বায়ুদূষণে আবারো শীর্ষে ঢাকা
- ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
চলতি শীত মৌসুমের শুরুতেই রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য মতে, বায়ুদূষণে ভারতের দিল্লিকে হটিয়ে এ বছর শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসে ঢাকা। এরপর আদালত থেকে নির্দেশনা এলে নড়েচড়ে বসে পরিবেশ অধিদফতর। মাঝে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বায়ুদূষণের ভয়াবহতায় ঢাকা গত রোববার আবারো সারা বিশ্বে ১ নম্বরে উঠে এসেছে।
আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর আশপাশের ইটভাটা ও নগরে চলমান বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে অভিযান চালানো হয়। যদিও পরিবেশ অধিদফতর বলছে, জনবল সঙ্কটের কারণে অভিযানের কলেবর বাড়ানো যাচ্ছে না। মাত্র দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে পাঁচ জেলায় ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদফতরের সূত্রের দাবি, ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী ইটভাটা। আদালতের নির্দেশনার পর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীর আশপাশের ৭৪টি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে দুই কোটি ৬৩ লাখ টাকা। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য বলছে, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ইটভাটার পরই রয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রাতে বর্জ্য পোড়ানো ও যানবাহনের ধোঁয়া। অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দাবি, তাদের কঠোর অবস্থানের কারণে ঢাকার বায়ুদূষণে কিছুটা উন্নতি ঘটছে। গত ২৫ নভেম্বর আদালত থেকে ঢাকার আশপাশে পাঁচটি জেলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার আদেশ পাওয়ার পর ২৭ নভেম্বর থেকে মাঠে নামে পরিবেশ অধিদফতর। অভিযান পরিচালনার পর থেকে বায়ুদূষণের মাত্রা কমে আসে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় এয়ার ভিজ্যুয়ালের তালিকায় ২০-এর মধ্যে ছিল না ঢাকা। তবে গত রোববার সকালে ফের বায়ুদূষণে আবারো ১ নম্বর অবস্থানে উঠে আসে রাজধানী। বিকেলের দিকে অবশ্য চতুর্থ স্থানে নেমে যায়।
দুই সপ্তাহ কিছুটা ভালো থাকার পর বায়ুদূষণে ঢাকা হঠাৎ করে ১ নম্বর অবস্থানে উঠে আসার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে প্রথম দিকে সরকারি সংস্থাগুলো ব্যাপক সক্রিয় ছিল। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানেই কর্মকর্তারা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। অবশ্য রাতের তামপাত্রা কমে যাওয়া ও বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তনও বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ।
বাপার যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় গণনা করে দেখা যায়, প্রতি মিনিটে ১৬০টি যানবাহন চলাচল করছে। সেখানে প্রতি ঘনমিটারে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২.৫ পাওয়া গেছে ১২০ মাইক্রোগ্রাম। দুপুরে একই স্থানে প্রতি মিনিটে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে ৩৫টি। আর ওই সময় প্রতি ঘনমিটারে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২.৫ পাওয়া গেছে ৪০ থেকে ৪৫ মাইক্রোগ্রাম। এতেই প্রমাণিত হয় যে ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ যানবাহন। পক্ষান্তরে আশপাশ এলাকার ইটভাটার দূষণ ঢাকার মধ্যে আসার আশঙ্কা কম। তার চেয়েও বড় সমস্যা হলো যানবাহন থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া ও রাতে বর্জ্য পোড়ানো। বায়ুর মান সূচক অবনতিতে বড় ভূমিকা রাখা এ দু’টি বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর কোনো অভিযান পরিচালনা করছে না।’
পরিবেশ অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট শাখার পরিচালক রুবিনা ফেরদৌসী জানিয়েছেন, গত ২৭ নভেম্বর থেকে আজ ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ৩০টি অভিযান পরিচালনা করে মোট ৭৪টি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছি। এত কম জনবল দিয়ে বিশাল কাজ করা অসম্ভব। তার পরও বায়ুদূষণ রোধে চলমান অভিযান ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আর আমরা ঢাকায় যেসব যানবাহনে কালো ধোঁয়া দেখি সেগুলোর তালিকা করে বিআরটিএতে পাঠিয়ে দিই।
পরিবেশ অধিদফতরের অভিযানের পর থেকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে নিয়মিত পানি ছিটাতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি যানবাহন ও আবর্জনা পোড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হলে বায়ুদূষণের মাত্রা আরো কমে আসবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।