো।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনালের নকশায় রয়েছে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজ, যদিও প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হবে ১২টি। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী বাকি ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ ধাপে ধাপে নির্মাণ করা হবে। যাত্রীদের তৃতীয় টার্মিনালে চেক ইন বেল্ট থাকবে ১৩টি। আগত যাত্রীদের চাপ সামলাতে ও যানজট এড়াতে বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়কেও আসবে পরিবর্তন।
নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। ভিভিআইপি কমপ্লেক্স ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটার। পার্কিং অ্যাপ্রোন হবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটার।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম মাকসুদুল ইসলাম বলেন, বড় প্রকল্প হওয়ায় টেন্ডার ঘোষণা, টেন্ডার আবেদন সংগ্রহ, দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজে সময় বেশি লাগছে। তবে এ বছর সেপ্টেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুব আলী বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে এটি হবে এ অঞ্চলের সেরা বিমানবন্দর। তার ভাষায়, আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল অত্যাধুনিকভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যেভাবে আকাশে শান্তির নীড়, আমাদের নতুন টার্মিনালও হবে ভূমিতে শান্তির পরশ। আগামী ৪৮ মাসের মধ্যে এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রধান টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে তিন নম্বর টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে, যার আনুমানিক নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। টার্মিনালটি নির্মাণে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। বাকি টাকা আসবে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাÑ জাইকার তহবিল থেকে। নতুন এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। এর আগে ২০১৫ সালে বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ ও সম্প্রসারণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টারপ্লান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। ২০১৭ সালের ১১ জুন এ প্রকল্পের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিল ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এটির নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে সিভিল এভিয়েশন।
বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ। প্রথম ধাপে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু হবে। উড়োজাহাজ রাখার জন্য ৩৬টি পার্কিং থাকবে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার থাকবে।
এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ থাকবে ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন কাউন্টারসহ ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেক ইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে। এর বাইরে টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালের সাথে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সাথে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ ব্যবস্থা থাকবে। এতে থাকবে আন্তর্জাতিকমানের অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের প্রথম ধাপের সাথে বর্তমান টার্মিনাল ভবনগুলোর আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে না। তবে প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে কানেকটিং করিডোরের মাধ্যমে পুরনো টার্মিনাল ভবনগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।
অত্যাধুনিক ও বৈচিত্র্যময় নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরিতে দক্ষ তিনটি প্রতিষ্ঠানের হাতেই নির্মিত হবে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। এর মধ্যে রয়েছে স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং করপোরেশন, মিটসুবিসি করপোরেশন ও ফুজিটা করপোরেশন। অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর বছরে প্রায় দুই কোটি যাত্রী এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ-উল আহসান জানিয়েছেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেহারা পাল্টাতে নতুন এ টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অত্যাধুনিক নির্মাণকৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে থার্ড টার্মিনালের জন্য আকর্ষণীয় পোর্টফোলিও তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। স্যামসাং ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি প্রকৌশল ও নির্মাণ সংস্থা হিসেবে বিভিন্ন খাতে নিজেদের শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করেছে। উঁচু ভবন থেকে বিমানবন্দর, চিকিৎসা সুবিধা, গতানুগতিক ধারার বাইরে নতুন ভবন নির্মাণ এবং অত্যাধুনিক উৎপাদন সুবিধাসম্পন্ন স্থাপনা নির্মাণ করতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানটি।
বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১ সুউচ্চ ভবন, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল নির্মাণ, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক নির্মাণ করেছে স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং করপোরেশন।


আরো সংবাদ



premium cement